ঢাকা ১২ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৫:১০ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১, ২০১৯
নিজস্ব প্রতিবেদন
ছোট্ট ২ ভাইকে নিয়ে মেলার প্রধান ফটকে তান্নি ইসলাম। চাকুরী করেন বেসরকারি একটি সংস্থায়। ২০ টাকা দিয়ে টিকেট কেটে প্রবেশ করলেন ভিতরে। তারপর আবারও ভেতরে টিকেটের পসরা। কাছে গিয়ে জানালেন, ‘আমি তো টিকিট কিনেছি, তাহলে এই টিকিটগুলো কী?’ টিকেট বিক্রেতারা জানালো-এটি হচ্ছে র্যাফেল ড়্র খেলার টিকিট। এখানে ২০ টাকা দিয়ে টিকিট কিনে আপনি নিজের ভ্যাগ্য পরিবর্তন করার সুযোগ নিতে পারেন। শনিবার বিকেল ৫ টায় সিলেট আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা মাঠের চিত্র এটি। প্রবেশ মূল্যের মাধ্যমে র্যাফেল ড্র করার কথা আয়োজকদের প থেকে বলা হলেও গোটা মাঠে রয়েছে টিকিট বিক্রির একাধিক বুথ। যেখানে প্রকাশ্যে এজেন্টদের মাধ্যমে বিক্রী হচ্ছে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার টিকিট।
মাঠব্যাপী শুধু টিকিট বিক্রীই নয়, মেলা মাঠে বিভিন্ন রাইডের দাম রাখা হয়েছে অনেকের সাধ্যের বাইরে। ক্রেতা চাহিদার দিকে শুরু থেকেই ল নেই আয়োজকদের। মেলার প্রতিটি স্টলের পণ্যই অত্যন্ত নিম্নমানের। সিলেটের হকার্স মার্কেট থেকে নগরীর অলীগলিতে সর্বত্রই এসকল জিনিস কেনাকাটা করা যায় অনায়াসে। ােভের সাথে কথাটি বললেন সমাজকর্মী আলী আশরাফ চৌধুরী।
সিলেট নগরীর শাহী ঈদগাস্থ শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স মাসব্যাপী আয়োজন করা হয় এই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার। মেলা শুরু করার আগে ৪ মার্চ আয়োজক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে নগরের আনন্দ টাওয়ার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আযোজকদের প থেকে বলা হয়, এবার মেলায় ফুটপাতের পণ্য নয়, বরং ভারত, চীন, মিশর, থাইল্যান্ড, পাকিস্তানসহ দেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর স্টল থাকবে। মানসম্পন্ন পণ্যসামগ্রী প্রদর্শন ও ক্রয়-বিক্রয় করা হবে। তবে, সে সময় প্রবেশ মূল্যের উপর র্যাফেল ড্র বিষয়ে সংবাদকর্মীদের না জানালেও মেলার শুরু থেকেই চলছে এই লটারী বাণিজ্য।
মেলায় ফরেইনার জোন কিংবা বিদেশী স্টল থাকার কথা বলা হলেও গোটা মাঠ জোড়ে বিদেশী প্যভিলিয়ন খুঁজে পাওয়া যায়নি। মেলায় আসা মীরাবাজারের ক্রেতা আইনুল হক বললেন, কেবল মাত্র নিজ দেশের অংশগ্রহণে কখনোই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা হয় না। তিনি এটিকে প্রতারণা হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, গোটা মেলার মাঠে কেনার মতো এক্সকুসিভ কিছু পাইনি। তাছাড়া, নারী উদ্যোক্তাদের নির্ধারিত জোন থাকার কথা থাকলেও সেখানে শোভা পাচ্ছে একটি গার্মেন্টের দোকান।
এদিকে, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের আয়োজনে এবারের ৫ম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার মাইকিং হচ্ছে নগরের সর্বত্র। মেলার প্রবেশ মূল্যের উপর র্যাফেল ড্র জানিয়ে মহানগরের প্রতিটি এলাকায় করা হচ্ছে মাইকিং। পুরস্কারের লোভে প্রতিদিন টিকিট কিনছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতিপত্রের কোনো শর্তাবলীতে মেলায় লটারি বা র্যাফেল ড্র-এর কথা উল্লেখ নেই। তবে কিভাবে মেলার আয়োজকরা এই লটারি পরিচালনা করছেন-এমন প্রশ্ন দর্শনার্থীদের। প্রতিটি লটারি ড্র সিলেট ক্যাবল সিস্টেমের মাধ্যমে সরাসরি স¤প্রচার করা হচ্ছে। প্রশাসনও এ বিষয়টি অবগত হয়েও নীরব ভূমিকা পালন করছে। অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এই লটারির নামে জুয়া খেলা চলছে।
এদিকে ১ এপ্রিল থেকে সারাদেশে শুরু হয়েছে উচ্চমাধ্যমিক পরীা। উচ্চ শব্দে মাইক বাজিয়ে প্রতিদিন গানবাজনা করায় স্থানীয় শিার্থীদের পড়ালেখায় সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন অভিভাবক। প্রতিদিন র্যাফেল ড্র-এর লটারির নামে জুয়া খেলা বন্ধের দাবিতে স্থানীয় বাসিন্দারা সিলেট জেলা প্রশাসক ও পুলিশ কমিশনারে কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
জানা গেছে, সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বারের উদ্যোগে মাসব্যাপী বাণিজ্য মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় গত ৯ মার্চ শনিবার। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মেলা কর্তৃপ জানিয়ে ছিলেন, মেলায় থাকবে দেশ-বিদেশের ৩৫ টি প্যাভিলিয়ন ও ১২০ টি স্টল।
মেলা অফিসের সামনে কথা হয় ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের সহযোগী সোলেমান আহমদের সাথে। তিনি বলেন, অনুমোদনের মাধ্যমেই লটারি চলছে। তাছাড়া প্রশাসন পুরো বিষয় সম্পর্কে অবগত।
এব্যাপারে কথা বলতে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের সদস্য ও মেলার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রধান মঈন খান বাবলুর মুঠোফোনে বারবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেন নি। এক পর্যায়ে কল কেটে দেন। এরপর যোগাযোগ করা হয় মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য আব্দুল হকের সাথে। তিনি প্রথমে অভিযোগগুলোর ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by Yellow Host