ঢাকা ১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৭:২২ অপরাহ্ণ, জুন ২৬, ২০২৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
সিলেট নগরীর মেজরটিলার ইসলামপুর এলাকায় একটি ভাড়া বাসা থেকে দেড় মাস বয়সী এক কন্যাশিশুকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। বাবার সাথে ঘুমিয়ে থাকা শিশুর বাবাকে অর্ধ গলাকাটা অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পাশের রুমেই ঘুমিয়ে থাকা শিশুটির মা ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানে না বলে পুলিশ ও গণমাধ্যমকে জানিয়েছে। তার ভাষ্যমতে- স্বামীর ডাকে তিনি ঘুম থেকে উঠে দেখেন স্বামীর গলায় রক্তকরণ হচ্ছে। দৌড়ে গিয়ে দেখেন বাচ্চারও গলা কাটা। তখন তার স্বামী জানিয়েছেন যে, তিনিই মেয়েটির গলা কেটেছেন, তার মাথায় কাজ করছে না তাই এমনটি করেছেন।
ইনায়ার মা জানান, ভেতর থেকে দরজা তালা দেওয়া ছিল। যোহরের নামাজ পড়ে তারা ঘুমিয়ে ছিলেন। বাচ্চাকে নিয়ে আতিকুর রহমান এক রুমে ও পাশের রুমে ছিলেন তিনি। তারা তিনজনেই ঘুমিয়ে পড়েন। আছরের কিছুক্ষণ আগে স্বামীর ডাকে সম্বতি ফিরে দেখেন ইনায়াকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে এবং এই খুন তার স্বামীই করেছেন। স্বামীর গলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে।
অথচ, ঘটনার পর পরই ইনায়ার মা জানিয়েছিলেন- ‘আমরা বিকেলে মেয়ে ও স্বামীকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। আসরের আজানের কিছুক্ষণ আগে কান্না করছিল। এসময় বাচ্চার বাবা আমার মেয়েকে শ্বান্তনা দিতে কোলে তুলে নিয়ে হাঁটছিলেন। কিছুসময় পরে তিনি (স্বামী) আমার শরীরে হাত দিয়ে ডাকেন। এসময় আমি ঘুম ঘুম চোখে থাকিয়ে দেখি আমার স্বামীর গলা রক্তাক্ত। পরে দ্রুত উঠে গিয়ে দেখি আমার মেয়েরও গলাকাটা।’
এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট ছিল যে, তারা একসাথে ঘুমিয়ে ছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি দুই জন দুই রুমে ঘুমানোর কথা উল্লেখ করেন এবং খুনের অভিযোগ স্বামীর দিকে তুলেন। যা মেনে নিতে পারেননি নেটিজেনরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইনায়ার মায়ের এমন বক্তব্য প্রকাশ হওয়ার পর সেখানে মন্তব্যের ঝড় ওঠে।
নেটিজেনদের দাবি- ইনায়ার মায়ের কথায় রহস্য রয়েছে। তার চেহারার মাঝেও কিছু একটা লুকানোর ছাপ স্পষ্ট। বাবা এবং মেয়ে দুই জনেরই গলা কাটা। এই সময়ে তারা কেউ কী কোনো শব্দ করেননি। আর পাশের রুমে থাকা ইনায়ার মা কি সেই শব্দ শুনতে পাননি। এমন হাজারো প্রশ্ন উঠছে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও গুলোতে।
ঘটনার পর থেকেই নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে। হত্যাকাণ্ডটি পূর্ব পরিকল্পিত, নাকি পিতা আতিকুর নিজেই এ কাজ করেছেন? নাকি এর সাথে মায়ের সম্পকৃক্ততা রয়েছে?
তবে, বিষয়টি খুব গরুত্বের সাথে তদন্ত করছে পুলিশ। প্রকৃত অপরাধীকে শনাক্ত করতে সব রকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন শাহপরাণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনির হোসেন। তিনি বলেন, শিশুর বাবা এখনো আইসিইউতে এবং সুস্থ না হওয়ায় জিজ্ঞাসাবাদ সম্ভব হয়নি। তিনি কথা বলতে পারলে পুরো ঘটনার রহস্য উন্মোচিত হবে।
অন্যদিকে, এসএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) সাইফুল ইসলাম জানান, আতিকুর রহমানের ফিঙ্গারপ্রিন্টসহ সব আলামত পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। পুলিশ একাধিক টিম নিয়ে তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
এর আগে বুধবার (২৫ জুন) বিকেলে মেজরটিলা বাজারসংলগ্ন ইসলামপুর এলাকার আনসার মিয়ার বাড়ির একটি ভাড়া থেকে দেড় মাসের শিশু ইয়ানার গলা কাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় তার বাবা অটোরিকশা চালক আতিকুর রহমানকেও অর্ধ গলাকাটা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। বর্তমানে তিনি সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
প্রতিবেশীরা জানান, দুপুরে স্বাভাবিকভাবে খাবার খেয়ে স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন আতিকুর রহমান। বিকেল ৫টার দিকে হঠাৎ ঘর থেকে চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন ছুটে গিয়ে দেখতে পান—আতিকুর রহমান গলায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন, এবং পাশে তার কন্যাশিশু ইনায়া রক্তে ভেসে যাচ্ছে। দ্রুতই তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by Yellow Host