নতুন ভূমি আইন: যেসব কাগজপত্র না থাকলে হারাতে হবে জমি

প্রকাশিত: ৭:০৪ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২১, ২০২৫

নতুন ভূমি আইন: যেসব কাগজপত্র না থাকলে হারাতে হবে জমি

বিজয়ের কণ্ঠ ডেস্ক
ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা, মামলা এবং দীর্ঘদিনের পারিবারিক বিরোধের পেছনে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের অভাব দায়ী। নতুন ভূমি আইনের বাস্তবতায় নির্দিষ্ট দলিল না থাকলে জমি হারানোর ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। এ অবস্থায় জমির মালিকানা, দখল ও বিক্রয়সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সম্পর্কে সচেতন হওয়া এখন অত্যন্ত জরুরি। দলিলপত্র সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করলে ভবিষ্যতে নানা আইনি জটিলতায় পড়তে হতে পারে।

জমির দখল ও মালিকানা নির্ধারণে দলিলের গুরুত্ব :
জমি ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রার অফিসে স্ট্যাম্পে সম্পাদিত ও স্বাক্ষরিত চুক্তিপত্রই জমির মূল দলিল। এতে সাক্ষীর স্বাক্ষর এবং রেজিস্ট্রারের সিল থাকে। এই দলিলের আগের দলিলগুলোকে বলা হয় বায়া দলিল। জেলা রেজিস্ট্রার অফিস থেকে এসব দলিলের কপি সংগ্রহ করা যায়। জমির মালিক হিসেবে দলিল সংরক্ষণের দায়িত্ব মূলত মালিকেরই।

পর্চা ও খতিয়ানের ভূমিকা :
জমির খতিয়ান বা পর্চা হলো জরিপে প্রাপ্ত ভূমি সংক্রান্ত সরকারি নথির অনুলিপি। জমির মালিক পর্চা সংগ্রহ করলে সেটিকে পর্চা বলা হয়, আর মূল নথিটি ভূমি অফিসে খতিয়ান হিসেবে সংরক্ষিত থাকে।

দাখিলা- খাজনা পরিশোধের সরকারি প্রমাণ :
ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা পরিশোধের পর তহসিল অফিস থেকে যে রশিদ প্রদান করা হয়, সেটিই দাখিলা। জমি বিক্রয়ের সময় দাখিলা দাখিল করা বাধ্যতামূলক। এটি জমি বর্তমানে কার দখলে আছে, তার বৈধতা প্রমাণ করে। এমনকি খাজনা মওকুফ থাকলেও দুই টাকা প্রদান করে দাখিলা সংগ্রহ করা যায়।

ওয়ারিশ সনদ ও সাকসেশন সার্টিফিকেট :
উত্তরাধিকার সূত্রে জমি পাওয়ার ক্ষেত্রে ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকার সনদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র বা সিটি করপোরেশনের মেয়রের মাধ্যমে ইস্যু করা হয়। আদালতের মাধ্যমে ইস্যু হওয়া উত্তরাধিকার সনদকে সাকসেশন সার্টিফিকেট বলা হয়।

মিউটেশন (নামজারি) কপি :
জমির মালিকানা পরিবর্তনের রেকর্ড হিসেবে সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে মিউটেশন বা নামজারি করতে হয়। দুই জরিপের মধ্যবর্তী সময়ে জমির মালিকানা পরিবর্তন হলে নামজারি দলিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

আদালতের রায় ও ডিক্রি :
ভূমি সংক্রান্ত কোনো বিরোধ আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হলে সংশ্লিষ্ট রায় বা ডিক্রি চূড়ান্ত দলিল হিসেবে বিবেচিত হয়। জমির মালিকানা নির্ধারণে এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণপত্র।

মৌজা ম্যাপ ও বাস্তব খণ্ডচিত্র :
মৌজা ম্যাপ হলো ভূমির বিভিন্ন খণ্ডচিত্রের ভিজ্যুয়াল উপস্থাপন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এসব ম্যাপ সংরক্ষিত থাকে এবং নির্ধারিত ফি দিয়ে সংগ্রহ করা যায়। এটি জমির সীমানা ও অবস্থান সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেয়।

জমির দখল ও ব্যবহার :
জমির দখল প্রমাণের জন্য আলাদা কোনো সরকারি দলিল না থাকলেও দাখিলা বা খাজনার রশিদই দখলের প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে জোরপূর্বক দখল নয়, বরং বৈধ মালিকানার ভিত্তিতে জমি ব্যবহার করাকেই আইন স্বীকৃতি দেয়।

বর্তমান ভূমি আইনের বাস্তবতায় নিজের জমির দখল, মালিকানা ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে হলে এসব গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র সংগ্রহ ও সংরক্ষণ অপরিহার্য। সচেতনতার অভাবে শুধু জমি নয়, প্রজন্মের পরিশ্রমের অর্জনও হারিয়ে যেতে পারে। তাই ভবিষ্যতে ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ ও মামলার ঝুঁকি কমাতে এখনই প্রয়োজনীয় দলিলপত্র সঠিকভাবে প্রস্তুত ও সংরক্ষণ করা জরুরি।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর