ঢাকা ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০:০০ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১১, ২০২৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
সিলেট নগরের ওভারব্রিজ এলাকা থেকে ফিল্মিস্টাইলে এক যুবককে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। অপহরকরা নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে যুবকের মাথায় বন্দুক ধরে জন সম্মুখেই টেনে হিচড়ে নিয়ে গেছে। অপহরণের সময় তারা সাদা রঙের একটি মাইক্রোবাস ব্যবহার করে এবং অপহৃত যুবককে নিয়ে শহর অভিমুখে নিয়ে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। তবে, অপহরণকারীরা অস্ত্রধারী ও হাতে হ্যান্ডকাপ ছিলো বলে সবাই আইনের লোক মনে করে তাদের প্রতিরোধের চেষ্টা করেননি।
৩০ নভেম্বর বেলা ১টার দিকে নগরের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার ওভারব্রিজ সংলগ্ন কদমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা জকিগঞ্জগামী বিরতীহিন গাড়িতে এ অপহরণের ঘটনা ঘটে।
অপহৃত যুবকের নাম বুরহান উদ্দিন(৩১)। তিনি সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার সোনারখেওড় গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আনিছুল হকের ছেলে।
বুরহানের বড় ভাই ইব্রাহিম আলী জানান, ‘অপহরণকারীরা বুরহানের ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বার ০১৭৩০-২৫০৪৬১ থেকে আমাকে কল দিয়ে অপহরণের বিষয়টি জানায় এবং ৮ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। একইভাবে আমার বোন কুলসুমা বেগমকেও তারা কল করে ওই টাকা মুক্তিপণ চায়। এসময় তারা ভিডিও কলে বুরহানের বীভৎস অবস্থা আমাদের দেখালে আমরা কান্নায় ভেঙে পড়ি। ভিডিও কলে বুরহান উলঙ্গ অবস্থায় ছিল এবং তার হাত উপরের দিকে বাধা ছিল। সেইসাথে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত আর আঘাতের চিহ্ন স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল।’
তিনি বলেন, ‘অপহরণকারীরা আমাদের বলে যে যদি আমরা বুরহানকে জীবিত ফেরত চাই- তাহলে দ্রুত তাদের কথামতো টাকাগুলো পৌছে দিতে হবে। প্রথমে কানাইঘাট উপজেলার ১নং লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউপির ৪নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য, নারায়নপুর গ্রামের মৃত শফিকুল হকের ছেলে মস্তাক আহমদ(৪৫)’র বাড়িতে গিয়ে তাকে সঙ্গে নিয়ে একই গ্রামের মৃত নিমার আলীর ছেলে সুহেল আহমদ(৩০) ও এরালীগোল গ্রামের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মৃত মাহমুদ আলীর ছেলে নাজিম উদ্দিন(৪৫)কে তিন লাখা টাকা দিতে হবে। অবশিষ্ট ৫ লাখ টাকা ৫টি বিকাশ নাম্বারে দিতে হবে বলে তারা ০১৬০১-৭৮২৮৯৮, ০১৮১৫-৮৯১০০৩, ০১৭৩৮-৩৬৮৩৮৩, ০১৭১৪-৩৩৮৮৮৬ ও ০১৭১৫-০৪২৩০৬ এই ৫টি নাম্বার পাঠায়।’
ইব্রাহিম আলীর ভাষ্যমতে তারা অপহরণকারীদের কোনো টাকা দেননি। পরিবারের সদস্যদের সাথে পরামর্শ করে তারা আইনের আশ্রয় গ্রহণ করেন। প্রথমে বিষয় দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশকে অবগত করা হয়। এরপর তাদের পরামর্শে কোতোয়ালী মডেল থানায় যান এবং সেখান থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা নিয়ে অফিসার ইনচার্জের দিক নির্দেশনায় এসএমপির এয়ারপোর্ট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগটি তদন্তে র্যাব-৯ এর সহযোগিতা চায় এবং তৎপরতা শুরু করে।
এদিকে খবরটি অপহরণকারীদের কানে গেলে তারা বুরহানের উপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়াতে থাকে। তাকে বাংলাদেশে নয়, বরং ভারতের কোনো এক গোপন আস্তানায় রাখা হয়েছে এবং পুলিশ তাদের কিছুই করতে পারবে না এমনটি বুরহানকে জানানো হয়। এর আগে তার শরীরে বেশ কয়েকটি ইনজেকশন পুশ করা হয় বলেও জানান তিনি।
অপহৃত বুরহান বলেন ‘আমাকে উদ্ধারে যখন র্যাব পুলিশ নগরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে, তখন অপহরণকারীরা বিষয়টি জানতে পেরে আমার উপর বর্বরোচিত নির্যাতন করতে থাকে। আমি কয়েক দফা অজ্ঞান হই। জ্ঞান ফিরলে আবারও নির্যাতন চালানো হয়।’
তিনি বলেন, ‘অপহরণের পর থেকেই এভাবে পালাক্রমে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করতে থাকে জকিগঞ্জ উপজেলার রারাই (থানাবাজার) গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে ও বর্তমানে দক্ষিণ সুরমার চন্ডিপুল এলাকার বাসিন্দা আবুল হাসনাত সিদ্দিকি রনি(৪০), সিলেট সিটি করপোরেশনের ভার্থখলা এলাকার স্বর্ণালী-৪১২ নং বাসার নাজমুল হোসেনের ছেলে আহমদ হোসেন মাহিন(৩০) ও কানাইঘাট উপজেলার সাবেক নারায়নপুর, বর্তমানে দর্পনগর পশ্চিম (নালুহারা) গ্রামের মৃত আব্দুল জব্বারে ছেলে কবির উদ্দিন(৪৫)। সে বর্তমানে দক্ষিণ সুরমা থানাধীন বরইকান্দিগ্রামের ভাড়াটে বাসিন্দা।’
বুরহান বলেন, ‘আমি বেঁচে ফিরতে পারবো বলে আশা করিনি। কারণ, তারা আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছিল শুধুমাত্র টাকার জন্য। টাকা পেলেই আমার মুক্তি, নয়তো আমাকে ওই আন্ধার কুঠিরে পঁচে মরতে হতো। শেষে সুযোগ হিসেবে অপহরণকারীরা আমার মোবাইলে হটস্পট কানেক্ট করে আমার আত্মীয় স্বজনদের ভিডিও কল করে। তাদেরকে আমার বীভৎসতা দেখায় এবং টাকা না দিলে মেরে ফেলার হুমকি দিতে থাকে। নিরুপায় হয়ে আমার স্বজনরা তাদের কথামতো কানাইঘাটের নারায়নপুর গ্রামের মৃত নিমার আলীর ছেলে সুহেল আহমদ(৩০) ও এরালীগোল গ্রামের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মৃত মাহমুদ আলীর ছেলে নাজিম উদ্দিন(৪৫)এর হাতে ৫ লাখ টাকা এবং ১নং লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউপির ৪নং ওয়ার্ড সদস্য ছোটফৌদ গ্রামের মৃত মুজম্মিল আলীর ছেলে মুজির উদ্দিন(৪৫) এর হাতে আরও ৩ লাখ টাকা প্রদান করেন। ৮ লাখ টাকা পাওয়ার পর অপহরণকারীরা ৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যা প্রায় ৭টার দিকে আমাকে নগরের সুরমা মার্কেট সংলগ্ন তালতলাস্থ নূরজাহান রেস্টুরেন্টে পৌছে দিয়ে সটকে পড়ে।’
বড় ভাই ইব্রাহিম আলী জানান, ‘আমরা খুব মূমুর্ষ অবস্থায় বুরহানকে ফিরে পাই এবং দ্রুত সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি। সেখানে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় প্রাইভেট চিকিৎসার জন্য পরদিন নগরের আল আমিন মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি। কিছুটা সুস্থ্য হলে তার কাছ থেকে আমরা ঘটনার বিস্তারিত জানতে পারি এবং আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
এসএমপির মিডিয়া সেল অফিসার অপহরণ ও উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ‘আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ তৎপর রয়েছে। বুরহানের পরিবার মামলা করবে বলে জানতে পেরেছি, তারা সহায়তা করলে আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করা যাবে বলে মনে হচ্ছে। অভিযানে পুলিশ ছাড়াও অন্যান্য টিমের সহায়তা নেওয়া হতে পারে।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by Yellow Host