সময় ঘনিয়ে : পছন্দের কেনাকাটায় ঈদবাজারে মানুষের ঢল

প্রকাশিত: ৮:১৪ অপরাহ্ণ, মে ১১, ২০২১

সময় ঘনিয়ে : পছন্দের কেনাকাটায় ঈদবাজারে মানুষের ঢল

নিজস্ব প্রতিবেদক
কাল বুধবারই বাংলাদেশের আকাশে দেখা মিলতে পারে পবিত্র ঈদুল ফিতরের চাঁদ। আর তা না হলে পরদিন বৃহস্পতিবার। সে হিসেবে ঈদ হতে পারে বৃহস্পতি অথবা শুক্রবার। আর সেই ঈদকে সামনে রেখে নতুন সব কালেকশন ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই ক্রয় করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ফ্যাশন প্রেমীরা। তারা মহামারি করোনাভাইরাসকে উপেক্ষা করে সিলেটের শপিংমল ও মার্কেটগুলোতে রীতিমত ভিড় করছেন। তাদের ভিড়ে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে হিমশিম খাচ্ছেন দোকানমালিকরা।

 

 

অন্যদিকে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সকল মার্কেট রাত ৮ টার মধ্যে বন্ধ করার নির্দেশনা থাকলেও তা মানছেন না ব্যবসায়ীরা। নগরের বেশিরভাগ মার্কেটেই খোলা থাকছে মধ্যে রাত পর্যন্ত।

 

 

দিনের সাথে পাল্লা দিলে রাতেও শপিং সেন্টারে আসছে সাধারণ মানুষ। রাত ১২টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নগরীর জিন্দাবাজার, কুমারপাড়া, নয়াসড়কসহ বিভিন্ন এলাকায় ক্রেতাদের প্রচণ্ড ভিড় দেখা গেছে। ঈদকে সামনে রেখে সেহরির আগ পর্যন্ত এমন জনসমাগম থাকবে বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা।

 

 

আজ মঙ্গলবার বিকেলে নগরের বিভিন্ন শপিংমল ও মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, দুপুরের পর থেকেই মানুষ মার্কেটমুখী হতে শুরু করছেন। বিকেল থেকে নগরের জিন্দাবাজার, বন্দর, চৌহাট্টা, নয়াসড়কসহ বিভিন্ন এলাকায় মানুষে লোকারণ্য হয়ে উঠে। নগরের এক মার্কেট থেকে আরোক মার্কেটে ঘুরে বেড়ানো মানুষের স্রোতে উধাও হয় স্বাস্থ্যবিধি। এছাড়া অনেকেই কোলের শিশুকে নিয়ে মার্কেটে মার্কেটে ঘুরছেন। মানুষের ভিড়ে শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষ কারো মুখেই নেই মাস্ক। নেই সামাজিক দূরত্ব। আর মার্কেটগুলোতে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখার কথা থাকলেও তাও নেই।

 

 

এদিকে মানুষের সমাগম কিছুটা কম থাকায় মির্জাজাঙ্গাল এলাকায় কিছুটা হলেও মানা হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। তবে ব্যস্ত এ বাজারেও কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা পরিচালনা করছে মির্জাজাঙ্গালের কাপড়ের দোকান ‘বিগবস’। মাস্ক ছাড়া কোন ভাবেই প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না ক্রেতাদের। সে হিসেবে সচেতন ক্রেতাদের আগ্রহও বেশি বলে দেখা গেছে।

 

 

ঈদবাজারে নগরে মানুষের চাপে স্বাস্থ্যবিধি উধাও হলেও করোনাভাইরাসে মৃত্যুর মিছিল থেমে নেই। সবশেষ ২৪ ঘণ্টায়ও সিলেটে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দুজনের মৃত্যু হয়। সব মিলিয়ে প্রাণঘাতী এ করোনাভাইরাসে সিলেট বিভাগের ৩৬৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।

 

 

এদিকে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলমান পরিস্থিতিতে মানুষ যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করছেন তাতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়বে।

 

 

আর পুলিশ বলছে, মানুষকে সচেতন করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তবুও বেশিরভাগ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। এজন্য মানুষের উদাসীনতাকেই দায়ী করছেন একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা।

 

 

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশে অতিরিক্ত উপ কমিশনার (মিডিয়া) বিএম আশরাফ উল্লাহ তাহের বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি বাস্তবায়নে নগরীতে প্রয়োজনীয়সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। আছেন সাধা পোশাকে পুলিশ সদস্যরাও। সাধারণ জনগণ ও ক্রেতা-বিক্রেতাদেরকেও স্বাস্থ্যবিধি পালনের আহ্বান করা হচ্ছে। এছাড়া সাধারণ পরিবহণ ও গণপরিবহণে স্বাস্থ্যবিধি এবং সরকারী নির্দেশনা মানা হচ্ছে কি না তার নজরদারি করছে ট্রাফিক বিভাগ।

 

 

আর বিভাগীয় পরিচালক, স্বাস্থ্য সিলেটের সহকারী পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রক) ডা. নূরে আলম শামীম বলেন, করোনাভাইরাসের এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে সচেতন থেকে ঈদ পালনের আহবান জানিয়েছেন। কিন্তু মানুষ কোনোভাবেই তা মানছেন না। চলমান ঈদ বাজারও তাই। সিলেটে মানুষের যে পরিমাণ ভিড় তাতে করোনা পরিস্থিতির কি হবে এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানলে করোনোভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যেত। কারণ চলমান বিধিনিষেধের ফলে সিলেটে সংক্রমণ কমে এসেছিল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতির পর কি হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। হয়তো ঈদের পরে এটি বলা যাবে

 

 

চলতি বছর করোনার সংক্রমণ বাড়ায় গত ৫ এপ্রিল থেকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত ঢিলেঢালা লকডাউন পালন হলেও সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ায় ১৪ এপ্রিল থেকে ‘কঠোর লকডাউন’ ঘোষণা করে সরকার। এদিকে, করোনার সংক্রমণ রোধে ‘লকডাউন’ তথা মানুষের চলাচলে বিধিনিষেধ আগামী ১৬ মে পর্যন্ত বাড়িয়ে বুধবার (৫ মে) এক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার।

 

 

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ‘করোনাভাইরাসজনিত রোগ (কোভিড-১৯) এর বিস্তার রোধে সার্বিক কার্যাবলী/চলাচলে বিধিনিষেধের সময়সীমা বর্ধিতকরণ’ বিষয়ে প্রজ্ঞাপনটি জারি করে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, দোকানপাট/শপিংমল আগের মতো সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। সব দোকানপাট ও শপিংমলে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে প্রতিপালন নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় দোকানপাট ও শপিংমল তাৎক্ষণিক বন্ধ করে দেওয়া হবে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর