ঢাকা ১২ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১১:৪৬ অপরাহ্ণ, জুন ৬, ২০২১
রফিক আহমদ
‘চিঠি এসেছে চিঠি’ ডাক পিয়নের এমন চিৎকার চেঁচামেচি এখনকার প্রজন্মের কাছে রূপকথার গল্প। ডাক বাক্স বিলুপ্ত হয়েছে অনেক আগেই। ডাকঘরের অস্তিত্বও নেই অনেক হাট-বাজারে। শুধুমাত্র কাগজে কলমে ডাকঘর উল্লেখ থাকলেও আদতে ডাকঘর কী তা জানে না এখনকার প্রজন্ম। ভার্চুয়াল যোগে ডাকঘর নামক ইতিহাস ঐতিহ্য প্রায় বিলীন হয়ে গেছে। যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ডাক চিঠি এখন আনকুঁড়ে বা ঠাকুরমার ঝুঁলির গল্পে স্থান করে নিয়েছে। আধুনিক যোগের পুরো অংশ জুড়ে এখন ভার্চুয়াল মাধ্যম। এই মাধ্যমে মানুষ এখন পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে সহজে যোগাযোগ করতে পারে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই। সুতরাং, পুরনো ডাক মাধ্যম অবহেলিত হওয়ারই কথা। তবে, কালের স্মৃতি বা ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে এই মাধ্যমগুলোকে সংরক্ষণ করা জরুরী বলে মনে করে সচেতন মহল।
জানা যায়, নিরাপদ লেনদেনের জন্য ডাকবিভাগের গুরুত্ব এখনও আকাশচুম্বি। চিঠিপত্র, পার্সেল, মনিওর্ডার, ইলেক্ট্রনিক্স মানি ট্রান্সফার, পোস্টাল ক্যাশ কার্ড, ডাক জীবন বীমা, সঞ্চয় ব্যাংক, পোস্টেজ ও রাজস্ব স্ট্যাম্প বিক্রয়সহ বহুমুখী সেবা প্রদানে এর কদর রয়েছে সর্বত্র। সেই লক্ষ্যে এই মাধ্যমটিকে আধুনিকায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার। সেমতে দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে এর কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। তবে এসব থেকে পিছিয়ে রয়েছে সিলেটের প্রধান ডাকঘর। আধুনিকতার ছোঁয়া বঞ্চিত এই ডাকঘরটির সেবাগ্রহীতাদের যেনো ভোগান্তির শেষ নেই।
ডাক তার ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীন মাঠ প্রশাসনে জেলা পর্যায়ের অফিস হলো বাংলাদেশ ডাক বিভাগ, সিলেট এর কার্যালয়। সিলেট নগরের বন্দরবাজার এলাকায় এর অবস্থান। একই ভবনে পরিচালিত হচ্ছে দুইটি প্রশাসনিক কার্যালয়। একটি হচ্ছে সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়, অপরটি হচ্ছে সিলেট প্রধান ডাকঘর।
ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল হচ্ছেন সিলেট বিভাগীয় অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা। একটি প্রধান ডাকঘর ২১টি উপজেলা ডাকঘর, ৫৮টি উপ ডাকঘর, ৩৩৪ টি শাখা ডাকঘর ও ৭ টি ইডি উপ ডাকঘর নিয়ে এর প্রশাসনিক এলাকা।
সিলেট প্রধান ডাকঘরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হচ্ছেন সহকারী পোস্টমাস্টার জেনারেল। সিলেট প্রধান ডাকঘর, ২১টি টাউন সাব পোস্ট অফিস ও ১৩টি শাখা ডাকঘর ও ২টি ইডি উপ ডাকঘর নিয়া এর প্রশাসনিক এলাকা। উভয় প্রশাসনের অধীনস্থ অফিস গুলির মাধ্যমে চিঠি পত্র, পার্সেল, মনিওর্ডার, ইলেক্ট্রনিক্স মানি ট্রান্সফার, পোস্টাল ক্যাশ কার্ড, ডাক জীবন বীমা, সঞ্চয় ব্যাংক, পোস্টেজ ও রাজস্ব স্ট্যাম্প বিক্রয় সহ বহুমূখী সেবা প্রদান করা হয়।
সরকার ডাক বিভাগকে আধুনিকায়নের নানামুখী পদক্ষেপ নিলেও সিলেটে এর কোনো ছোঁয়া লাগেনি। নগরের বিভিন্ন রাস্তার পাশে অযত্ন-অবহেলায় ডাকবাক্সগুলো পড়ে রয়েছে। কোনোটা জরাজীর্ণ আবার কোনোটির তালা নেই। সরকারি এ সম্পদ রক্ষায় সংশ্লিষ্ট বিভাগের যেন কোনো গরজ নেই। দায়সারা গোছের কার্যক্রমের কারণে বিভাগটির সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সিলেট অঞ্চলের সেবাপ্রত্যাশীরা।
এদিকে প্রযুক্তির প্রভাবে ডাক বিভাগের কার্যক্রম বদলে গেলেও এখনও সারা দেশে রয়েছে ডাকঘর। নিয়মিত কর্মকর্তা-কর্মচারীও রয়েছেন। বিশাল জনবল এবং অবকাঠামোসমৃদ্ধ এ বিভাগকে এখন আর শুধু চিঠি ও পার্সেল আদান-প্রদান এবং মানি অর্ডার জাতীয় কার্যক্রমের মাধ্যমে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে বাংলাদেশ ডাক বিভাগেও নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা পরিবেশে দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন এ ডাকঘরের কর্মকর্তারা। ডাকঘরের প্রধান ফটকে তাদের নিয়মিত সেবা, ব্যাংকিং সেবা, ইলেকট্রনিক সেবা ও ডিজিটাল সেবার বিভিন্ন নাম লেখা থাকলেও যার বেশির ভাগ অনুপস্থিত। তার মধ্যে তথ্য-প্রযুক্তির যুগের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার ইলেকট্রনিক ও ডিজিটাল সেবা, যা তাদের সেবাগুলোর মধ্যে লেখা থাকলেও এখনো পরিপূর্ণ ভাবে সকল সেবা কার্যক্রম চালু হয়নি। কোনো রকম সেবা বোর্ডে নাম লিখে দায় সারছে ডাকঘর।
জনৈক ব্যক্তি বলেন, ডাকবাক্সে চিঠি ছাড়া হোক বা না হোক, ডাকবাক্সগুলো যদি সংরক্ষণে রাখা যায় তাহলে আমাদের প্রজšে§র কাছে ‘কালের সাক্ষী নয়, বরং এটি আমাদের ঐতিহ্য’ সে বিষয়টি তুলে ধরতে পারব। আর যদি প্রযুক্তির দোহাই দিয়ে এ থেকে সংশ্লিষ্টরা মুখ ফিরিয়ে নেন, তাহলে টরে-টক্কার সেই টেলিগ্রাফ যন্ত্রের (তারবার্তা) মতো স্মৃতির জাদুঘরে বাক্সগুলোর ঠাঁই হয়, বিস্মৃত হয়ে যায় ব্যক্তিগত চিঠির ইতিহাস, তাহলে নতুন প্রজন্মের কাছে আমাদের দায়বদ্ধতা থেকে যাবে।
প্রধান ডাকঘরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিলেট নগরের উন্নয়ন কাজের জন্য অনেক ডাকবাক্স ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবার কিছু স্থান থেকে ডাকবাক্স উঠিয়ে রাখা হয়েছে। কাজ সম্পন্নের পর যথাস্থানে সেগুলো আবার বসানো হবে।
ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল সুজিত চক্রবর্তী বলেন, ‘ডাক বিভাগকে ঢেলে সাজাতে সরকারের পদক্ষেপ ইতিবাচক। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে ডাক বিভাগে এসেছে নানা পরিবর্তন। আমরা এসব বাস্তবায়নে যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। তালা খোলা ও লাগানোসহ ডাকবাক্স সংরক্ষণের জন্য লোক নিয়োজিত আছে। ডাক বিভাগের কোনো সম্পদের ক্ষতি হোক, এটা আমাদের কাম্য নয়।’ ডাক সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌছে দিতে শীঘ্র ভ্রাম্যমাণ ডাকঘর ব্যবস্থা চালু হবে। তিনি জানান ব্যক্তিগত চিঠিপত্র কমে গেলেও সরকারী ও প্রাতিষ্ঠানিক চিঠি প্রেরণের হার বেড়েছে। আমাদের জনবল কম থাকলেও সেবা প্রদানের কোন বিঘ্ন ঘটছে না।
তিনি আরো জানান, নগরীর শিবগঞ্জস্থ সিলেট প্রধান ডাকঘর কর্মকর্তাদের থাকার ভবনটি অনেক আগেই ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করার হলেও এখন পর্যন্ত নতুন ভবন তৈরীর কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তাই আমার নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by Yellow Host