ঢাকা ১৬ই জানুয়ারি, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ | ২রা মাঘ, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৭:০৩ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৬, ২০২০
এনামুল আলম, কুলাউড়া
এক অসম প্রেমেরে কাহিনী রচনা করল কুলাউড়ার কিশোর-কিশোরী। ছেলে হিন্দু আর মেয়ে মুসলিম। তাতে কী? প্রেম মানে না কোনো বাধা সেই শর্তে দুইজন দুই ধর্মের হওয়া সত্বেও তাদের মাঝে গড়ে ওঠে এক অসম প্রেম। বয়সের দিক থেকে দুজনই অপ্রাপ্ত বয়স্ক। তবুও, কী এক অজানা আবেগে তারা একে অন্যের হতে মরিয়া হয়ে ওঠে। তাদের এই প্রেম মেনে নেয়নি কোনো পরিবার। দু’জনার মাঝে মিল হওয়ার কোনো সম্ভাবনাও দেখেনি তারা। তবে কী তাদের প্রেম এখানেই ধ্বংস হয়ে যাবে? মেনে নিতে পারেনি শিপন মালাকার(১৭)। ১৩ বছর বয়সি কিশোরী এনি আক্তারকে নিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় ঘর ছেড়ে পাহাড়ি সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতে পাড়ি জমানোর সিদ্ধান্ত নেয় শিপন। কিন্ত গভীর রাতে জঙ্গলেই ঘটে বিপত্তি। শিপন নিজের আত্মত্যাগের মাধ্যমে চির স্মরণিয় করে রাখে তার অসম প্রেমকে। আর শিপনের নিথর দেহ পাহারায় ভোরের আলো ফোঁটায় তার কিশোরী প্রেমিকা এনি।
ঘটনাটি মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়নের ভারত সীমান্তবর্তী এওলাছড়া পানপুঞ্জির গহীন জঙ্গলের।
শুক্রবার দেশ ত্যাগের চিন্তা মাথায় নিয়ে দুজনেই ঘর ছাড়ে। মাঝ রাতে পাহাড় থেকে পা ছিটকে পড়ে যায় এনি। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে খোঁজে পায়নি শিপন। পরে নো ম্যান্সল্যান্ডে পরনের গেঞ্জি দিয়ে গাছের ডালে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে শিপন।
শনিবার দুপুরে শিপনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শিপন স্থানীয় পৃথিমপাশা ইউনিয়নের গণকিয়া গ্রামের সিন্ধু মালাকারের ছেলে। বিষয়টি নিয়ে কুলাউড়া জুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। রচনা হয় নতুন এক অসম প্রেম কাহিনীর।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, পৃথিমপাশা ইউনিয়নের সিন্দু মালাকারের ছেলে সিএনজি চালক শিপন মালাকার। আর তার প্রেমিকা এনি আক্তার(১৩) একই ইউনিয়নের একটি স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। শুক্রবার বিকেলে শিপন প্রেমিকাকে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। সন্ধ্যার দিকে তারা দুজনে ভারতে পালানোর উদ্দেশ্যে সীমান্তবর্তী এওলাছড়া পুঞ্জির গহীনে চলে যায়। সেখানে তারা অনেক সময় অবস্থান করে।
পরের ঘটনার বর্ণনা দেয় এনি। সে বলে, ‘শুক্রবার বিকেলে শিপন আমাকে বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। এরপর রাতে এওলাছড়া পানপুঞ্জির গহীন জঙ্গলে আমরা অবস্থান করি। একপর্যায়ে রাত প্রায় ২টায় শিপনের কাছ থেকে পাহাড়ের নিচে আমি ছিটকে পড়ে যাই। তখন থেকে প্রায় তিন ঘণ্টা আমি অজ্ঞান ছিলাম। ভোরে শিপনকে অনেক খোঁজাখুঁজি করি। সকালে তার পরনের গেঞ্জি দিয়ে গাছের ডালে ফাঁস লাগা অবস্থায় দেখতে পাই। এসময় ঘটনাস্থলে নিজে লাশ পাহারা দেই। আমাদের প্রেমের সম্পর্ক দুই বছরের।’
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান পৃথিমপাশা ইউপি চেয়ারম্যান নবাব আলী বাকর খান, কর্মধা ইউপি চেয়ারম্যান এমএ রহমান আতিক, স্থানীয় ইউপি সদস্য সিলভেস্টার পাঠান, হাজী মাকসুদ আলী, আব্দুল মনাফ প্রমুখ।
কুলাউড়া থানার এসআই মহসীন তালুকদার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করার সময় লাশের পাশে পাহারারত অবস্থায় এনি আক্তার নামের এক কিশোরীকে পাওয়া যায়।
কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ বিনয় ভূষণ রায় বলেন, সুরতহালে ওই কিশোরের শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। কিশোরী এনিকে তার মা বাবার জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়।
সম্পাদক ও প্রকাশক : জে.এ কাজল খান
Design and developed by syltech