ঢাকা ১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৪:০৭ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২০, ২০২১
বিশেষ সংবাদদাতা, শ্রীমঙ্গল
শনিবার রাত সাড়ে আটটায় একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে৷ সেই ভিডিওতে দেখা যায় মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল শহরের কলেজ রোডের পাশে পড়ে এক যুবক কাতরাচ্ছেন, তার পেটে একটি ছোরা বিদ্ধ!
ছোরাবিদ্ধ অবস্থায়ই ওই যুবক নিজের নাম শরীফ বলে জানান। তার বন্ধু সজীব তাকে ছুরি মেরে পালিয়েছেন বলেও জানান তিনি৷ তাৎক্ষনিকভাবে সেখানে ছুটে আসে পুলিশের একটি দল৷ সেখান থেকে ওই যুবককে নিয়ে যাওয়া হয় শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক শরীফকে মৃত ঘোষণা করেন৷
এরপর শুরু হয় অভিযুক্তকে ধরতে পুলিশের অভিযান। প্রথমেই পুলিশ শরীফের মুঠোফোন ঘেঁটে সজিবের নাম্বার বের করে৷ সেই নাম্বারের সূত্র ধরে শুরু হয় অনুসন্ধান৷ ঘটনার পরপরই সজীব তার ব্যবহৃত মুঠোফোনটি বন্ধ করে দেন। কিন্তু পুলিশ তার সর্বশেষ অবস্থান ট্র্যাক করতে সক্ষম হয়৷
সেই সূত্র ধরেই বিভিন্ন জায়গায় চালানো হয় অভিযান৷ শ্রীমঙ্গলের সহকারী পুলিশ সুপার শহীদুল হক মুন্সীর নেতৃত্বে শ্রীমঙ্গল থানার ওসি আব্দুছ ছালেক ওসি (তদন্ত) হুমায়ুন কবীর ও ওসি (অপারেশন) নয়ন কারকুন আলাদা আলাদা দলে ভাগ হয়ে শুরু করেন অভিযান৷ শ্রীমঙ্গলের বাসস্ট্যান্ড,সিএনজি স্ট্যান্ড ও রেলওয়ে স্টেশনকে পুরোপুরি কর্ডন করে ফেলা হয়৷
এর মধ্যেই খবর আসে ঘাতক সজীব ট্রেনযোগে পালানোর চেষ্টা করতে পারেন। তাৎক্ষনিক পুলিশের একটি দল শ্রীমঙ্গল স্টেশনে হানা দেয়। কিন্তু সেখানেও পাওয়া যায় নি সজীবকে৷
এর মধ্যে গণমাধ্যমের কাছে আসে শহরের একটি আবাসিক হোটেলের একটি ফুটেজ। সেখানে দেখা যায় নিহত শরীফ ও অভিযুক্ত সজীব একসাথে একই কক্ষে রয়েছেন৷ তবে বিকেল তিনটা ২০ মিনিটে রুম নেয়ার পরপরই বিকেল চারটার দিকে দুজন একসাথে হোটেল থেকে বেরিয়ে যান৷ এই ভিডিওচিত্রের খবর পুলিশকে জানান ওই হোটেল ম্যানেজার। পুলিশ তাৎক্ষনিক এসে ফুটেজ সংগ্রহ করে এবং তারা দুজন যে রুমে কিছুসময় ছিলেন সেখানে তল্লাশী চালায়৷ ইতিমধ্যে পুলিশের কাছে আরেকটি তথ্য আসে, নিহত ও খুনীর মধ্যে ঘটনার দিন বিকেলে একটি পেট্রল পাম্পের সামনে ঝগড়া হয়৷ সেই তথ্যও বিশ্লেষন ও অনুসন্ধানে নামে পুলিশ৷ প্রাথমিকভাবে পুলিশ ধারণা করেছিলো দুই বন্ধুর মধ্যে অন্তর্কলহ থেকে এই হত্যাকান্ড৷
নিহত শরীফের একাধিক আত্নীয় স্বজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে- শরীফ তার নিজের বাসায় থাকতেন না৷ বিভিন্ন সময়ে সে শহরের বিভিন্ন হোটেলে অবস্থান করতেন৷ তারপর অভিযুক্ত সজীবের আত্নীয় স্বজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সজীব কোথায় যেতে পারে সেটা নিয়ে অনুসন্ধান চালাতে থাকে পুলিশ। পাশাপাশি শহর থেকে বের হওয়ার সকল রাস্তায় বসানো চেকপোস্ট গুলোতে বাড়ানো হয় নজরদারি৷ অবশেষে সোমবার ভোরে সেই পাতা ফাঁদে পা দেয় সজীব৷
শ্রীমঙ্গল থেকে ট্রেনযোগে পালানোর সময় রেলস্টেশন থেকে পুলিশের হাতে আটক হয় সজীব৷ পুলিশের ৩১ ঘন্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানের সনাপ্তি ঘটে এখানেই৷
শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (এসি) নয়ন কারকুন জানান, শরীফ খুনের ঘটনায় তার মা দেলেয়ারা বেগম বাদী হয়ে ঘটনার রাতেই সজীবের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন৷ সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই সোমবার ভোরে আমরা সজীবকে আটক করতে সক্ষম হই। তাকে আদালতে প্রেরণ করেছি৷
এদিকে আদালত সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত সজীব আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন৷ সেখানে তিনি বলেছেন- শরীফ তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি নিয়েছিলো। কিন্তু ঘটনার দিন একাধিকবার বলার পরও শরীফ মোবাইলটি ফেরত দেননি। পাশাপাশি তার কাছে কিছু টাকা চাইলেও শরীফ তা দিতে রাজী না হওয়ায় বন্ধুকে খুন করেন শরীফ৷
এদিকে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নিহত এবং অভিযুক্ত দুজনই চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী৷ তাদের দুজনের নামেই থানায় মাদক আইনে মামলা রয়েছে।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by Yellow Host