ঢাকা ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৮:৪৫ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৮, ২০২১
বিজয়ের কণ্ঠ ডেস্ক
ভারতে সেরাম ইনিস্টিটিউটের তৈরি কোভিশিল্ড ছাড়াও দ্বিতীয় যে কোভিড টিকা ব্যবহার করা হচ্ছে, সেই কোভ্যাকসিন যাতে বাংলাদেশেই তৈরি করা সম্ভব হয় এবং প্রয়োজনে তার ট্রায়ালও চালানো যায়- ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ঢাকার কাছে নতুন করে সেই অনুরোধ জানিয়েছে।
ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন এই অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে সম্প্রতি একটি ‘নোট ভার্বালে’ও (অনানুষ্ঠানিক কূটনৈতিক বার্তা) পাঠিয়েছে। দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে এ খবর।
কোভ্যাকসিনের ট্রায়াল ও উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশের কাছে ভারতের পক্ষ থেকে প্রথম অনুরোধ জানানো হয়েছিল গত ডিসেম্বরে। এখন আবার এপ্রিলে এসে একই অনুরোধ জানানো হলো। ভারতের বার্তায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ চাইলে যৌথ সহযোগিতায় বাংলাদেশের মাটিতেই কোভ্যাকসিনের উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তোলা যেতে পারে এবং সেই ‘মেইড-ইন-বাংলাদেশ’ ভ্যাকসিন ঢাকা যেমন নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারে, তেমনি চাইলে কিছু অংশ রফতানিও করতে পারে।
তবে দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া জানাচ্ছে, ভারত ইতোমধ্যে দুদফায় অনুরোধ জানানোর পরও বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে এখনও ইতিবাচক সাড়া মেলেনি।
কোভ্যাকসিন নিয়ে দ্বিধা?
দিল্লিতে ভারত সরকারের কর্মকর্তারাও ধারণা করছেন, কোভ্যাকসিন নিয়ে সম্ভবত বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে এখনও কিছুটা দ্বিধা ও সংশয় কাজ করছে। যে কারণে এ ব্যাপারে তাদের সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হচ্ছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানতে পেয়েছে।
বস্তুত গত জানুয়ারি মাসের ১৬ তারিখে ভারত যখন নিজ দেশে টিকাকরণ অভিযান শুরু করে, তখন কোভিশিল্ড ও কোভ্যাকসিন– এই দুটি ভ্যাকসিন দিয়ে সেই বিপুল কর্মকাণ্ড শুরু হলেও ভারতে কিন্তু তখনও কোভ্যাকসিনের ফেজ থ্রি ট্রায়াল শেষই হয়নি। বিরোধীদল কংগ্রেসসহ অনেকেই তখন প্রশ্ন তুলেছিলেন এই কোভ্যাকসিন আদৌ নিরাপদ বা কার্যকরী হবে?
মার্চের গোড়ায় অবশ্য কোভ্যাকসিনের নির্মাতা সংস্থা, হায়দারাবাদের কোম্পানি ভারত বায়োটেক জানায় যে তাদের তৈরি এই টিকা ৮১% ‘ইন্টারিম এফিকেসি’র (অন্তর্র্বতীকালীন কার্যকারিতা) প্রমাণ দিয়েছে। এরইমধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেও টিকা নেওয়ার জন্য কোভিশিল্ডের বদলে কোভ্যাকসিনকেই বেছে নেন।
মঙ্গলবার এক অনলাইন ব্রিফিংয়ে আমেরিকার শীর্ষ এপিডেমিওলজিস্ট এবং হোয়াইট হাউসের প্রধান মেডিক্যাল উপদেষ্টা ড. অ্যান্টনি ফাউচি জানান, এটা প্রমাণিত হয়েছে যে ভারতের এই কোভ্যাকসিন করোনাভাইরাসের অন্তত ৬১৭ রকম ভ্যারিয়েন্ট-কে ‘নিউট্রালাইজ’ বা প্রশমিত করতে সক্ষম।
ফলে তিনমাস আগের তুলনায় কোভ্যাকসিনের ‘আন্তর্জাতিক প্রোফাইল’ এখন অনেকটাই উন্নত। ভারত বায়োটেকের তৈরি এই টিকা নিয়ে সন্দেহ-সংশয় অনেকটাই দূর হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশও কোভ্যাকসিন নিয়ে একটা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবে বলেই ভারত আশা করছে।
দিল্লির সাউথ ব্লকে এক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার কথায়, ‘এই মুহূর্তে সেরাম ইনস্টিটিউট বিদেশে রফতানি বন্ধ রাখায় বাংলাদেশ যে টিকা-সংকটে পড়েছে তা থেকেও কিছুটা সুরাহা মিলবে যদি বাংলাদেশ নিজের দেশেই কোভ্যাকসিন উৎপাদন করতে পারে।’
এর আগে গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিলের পরিচালক মাহমুদ-উজ-জাহান আন্তর্জাতিক বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশে কোভ্যাকসিনের হিউম্যান ট্রায়াল চালানোর জন্য তারা ভারত বায়োটেকের কাছ থেকে একটি প্রস্তাব পেয়েছেন।
তখন আরও জানানো হয়েছিল, কাউন্সিলের এথিকস কমিটি বিষয়টির নানা দিক বিবেচনা করে সরকারের কাছে সুপারিশ পাঠাবে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ সরকারই নেবে। তারপর প্রায় এক শ’দিন কেটে গেলেও কাউন্সিলের এথিকস কমিটি এ ব্যাপারে কী সুপারিশ করেছে বা সরকারই বা কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা এখনও প্রকাশ্যে আসেনি।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by Yellow Host