ঢাকা ২২শে জানুয়ারি, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই মাঘ, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২:২২ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২, ২০২০
খলিলুর রহমান
সিলেট নগরের যেখানে-সেখানে বসানো হয়েছে অবৈধ স্ট্যান্ড। চলছে পুলিশ ও প্রভাবশালীদের নীরব চাঁদাবাজি। নগরের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত কোর্ট পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায়, প্রশস্ত সড়কের অর্ধেকটাই দখল করে আছে অটোরিকশা, টেম্পো ও হিউম্যান হলার (লেগুনা)। সিরিয়াল অনুযায়ী পাঁচ মিনিট পর পর যাত্রী নিয়ে সুদূর গন্তব্য সুনামগঞ্জ ও তামাবিল মহাসড়কের দিকে ছুটছে স্বল্প পাল্লার ছোট যানগুলো। রাস্তা দখল করে গাড়ি রাখা ও যাত্রী ওঠানামার কারণে সারাদিনই এ এলাকায় লেগে থাকে যানজট ও জনজট।
শুধু কোর্ট পয়েন্টই নয়, নগরের ব্যস্ত সব পয়েন্টের অবস্থা একই। নগরে বৈধ স্ট্যান্ড না থাকায় চালক ও চাঁদাবাজরা যেখানে পারছেন, সেখানেই গড়ে তুলছেন অবৈধ স্ট্যান্ড। যানবাহনগুলো সিলেট মেট্রো এলাকায় চলাচলের অনুমতি থাকলেও পুরো সিলেটে বিভাগের যানবাহন চলে নগরের ভেতর থেকে। এতে নগরবাসীকে পোহাতে হচ্ছে অসহনীয় দুর্ভোগ।
এদিকে যানজট নিরসনে বাসাবাড়ি বিপনীবিতান, অফিস আদালত, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা এমনকি মসজিদ মাদ্রসা ও ধর্মীয় উপাসনালয় ভেঙে প্রশস্ত করা হচ্ছে সিলেট নগরের প্রতিটি সড়ক।
সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক)-এর উদ্যোগে চলছে নগরের সড়ক বর্ধিত করার কাজ। তবে সড়ক প্রস্ত করায়ও সুফল পাচ্ছেন না নগরবাসী। বড় সড়কগুলোই দিন দিন হয়ে উঠছে মাইক্রোবাস, লেগুনা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার অবৈধ স্ট্যান্ড। অবৈধ স্ট্যান্ডের কারণে নগরের বিভিন্ন সড়কে যানজট লেগে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। প্রশাসন থেকেও এগুলো সরানোর ব্যাপারে নেই কঠোর নির্দেশনা।
নগরের বেশ কয়েকটি সিএনজিচালিত অটোরিকশার স্ট্যান্ড ঘুরে দেখা গেছে, যেখানে ২০ বা ৩০টি গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা রয়েছে, সেখানে শতাধিক গাড়ি থাকছে। এমনকি অটোরিকশা নির্ধারিত সীমা ছেড়ে রাস্তায় গিয়ে ভিড় করছে।
নগরের ব্যস্ত এলাকাগুলোর একটি ধোপাদীঘিরপাড় শিশুপার্ক এলাকা। এই এলাকায় শুধু অটোরিকশার স্ট্যান্ডই নয়, আছে মাইক্রোবাস ও লেগুনা স্ট্যান্ড। ডিভাইড করা সড়কের একসাইড দখল করে রেখেছে অবৈধ স্ট্যান্ড। বাকি অর্ধেক দিয়ে চলাচল করে যানবাহন। সর্বক্ষণ যাত্রী ওঠানামার কারণে লেগেই থাকে যানজট ও জনজট।
নগরের ভেতর চলাচলকারী অটোরিকশা ও সার্ভিস কার-মাইক্রোবাস রাখার জন্য চৌহাট্টা, কোর্ট পয়েন্ট ও ধোপাদীঘিরপাড়ে নির্দিষ্ট সংখ্যক গাড়ি রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে। কিন্তু চালকরা তা না মেনে যত্রতত্র গাড়ি পার্ক করে রাস্তা দখল করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছেন। নগরের আম্বরখানা, কোর্ট পয়েন্ট, বন্দরবাজার, চৌহাট্টা, রিকাবীবাজার, নাইওরপুল, জেলরোড, সুবিদবাজার, পাঠানটুলা, শিবগঞ্জ, উপশহর, টিলাগড়, শাহি ঈদগাহ, কাজিটুলা, মদিনা মার্কেট, সুবিদবাজার, পাঠানটুলা, তেমুখী, মেডিকেল রোড, লামাবাজার, বালুচর, সুরমা পয়েন্ট, তালতলা, পৌর বিপণি মার্কেট, পুলের মুখ, কদমতলী, কায়স্তরাইল ও ধোপাদীঘির পূর্বপারে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ স্ট্যান্ড।
বিশেষ করে নাইওরপুল এসএমপির কার্যালয়ের সামনে মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার, সোবহানীঘাট পুলিশ ফাঁড়ির সামনে অটোরিকশা এবং সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে (পুরনো) অবৈধ স্ট্যান্ড থাকলেও পুলিশের কোনো ভ‚মিকা নেই বললেই চলে।
