ঢাকা ১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:৪৬ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ৫, ২০২০
আবদুল কাদির জীবন: বিশ্ব মহামারী কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে সরকার দেশের সকল স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি, প্রাইভেট কোচিং সেন্টার সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিষিদ্ধ করায় শিক্ষার্থীরা গৃহবন্দি হয়ে পরেছে । এতে শুধু পড়ালেখার ক্ষতি হচ্ছেনা, প্রভাব পরছে শিক্ষার্থীর মানসিকতায় ও আচরণেও। বিশেষ ভাবে শিশু শিক্ষার্থীরা ঘর থেকে বের হতে না পারায় তাদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্থ হতে পারে। টিভি চ্যানেলগুলোতে সারাক্ষণ করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা প্রচার করায় ঘরের ভিতরের পরিবেশও হতাশাময়। কোথাও নেই আনন্দের ছোঁয়া। দুশ্চিন্তায় আছেন সারাক্ষন সন্তানের পিতামাতা।
গৃহবধু শামীমা আক্তারের তিন কন্যার মধ্যে বড় মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসি ষষ্ঠ শ্রেণিতে ও মেঝো মেয়ে জান্নাতুন নূর তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। করোনা জনিত পরিস্থিতিতে ঘরবন্দি থাকায় সারাক্ষণ মন মরা হয়ে থাকে। লেখাপড়ায় বসলেও মন বসাতে পারেনা। কিন্তু সবগুলো টিভি চ্যানেল পর্যায়ক্রমে অন্তত এক ঘণ্টা করে পাঠদান করলে সারাদিন কেটে যেত পড়ালেখায়। এতে পড়ালেখা নিয়েই শিক্ষার্থীরা ব্যস্ত সময় পার করতে পারতো বলে মনে করেন শামীমা।
শামীমা আক্তার বলেন, এ অবস্থায় জোর করে বাচ্চাদের পড়ানোও যাচ্ছেনা। দিনদিন ওদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে। টিভি চ্যানেলগুলো যদি পাঠদান করাতো তাহলে ওদের মন ভালো থাকতো।
আমরা জানি যে, বাংলাদেশের সব স্থানে স্যাটেলাইট নাই। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার স্কুল কলেজ শিক্ষার্থীদের জন্য সংসদ টিভির মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম ‘আমার ঘরে, আমার স্কুল’ চালু করেছে। এখানে প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা তা গ্রহন করতে পারছে না। যার কারণে অনেক জায়গায় অনেক শিশু বঞ্চিত হচ্ছে তাদের মৌলিক শিক্ষা থেকে। এমন অবস্থায় সরকার এবং এসব শিক্ষার্থীদের করনীয় কী ? এ পরিপ্রেক্ষিতে সিলেট প্রতিদিনের সাথে কথা বলছিলেন শিক্ষাবিদরা।
গাজী আব্দুল্লা হেল বাকী
ইংরেজি বিভাগ
সাবেক অধ্যাপক (অব :), লিডিং ইউনিভার্সিটি
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি একটি আপদকালীন অবস্থা। অবস্থার প্রেক্ষিতে সরকার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আপাতত বন্ধ করে দিয়েছে, যা এই সময়ে অত্যন্ত জরুরি। এই অবস্থায় অনলাইন শিক্ষাদান পুরোপুরি তথা শতভাগ কার্যকরী হওয়ায় কিছুনা কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্রথমত বাংলাদেশ ডিজিটাল দেশ হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রথমবারের মতো এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। দ্বিতীয়ত ছাত্রদের নিকট স্মার্ট ফোন থাকলেও অনেকের ল্যাপটপ বা কম্পিউটার নেই, বিশেষ করে যারা সূদুর গ্রাম অঞ্চলে বাস করে। অনেক স্থানে অনলাইন শিক্ষাদানের সুযোগ নেই, কাজেই মফস্বলের অনেক শিক্ষকরা অনলাইন সম্পর্কে শিক্ষাদান নিয়ে চিন্তিত। অধিকন্তু সেখানকার শিক্ষার্থীদের কথা ভাবা দরকার। মাদ্রাসা ও বিশেষ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যেখানে ব্যবহারিক শিক্ষা মূল প্রশিক্ষণ অপরদিকে তরুণ ছাত্র-ছাত্রীরা হোম কোয়ারেন্টাইন এ থাকলেও তারা এটাকে ছুটি মনে করে মোবাইল, ট্যাব ও ল্যাপটপে ফিল্ম, গেম ইত্যাদি দেখায় উৎসাহি হয়ে আছে। তাই উদ্যোগটি মহান হলেও, এবারের জন্য আশানুরূপ বা শতভাগ ফল পাওয়া যাবে বলে নিশ্চিত হওয়া যায়না।
সৈয়দ আলী আহমদ
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ
সব কাজ সরকার করবে কেনো? স্থানীয় প্রশাসন ও শিক্ষকেরা, ছাত্র ও অভিভাবকদের সংগে যোগাযোগ করে বাচ্চাদের পড়াশোনায় উৎসাহ দেবে। বন্যা ঘূর্ণিঝড় ও প্রাকৃতিক দূর্যোগ সময়ে জাতির বিকল্প প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন। এই সেটেলাইট শিক্ষা এক লুটপাটের মহোৎসব তৈরি করবে। শিক্ষার রাজনীতিকরন ও বাণিজ্যিকরণ ভালো ফল দেবেনা। শিক্ষাকর্মকর্তা শিক্ষকদের সংগে এবং শিক্ষকগন ছাত্রদের সংগে ফোনে ও ম্যাসেঞ্জারে যোগাযোগ করে পড়াশোনায় উৎসাহ ও সহযোগিতা প্রদান করতে পারেন। অভিবাবক গনকে বেশী সচেতন হতে হবে।
মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম
সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ
লিডিং ইউনিভার্সিটি, সিলেট
বর্তমান কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস স্তব্ধ করে দিয়েছে সারা বিশ্ব। বাংলাদেশে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। এমন অবস্থায় স্কুল কলেজ শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া নিয়ে তাদের পিতা মাতা আছে দুশ্চিন্তায়। ইতিমধ্যে সরকার সংসদ টিভির মাধ্যমে লেখাপড়া ব্যবস্থা করলেও, বঞ্চিত হচ্ছে প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষার্থীরা। সংসদ টিভি স্যাটেলাইট এর মাধ্যমে দেখানো হয়। এটি শহরাঞ্চলে থাকলেও গ্রামাঞ্চলে তা এখন আসেনি।যার কারণে প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছেলে মেয়েরা তা থেকে বঞ্চিত। এ ক্ষেত্রে সরকার বিটিভিতে এই কার্যক্রম সম্প্রচার করলে ভালো হয়।
প্রনব কান্তি দেব
সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ
সিলেট ইন্টারন্যশনাল ইউনিভার্সিটি
যেকোনো বড়ো পদক্ষেপ নিতে গেলে তার প্রভাব কী হতে পারে সেটা ভেবে চিন্তে নেয়া উচিত। যেখানে আমাদের দেশের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষ গ্রামে থাকেন সেখানে এ বিষয়টি গভীরভাবে ভাববার দরকার ছিল। স্যাটেলাইট চ্যানেলে কেন এরকম ‘ সবার জন্য শিক্ষার’ বিষয়টি যাবে। স্যাটেলাইট কী সবার জন্য? আমি নীতি নির্ধারকদের অনুরোধ করব, বিটিভিতে ফিরে আসার জন্য। তা না হলে আমাদের গ্রামে – গঞ্জে ছড়িয়ে থাকা অগনিত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সেবা থেকে বঞ্চিত করার দায় তাদের নিতে হবে এবং এ সিদ্ধান্ত অতি দ্রুত নিতে হবে।
কবি পুলিন রায়
মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার
সংসদ টিভির মাধ্যমে ক্লাস পরিচালনার এই উদ্যোগটি খুবই যুগোপযোগী একটি সিদ্ধান্ত। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে ঘরে থাকার এই সময়ে ঘরে বসে শিক্ষার্থীরা টিভিতে শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নিতে পারছে। এতে তারা ভীষণভাবে উপকৃত হচ্ছে এবং হবে। বিশ্বব্যাপী উন্নত ও মহাপরাক্রমশালী দেশসমূহ করোনার তা-বে আজ পুরোপুরি বিপর্যস্থ। মহাদুর্যোগের এই সময়ে আমাদের ঘরে থাকতেই হবে যে কোন ত্যাগের বিনিময়ে। আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকেও কোনো অবস্থায়ই ঘরের বাইরে দেওয়া যাবে না। তাই সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ সকলকে মেনে চলতে হবে। যদিও দেশের গ্রামেগঞ্জে এখন ডিশ লাইন চলে গেছে তবুও আপনাদের কথামতো বিটিভির মাধ্যমে শ্রেণিকার্যক্রম পরিচালনা করতে পারলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের আরো বেশি শিক্ষার্থীরাও উপকৃত হবে। আমার মনে হয় বিটিভি নেই এমন কোন গ্রাম আমাদের দেশে নেই। এছাড়া আমি সকল অভিভাবকের প্রতি অনুরোধ করবো, তারা যেনো তাদের সন্তানকে ঘরে থাকার ব্যাপারে এবং হাত ধোয়াসহ করোনা থেকে মুক্ত থাকার জন্য সরকারের নির্দেশনা মেনে চলার বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করেন। সাথে সাথে লেখাপড়া করার ব্যাপারে সন্তানকে আগ্রহী করে তোলার চেষ্টা করেন।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by Yellow Host