ঢাকা ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৬:৫৬ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৩০, ২০২৫
আব্দুল শহীদ, সুনামগঞ্জ
সুনামগঞ্জের সর্ববৃহৎ বালু মহাল যাদুকাটা নদীতে চারটি উপজেলার লাখো বারকি শ্রমিকের কর্মসংস্থান বন্ধের জন্য একটি দুষ্কৃতিকারী চক্র গত ১৯ আগস্ট উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করে। পরবর্তীতে সেই রিটের উপর (৩৯৭৮/২০২৫) আপিল দায়ের করলে আদালত সেটি স্থগিত রাখেন। সেইসাথে জলমগ্ন নদীর গভীর থেকে সনাতন পদ্ধতিতে বালু উত্তোলন করতে না পারায় শ্রমিকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে মেশিন ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করেন। আগামী ২০২৬ সালের ১২ এপ্রিল থেকে সেইভ মেশিন ব্যবহার করা যাবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
আপিল বিভাগের বিচারক ফারা মাহবুবের আদালত সেই রিটের (পিটিশন নং-৯৯১৭/২০২৪) বিরুদ্ধে দাখিলকৃত আপিলের রায় প্রদান করেন।
এদিকে যাদুকাটা নদীর ইজারাদার নাসির মিয়া বলেন, চারটি উপজেলার প্রায় লাখো বারকি শ্রমিকের কর্মসংস্থান বন্ধের লক্ষ্যে একটি স্বর্থানেসী মহল যাদুকাটা বালু মহাল স্থগিত করার জন্য রিট পিটিশন দায়ের করলে বিজ্ঞ আপিল ব্যাঞ্চের বিচারক তা স্থগিত রেখে নদীতে গভীর পানি থাকার কারণে শ্রমিকরা সনাতন পদ্ধতিতে বালু উত্তোলন করতে না পারায় বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এর আলোকে সেইভ মেশিন ব্যবহারেরর অনুমতি দিয়েছেন। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার আমলে এই দুটি বালু মহাল ৩৩ কোটি টাকায় লীজ নিয়েছিল সাবেক দুই ফ্যাসিস্ট ইজারাদার রতন মিয়া ও সেলিম আহমেদ গং। কিন্তু এবছর আমরা লীজ নিয়েছি ১০৭ কোটি টাকায়। পাশাপাশি পাড় কাটা রক্ষায় লাউড়েরগড় চরে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের দাবি জানালে আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ পুলিশ ক্যাম্পের অনুমতি দেন। নদীতে প্রতিনিয়ত জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় সার্বক্ষণিক তিনজন ম্যাজিস্ট্রট, বিজিবি, নৌ-পুলিশ টহল দিয়ে থাকে। তারপরও ওই দুষ্কৃতিকারী খোরশেদ আলমের লোকজন লাউড়েরগড় চরের সরকারি বালু লুটপাট করে উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে আদালতে পাড় কাটাসহ নদী বন্ধের জন্য রিট পিটিশন দায়ের করে। আদালতের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার কারণে দীর্ঘ প্রায় ছয় মাস যাবৎ নদী বন্ধ থাকায় আমরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। তাই গেল ছয় মাসের রাজস্ব লেছ দেওয়ার জন্য প্রশাসনসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আকুল আবেদন জানাই।’
স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, সাবেক ইজারাদার যুবলীগ নেতা রতন মিয়া ও দুষ্কৃতিকারী খোরশেদ আলমের লোকজন বাঁধা প্রদান করায় সীমানা নির্ধারণেও বার বার স্থানীয় প্রশাসন ব্যাপক হয়রানির শিকার হয়েছেন।
তারা আরো বলেন, সাবেক দুই ইজারাদার কর্তৃক উচ্চ আদালতে রিট করে দীর্ঘ প্রায় ৫/৬ মাস যাদুকাটা নদী বন্ধ রাখে। এতে তিনটি উপজেলার প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক নৌ-শ্রমিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ি খুবই কষ্টে জীবন যাপন করেছেন। অনেক জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে উচ্চ আদালতের রায় আজ কার্যকর হয়েছে। নদীতে বেশি পানি থাকায় আমাদের শ্রমিকরা সনাতন পদ্ধতিতে বালু উত্তোলন করতে পারছেন না। তাই সেইভ মেশিনেই আমাদের একমাত্র ভরসা।
শ্রমিক সংঘটনের সাধারণ সম্পাদক হাকিকুল ইসলাম সর্দার বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার আমলে দেখেছি সাবেক দুই ইজারাদার লাউড়ের গড় চর কেটে বিজিবি ক্যাম্পের নিকটে চলে গিয়েছিল। কিন্তু এখন দেখছি স্থানীয় প্রশাসন বর্তমান ইজারাদারকে চর থেকে প্রায় সাড়ে সাতশত ফুট গভীর পানির মধ্যে সীমানা নির্ধারন করে দিয়েছেন। সেখানে সেইভ মেশিন ছাড়া কোনভাবেই ডুবিয়ে বালু উত্তোলন করা সম্ভব হবে না। কিছু সংখ্যক দুষ্কৃতিকারী লোকদের কারণে দীর্ঘ প্রায় ছয় মাস যাবৎ শ্রমিকরা নদীতে বালু উত্তোলনের কাজ করতে পারেননি। এতে ব্যবসায়ী, শ্রমিক এবং ইজারাদার ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। আমরা সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাই আদালতের নিষেধাজ্ঞায় ইজারাদারের গেল ছয় মাসের ক্ষয়ক্ষতি আগামীতে পুশিয়ে দেওয়ার জন্য।
তাহিরপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাহারুখ আলম শান্তুনু বলেন, প্রাথমিক জানি গত ১৯ আগস্ট ২০২৫ইং তারিখের রিট পিটিশন স্থগিত করেছে আপিল বিভাগ। তবে অফিসিয়ালি হাতে কাগজ পাওয়ার পর নদীতে যন্ত্র চলবে কি না বলতে পারবো।
তাহিরপুর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান মানিক বলেন, ১৯ আগস্ট ২০২৫ ইং তারিখের স্টে অর্ডারের রিট এর একটি কাগজ পেয়েছি। আমরা অফিসিয়ালি স্টে অর্ডারের কাগজ কালেক্ট করার চেষ্টা করছি। হাতে পেলে পরিস্কার করে বলা যাবে। এ বিষয়ে আমি জেলা প্রশাসক স্যারের সাথে কথা বলেছি। আশা করছি দু এক দিনের ভেতরেই পেয়ে যাবো।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by Yellow Host