সিসিক সূত্র জানায়, সিলেট নগরের ২৭ ওয়ার্ড মিলিয়ে সিটি করপোরেশনের রয়েছে ৫৬৮ কিলোমিটার সড়ক। এর মধ্যে অধিকাংশ জায়গাজুড়ে রয়েছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মাইক্রোবাস, হিউম্যান হলার (লেগুনা) ও ট্রাকের অবৈধ স্ট্যান্ড। নগরের অর্ধশতাধিক স্থানে গড়ে উঠেছে অবৈধ স্ট্যান্ড। প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে পাড়া-মহলার সংযোগ সড়কেও গড়ে উঠেছে অবৈধ স্ট্যান্ড। প্রত্যেক স্ট্যান্ড থেকে মাসিক গড়ে ১লাখ টাকা যায় ট্রাফিক পুলিশের তহবিলে।
চালকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, পরিবহন শ্রমিক নেতাদের ছত্রছায়ায় দীর্ঘদিন ধরে গড়ে উঠেছে এসব স্ট্যান্ড। আর তাদের সহযোগিতা করছেন পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তা। ২০১৭ সালের ১৭ অক্টোবর সিলেট নগরের বিভিন্ন মার্কেট, বিপণিবিতানসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ফুটপাত দখল করে ব্যবসা-বাণিজ্য, অবৈধ স্ট্যান্ড ও যেখানে-সেখানে যানবাহন পার্ক সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে এতে দুর্ভোগ কমেনি।
আম্বরখানা থেকে টিলাগড় সড়কে যেসব সিএনজিচালিত অটোরিকশা আছে, সেগুলো অবৈধভাবে স্ট্যান্ড গেড়েছে আম্বরখানা পয়েন্টে। কিছুদিন আগেও বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে পয়েন্টে যাত্রী ওঠানামায় কঠোর নিষেধাজ্ঞার কথা প্রচার করা হয়। তবে হঠাৎ করেই তা শিথিল হয়ে পড়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব অবৈধ স্ট্যান্ডে থাকা চালকদের দ্বারা হয়রানীর শিকার হয়ে থাকেন রাতের যাত্রীরা। স্ট্যান্ড এরিয়া থেকে অন্যত্র যেতে হলে দ্বিগুণ ভাড়ায় গাড়ি রিজার্ভ করতে হয়। নয়তো অন্য কোনো লোকাল গাড়িতে করে যেতে পারবেন না। অন্য কোনো গাড়িতে উঠলে ওই যাত্রীকে নামিয়ে দেয় স্ট্যান্ড দখল করে থাকা চালকরা। এ নিয়ে অনেক সময় যাত্রী ও চালকদের মধ্যে বাক বিতন্ডার সৃষ্টি হয়। এমনকি যাত্রীদের শরীরে হাত পর্যন্ত তুলে দৌরাত্ম দেখান চালকরা।
বিশেষ করে রেলওয়ে স্টেশন, বাস স্টেশন ও কদমতলী স্ট্যান্ডের চালকদের মধ্যে এই দৌরাত্ম চোখে পড়ে। রাতের বাসে কিংবা ট্রেনে ঢাকা বা বিভিন্ন জেলা শহর থেকে আসা যাত্রীদের সাথে তারা এমন খারাপ আচরণ করে থাকে। অনেক যাত্রী মান সম্মানের ভয়ে সারা রাতঅবধি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থেকে সকালের আলো ফোটার পর যাত্রীবাহী বাস কিংবা লোকাল অটোরিকশায় গন্তব্যে পৌছাতে দেখা যায়।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, প্রত্যেকটি থেকে তোলা টাকার একটি অংশ এসএমপি পুলিশের ট্রাফিক বিভাগকে দেওয়া হয়ে থাকে। এসব অবৈধ স্ট্যান্ড থেকে এসএমপি’র ট্রাফিক সেক্টরের মাসিক অবৈধ আয় পায় অর্ধকোটি টাকা।
তবে এসএমপি’র ট্রাফিক বিভাগের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এ অভিযোগ অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে কিছু কিছু স্ট্যান্ডে কয়েকটি গাড়ি রাখার জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এখন অনেক এলাকায় রাখা হয় শত শত গাড়ি। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, সিলেট নগরের সমস্যা সমাধানে কাজ চলছে। সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মাইক্রোবাস ও ট্রাকের অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদে সব মহলের সহযোগিতা প্রয়োজন। সবার সহযোগিতায় সুন্দর পরিচ্ছন্ন নগর গড়তে চাইলেও নানা প্রতিকুলতার মধ্যদিয়ে উন্নয়ন কাজ অব্যাহত রাখতে হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : জে.এ কাজল খান
Design and developed by syltech