ওসমানীনগরে দখলবাজদের আগ্রাসনে প্রমত্তা বুড়ি নদী

প্রকাশিত: ৭:০৬ অপরাহ্ণ, জুন ১৪, ২০২৫

ওসমানীনগরে দখলবাজদের আগ্রাসনে প্রমত্তা বুড়ি নদী

হারুন রশিদ, ওসমানীনগর
সিলেটের ওসমানীনগরে দখলবাজদের সর্বগ্রাসী ক্ষুধার আগ্রাসনে নিস্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে ওসমানীনগরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বুড়ি বরাক নদী। এক সময়ের প্রমত্তা এই নদী এখন অস্তিত্ব ও নাব্যতা হারিয়ে খালে পরিণত হয়েছে। বিলীন হয়ে যাওয়া নদীর অংশে দখলদাররা নিজেদের মতো রাস্তা ও স্থাপনা নির্মাণ করায় অল্প বৃষ্টিতে তৈরী হয় জলাবদ্ধতা।

দখলবাজদের সর্বগ্রাসী আক্রমন থেকে নদী রক্ষায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও নদী খননের দাবি বহুবার উঠলেও এ ব্যাপারে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি আজও। এলাকাবাসীর দাবি বিলীন হয়ে যাওয়া নদী ও খাল-বিলের জায়গা উদ্ধার করে তা খনন করা হলে একদিকে কৃষির ফলন ভালো হবে, অন্যদিকে অনাকাঙ্ক্ষিত বন্যার হাত থেকে রক্ষা পাবে এলাকার মানুষ।

জানা যায়, অভিবক্ত বালাগঞ্জ উপজেলার মানচিত্রে নদীটির প্রায় ৮০ ফুট প্রস্থ ও ৩০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ছিল, উপজেলার নিম্নাঞ্চল ৩ টি ইউনিয়নের কিছু কিছু অংশে। নদীর ২০-২৫ ফুট প্রস্থ থাকলেও মহাসড়ক এলাকায় নদীটি পুরো দখল হয়ে গেছে। সিলেটের পূর্বাঞ্চল এলাকা থেকে অবিভক্ত বালাগঞ্জ উপজেলার দয়ামীর ইউনিয়নের চিন্তামনি গ্রাম দিয়ে প্রবেশ করে উসমানপুর, বোয়ালজুড়, তাজপুর, গোয়ালাবাজার, বুরুঙ্গা, পশ্চিম পৈলনপুর ও সাদীপুর ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত ছিল। প্রাচীনকালে এই বুড়ি নদীকে পাপ মোচনের বুড়ি বরাক নামে অভহিত করা হতো। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাপ মোচনের জন্য পুণ্যস্থানে আসতেন দূর দূরান্তের পুণ্যার্থীরা। এ উপলক্ষে তাজপুর বাজারে বসত শত বছরের ঐতিহ্য বারুণী মেলা। বর্তমানে বারুণী মেলার আয়োজন হলেও নদী না থাকায় হয়নি পুণ্যার্থীদের পুণ্যস্থান।দখলবাজদের আগ্রাসনে বিলীন হয়ে গেছে এককালের উত্তাল প্রমত্তা বুড়ি নদী। নদীটির তাজপুর বাজার অংশে পাল তোলা সারি সারি নৌকার বদলে এখন শোভা পাচ্ছে বড় বড় পাকা বাসাবাড়ি ও দোকানঘর। বুড়ি নদীর বুকে মাটি ভরাট করে কেউ বা করেছেন হাউজিং প্রকল্প আবার কেউ কেউ বানিয়েছেন বাড়িঘর ও মিলফ্যাক্টরি এবং রাস্তা।

গত কয়েক দিনের অল্প বৃষ্টিতে উপজেলা সদর ইউনিয়ন তাজপুরে অকাল জলাবদ্ধতা দেখা দিলে ভোক্তভোগী জনসাধারণের পক্ষে সর্বগ্রাসী আক্রমন থেকে নদী রক্ষায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও খননের দাবি জানিয়ে আওয়াজ তুলেছেন। তাজপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো: কবির আহমদ। তিনি বলেন বুড়ি নদীটি তাজপুরের অংশে বেশির ভাগ কর্তৃত্ববাদী শেখ হসিনার অপ্রতিরোধ্য দখলবাজদের সর্বগ্রাসী আগ্রাসনে দখল ও ভরাট হয়ে পানির গতিপথ পাল্টে যাওয়ায় অল্প বৃষ্টিতে তাজপুর বাজারসহ এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
শুকনো মৌসুমে তাজপুর এলাকার আশপাশে নদীতে আর পানি থাকে না। তাই পানির অভাবে এসব এলাকার জমিতে আর বোরো ধানসহ রবিশস্য আবাদ করা সম্ভব হয়না। অন্য দিকে নদী শুকিয়ে যাওয়ার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন জাতের মাছ ও জলজপ্রাণী।

এদিকে উপজেলার নিম্নাঞ্চল খ্যাত বুরুঙ্গা,পশ্চিম পৈলনপুর, বোয়ালজুর, সাদীপুর ইউনিয়নের কিছু কিছু অংশে বুড়ি নদীর অস্তিত্ব থাকলেও বেশির ভাগ দখল ও দুষনে নাব্যতা হারিয়েছে নদীটি।

স্থানীয় সচেতন মহলরা জানান, সরকারের রাজস্বখাতে ব্যাপক অবদান রাখা তাজপুর বাজার এলাকায় সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের পুর্ব দিকে কাশিপাড়া রোড হয়ে বুড়ি নদীর যে বিশালতা অতীতে ছিল তা আজ ভুমিখেকোদের নগ্ন থাবায় সংকুচিত হয়ে নালায় পরিনত হয়েছে, পশ্চিম দিকে যে অংশ প্রবাহিত হয়েছে ট্রাক স্ট্যান্ডের পিছন দিকে সেই অংশটাও অবৈধভাবে ভরাট করে বাসা বাড়ি নির্মান করা হয়েছে। মাছ বাজারের পাশ দিয়ে বুড়ি নদীর যে অংশ প্রবাহিত সেই অংশে অবৈধভাবে মাটি দিয়ে ভরাট করে একক রাস্তা নির্মান করা হয়েছে। পুবালী ব্যাংকের বিপরীত পার্শ্ব কবরস্থানের পাশ দিয়ে যে খাল ছিল তা পরিকল্পিতভাবে মাটি দিয়ে ভরাট করে অবৈধভাবে বাসাবাড়ি নির্মান করা হয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে পানি নিস্কাসন ব্যবস্থা বিহীন বাসাবাড়ি নির্মান এই সমস্যার প্রধান কারণ বলে দাবি করেছেন এলাকার সচেতন মহল।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: জয়নাল আবেদীন বলেন, নদী দখল করে যারা স্থাপনা নির্মাণ করেছে তা-মোটেই কাম্য নয়। অবৈধ স্থাপনা উদ্ধার ও উচ্ছেদের ক্ষেত্রে স্থানীয় জনগণের পাশাপাশি জেলা প্রশাসকের অনুমোদনের প্রয়োজন, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শাখা কর্মকর্তা (বালাগঞ্জ,বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর)মো: গোলাম বারী জানান, এটা জেলা উপজেলা এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের সমন্বয়ে আগে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ক্ষেত্রে স্থানীয় উপজেলা পরিষদকে উদ্যোগ নিতে হয়। উচ্ছেদের পর খনন করা সম্ভব।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ জানান, উচ্ছেদটি আমাদের নিয়মিত প্রক্রিয়া, স্থানীয় ইউএনওর প্রতিবেদন খোঁজে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর