চালিবন্দরে শেষ হয়নি ব্রিজ নির্মাণ : দুর্ভোগ শিক্ষার্থীদের

প্রকাশিত: ১১:৫২ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২৬, ২০১৯

চালিবন্দরে শেষ হয়নি ব্রিজ নির্মাণ : দুর্ভোগ শিক্ষার্থীদের

নিজস্ব প্রতিবেদন : চালিবন্দরে এখনও সম্পন্ন হয়নি ব্রিজ নির্মানের।   সংস্কারের উদ্যোগে পুরনো ব্রিজ ভেঙ্গে ফেলা হলেও সিসিক এখনও ব্রিজ নির্মান করতে ব্যর্থ হয়েছে।   ফলে প্রতিদিন দুর্ভোগে পড়ছেন শত শত শিক্ষার্থী।  লোহার তৈরি শতাধিক বছরের পুরনো বেইলি ব্রীজের পুরোটা ছিলো জোড়াতালি। দেড় বছর আগে ঝুঁকিপূর্ণ সেই ব্রীজ ভেঙে নতুন ব্রীজ নির্মাণে এগিয়ে আসে সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক)। তারপর এলাকাবাসীর সুবিধার্থে সেখানে নতুন ব্রীজ নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত বাঁশের সাঁকো তৈরী করে দেয়া হয়। এই সাঁকো দিয়ে এক বছর ধরে চলাচল করছে মানুষ। বর্তমানে বাঁশের সাঁকোটিও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

জনগুরুত্বপূর্ণ এই ব্রীজের পুরো অংশ ছিলো ভাঙ্গা। অধিকাংশ স্থানে জোড়াতালি। কয়েক বছর ধরে ব্রীজটি একদিকে হেলে পড়ে। এই অবস্থায়ও মানুষজন ব্রীজের উপর দিয়ে চলাফেরা করেছেন। কিন্তু গত বর্ষা মৌসুমে ব্রীজটি হেলে গিয়ে পুরোদমে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তারপর এগিয়ে আসে সিটি কর্পোরেশন। নতুন ব্রীজ নির্মাণের জন্য কাজ শুরু করে। এই অবস্থায় এলাকাবাসীর সুবিধার্থে সেখানে নির্মাণ করে দেয়া হয় প্রায় পঞ্চাশ মিটার দীর্ঘ একটি বাঁশের সাঁকো। তারপর থেকে ব্রীজের কাজে নেমে আসে ধীরগতি। যে কারণে এক বছরে পাইলিংয়ের কাজই শেষ করা সম্ভব হয়নি। অবশ্য এই ধীরগতির পথে বাধা হয়েছে পাইলিংয়ের স্থানে জমে থাকা পানি। এরই মধ্যে বাঁশের তৈরী সাঁকোটিও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এক বছরে দুইবার ভাঙ্গনের কবলে পড়ে সাঁকো।

চালিবন্দর এলাকার বাসিন্দা দিপক রবি বলেন, সেতুর দুই পাশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এপারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সিলেট ল’কলেজ, সীমান্তিক কলেজ, রামকৃষ্ণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, রামকৃষ্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়, বসন্ত মেমোরিয়াল স্কুল এবং সুহাসিনী দাসের স্মৃতি জড়ানো উমেশচন্দ্র নির্মলাবালা ছাত্রাবাস। ওপারে আছে মায়া ট্রান্সপোর্ট, মোহাম্মদিয়া ট্রান্সপোর্ট, রাজদুত ট্রান্সপোর্ট, শাহজালাল ট্রান্সপোর্ট, ফাইভ স্টার ট্রান্সপোর্ট, শাহপরান ট্রান্সপোর্ট, ইসলামিয়া ট্রান্সপোর্ট, সুরমা ট্রান্সপোর্ট ও সুবর্ণ ট্রান্সপোর্ট। এসকল প্রতিষ্ঠানে কিংবা মূল সড়কপথে যেতে মানুষজনকে গোয়ালিছড়ার ওপর বাঁশের সাঁকোটি পার হতে হয়। এছাড়া উপশহর, মাছিমপুর, চালিবন্দর, মেন্দিবাগসহ আশপাশ এলাকার শিক্ষার্থীদের বাঁশের সাঁকোটি পার হয়ে স্কুলে যেতে হয়।

সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, বাঁশ দিয়ে তৈরি সাঁকো দিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থী এবং এলাকাবাসী চলাচল করেছেন। বাঁশের সাঁকোটি নির্মাণের অনেকদিন হয়ে পড়ায় সাঁকোর দুই পাশে হাতল থাকলেও সেটা দিয়ে চলাচল করা ঝুঁকিপূর্ণ। সাঁকোটি সরু হওয়ায় শিশুদের বেলায় ভারসাম্য ধরে রাখা কঠিন হয়ে যায়। শাহজাহান নামে একজন বৃদ্ধ বলেন, মেন্দিবাগ, টুলটিকরসহ আরো কয়েকটি এলাকার যে সকল শিশুরা চালিবন্দরের বিদ্যালয়ে আসে তারা ভয়ে সাঁকোতে উঠতে চায় না। এজন্য বিদ্যালয়ে যেতে তাদেরকে সোবহানিঘাট হয়ে বেশ কিছু পথ মাড়াতে হচ্ছে। তিনি বলেন, এখানে অনেকগুলো ট্রান্সপোর্ট রয়েছে। এই ট্রান্সপোর্ট’র মালামাল প্রতিদিন বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, আম্বরখানা এলাকায় পৌঁছে দেয়া হয়। কিন্তু ব্রীজটি না থাকায় সময়ের অনেক অপচয় হচ্ছ। এছাড়া সাঁকোটি দিয়ে প্রতিদিন আশপাশ এলাকার অন্ততঃ ছয় শতাধিক শিক্ষার্থী প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা করে। এদের মধ্যে ৫ থেকে ১০ বছরের অনেক শিশু রয়েছে। প্রায়ই সাঁকো থেকে পা ফসকে শিশুরা আহত হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা যায়, শিশুরা দল বেঁধে সাঁকো পার হচ্ছে। শিশুরা সাঁকো পার হওয়ার সময় অভিভাবকরা তাদের পেছনে থাকেন। যাতে কোনো শিশু ছড়ায় পড়ে না যায়। এক বছর ধরে এভাবে অভিভাবকরা সাঁকো পারাপারে সন্তানদের বিদ্যালয় সঙ্গী হয়ে আছেন।

রামকৃষ্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আলম, দিপন, বিপ্লবসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, এক বছর ধরে তারা সাঁকো পার হয়ে যাওয়া-আসা করছে। সাঁকো পার হতে তাদের ভয় করে। সুশীল নামে আরেক অভিভাবক বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্রীজটি নির্মাণ করা জরুরী। প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যেতে যেসকল শিশুরা সাঁকো মাড়াচ্ছে সেই সাঁকোটিও এখন ঝুঁকিপূর্ণ। শিশুরা একটু অসাবধান হলে বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হতে পারে। কারণ সাঁকোর নিচে যে ছড়া রয়েছে সেটি বৃহৎ এবং গহীন। সাঁকোর কয়েকগজ অদূরে থাকা রামকৃষ্ণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তপন দাস বলেন, ব্রীজটি দ্রুতগতিতে নির্মাণ জরুরী হয়ে পড়েছে। রামকৃষ্ণ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং রামকৃষ্ণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মিলিয়ে অন্ততঃ এগারো শত শিক্ষার্থী রয়েছে। অধিকাংশরা বর্তমানে সাঁকো দিয়ে চলাফেরা করছে। এছাড়া আশপাশে ল’কলেজ এবং সীমান্তিক কলেজও রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোস্তাক আহমদ জানান, বেইলী ব্রীজটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। শিগগিরই পাইলিংয়ের কাজ শুরু হবে। যোগাযোগ করা হলে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ছড়ায় পানি থাকায় পাইলিং কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। বর্তমানে আমরা পাইলিংয়ের জন্য বাঁধ দিয়ে পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করেছি। আশা করছি কয়েক দিনের মধ্যে কাজ শুরু করতে পারবো।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর