ঢাকা ১৬ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৮:৩৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৮, ২০২৫
লুৎফুর রহমান শাওন, ছাতক
সুনামগঞ্জের ছাতকে সানুর মিয়া (৪৮) নামের এক লম্পট কর্তৃক মানসিক ভারসাম্যহীন নারিকে প্রকাশ্যে মারধরের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে বেশ আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। ১ মিনিট ১৩ সেকেন্ড ও ৫৮ সেকেন্ডের পৃথক দুটি ভিডিওতে লাঠি দিয়ে এবং পানিতে ফেলে মানসিক ভারসাম্যহীন নারীকে নির্যাতনের দৃশ্য কঠিন হৃদয়কেও নাড়া দেবে। এসব অন্যায় করেও রহস্যজনক কারণে পুলিশ প্রশাসন তার বিরুদ্ধে আইনী কোন প্রদক্ষেপ গ্রহণ করছে না।
বিষয়টি অত্যন্ত দু:খ জনক বলে সচেতন মহল মনে করছেন। এই লম্পট শুধু ওই মানসিক ভারসাম্যহীন নারীকে মারধর করে ক্ষান্ত হয়নি, নিজের ঘরে আটকে রেখে ধর্ষণ করেছেন বলেও এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে।
সরজমিন ঘুরে গ্রামের লোকজনের সাথে আলাপকালে জানা যায়, উপজেলার দক্ষিন সীমান্তের ভাতগাঁও ইউনিয়নের শ্রীপতিপুর গ্রামের মৃত ঠাকুর মিয়ার চরিত্রহীন লম্পট ছেলে সানুর মিয়া গেল ৩ জানুয়ারি সকালে পার্শ্ববর্তী জগন্নাথপুর উপজেলার কলকলিয়া এলাকা থেকে ২৮-৩০ বছর বয়সী মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারীকে তার গ্রামে নিয়ে আসে। গ্রামের পশ্চিমের জঙ্গলে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন। গ্রামের কিছু লোক বিষয়টি দেখে ফেলায় সে ওই নারির বিরুদ্ধে মোবাইল চুরির অপবাধ তুলে প্রকাশ্যে লাঠি দিয়ে মারধর এবং মাথার চুলে ধরে টানা হেঁচড়াসহ শ্লিলতাহানী ঘটায়। বাঁধা দিয়ে নারীকে বাঁচাতে না পেরে এ নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করেন গ্রামের জনৈক ব্যক্তি। এক মিনিট ১৩ সেকেন্ডের নির্যাতনের এক ভিডিওতে দেখা গেছে প্রায় বিবস্ত্র নারীকে লাঠি দিয়ে মারধর করছে। মাঝে মধ্যে মাথার চুলে ধরে টানা হেঁচড়া করছে ওই লম্পট। তখন জনৈক ব্যক্তিসহ তার ১১ বছর বয়সী কন্যাও বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করছেন কিন্তু সে তা মানছে না, টানা নির্যাতন করে যাচ্ছে। এর কিছু সময় পর গ্রামের পাশ দিয়ে যাওয়া ডাউকা নদীর পানিতে ফেলে ওই মানসিক ভারসাম্যহীন নারীকে লাঠি ও হাত দ্বারা পিঠাচ্ছে সানুর মিয়া। প্রাণে মারার জন্য মাঝে মধ্যে সে ওই নারীকে পানিতে ডুবাচ্ছে।
গ্রামের হাফিজ সুলতান আল মনসুর বলেন, সানুর মিয়া কর্তৃক পাগলির সাথে যে অন্যায় করা হয়েছে এটি দুঃখজনক। স্থানীয় প্রশাসন আইনের মাধ্যমে এর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি দাবি জানান।
গ্রামের রুকন মিয়া বলেন, তিনি সরাসরি ঘটনা দেখেননি, ভিডিওতে দেখেছেন। সুষ্ঠ বিচারের জন্য গ্রামবাসীর প্রতি তিনি জোর দাবি জানান।
তাজ উদ্দিন বলেন, সরাসরি তিনি না দেখলেও বিভিওতে নারীকে নির্যাতন দেখেছেন। শুধু তিনি নয়, গ্রামের প্রতিটি মানুষ এ নির্যাতনের বিষয়টি কম বেশি জানেন।
মোহাম্মদ কিবরিয়া ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ভিডিওতে যা দেখেছেন যা অত্যন্ত নিকৃষ্টতম ঘটনা।
গ্রামের মুরব্বি আবদুল বারিক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, গেল শুক্রবার আছরের পর ডাউকা খালের পশ্চিম পারে তিনি গিয়ে দেখেন বিবস্ত্র করে একজন মহিলাকে মারধর করছে সানুর মিয়া। তিনি বাঁধা দিয়েছেন কিন্তু কথা শুনেনি সানুর। এসময় গ্রামের লোকজন চারদিকে জড়ো ছিলেন।
গ্রামের জামে মসজিদের মোতাওয়াল্লী জাহের আলম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিবস্ত্র অবস্থায় ওই মহিলাকে তিনি মসজিদের ওযুখানার ওপর দেখেন। মহিলার পিঠে মারধরের চিহ্নসহ রক্ত ঝরা অবস্থায় দেখে তিনি অন্য মহিলার মাধ্যমে মসজিদ থেকে ওই মহিলাকে বের করে কাপড় পরিধান করানোর চেষ্টা করান। কাপড় পরিধান না করে সে গ্রামের পশ্চিম দিকে চলে গেছে। নির্যাতনকারীর বিরুদ্ধে শক্তভাবে বিচারের জন্য গ্রামের মুরব্বিরা চেষ্টায় আছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
এছাড়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রাম ও আশপাশ এলাকার অনেক লোকজনরা জানিয়েছেন, সানুর মিয়া একজন চরিত্রহীন মানুষ। মাদকাসক্ত প্রায় সময় থাকে। মানসিক ভারসাম্যহীন এই নারীকে সে ওইদিন সকালে কলকলিয়া এলাকা থেকে এনে গ্রামের পশ্চিমের জঙ্গলে ধর্ষণ করে। বিষয়টি লোকজন আঁচ করতে পারায় পরে মোবাইল চুরির অপবাধ দিয়ে ওই নারীকে বিবস্ত্র করে সে প্রকাশ্য মারধর করেছে। পানিতে ফেলে ডুবিয়ে মারাও চেষ্টা করেছে। ওই দিন মাগরিবের আগে ওই নারীকে তার বসতঘরে কয়েক ঘন্টা আটক রেখে ধর্ষণ করেছে। রাত ৪টার দিকে সীমান্তের ব্রিজের ওপারে জুগলনগরে বিবস্ত্র অবস্থায় পেয়ে ওই নারীকে লোকজন কাপড় পরিধান করে দিয়েছেন অন্য গ্রামের মানুষ। এ ঘটনা নিয়ে এলাকায় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। শুধু তাই নয়, এই সানুর মিয়ার কাছে গ্রামের মানুষ অসহায়। ভয়ে তার বিরুদ্ধে মানুষ কিছু বলার সাহস পায় না। প্রশাসনকেও বৃদ্ধাগুলী দেখিয়ে কু কর্ম করে এলাকায় বেড়াচ্ছে। মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে সে একাধিকবার কারাগারে গেলেও জামিনে এসে ফের অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়ে। নিজের দুই কন্যাও তার কু-কর্ম থেকে রেহায় পায়নি। চার বিয়ে করলেও কোন স্ত্রী সন্তান তার সাথে ঘৃনায় থাকছে না। সম্ভ্রম হানীর ভয়ে তার উপযুক্ত মেয়েরাও মায়ের সাথে থাকছেন নানা বাড়িতে।
এ বিষয়ে জাউয়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ আবদুল কবির বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
ছাতক-দোয়ারাবাজারের সহকারী পুলিশ সুপার রণজয় চন্দ্র মল্লিকের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by Yellow Host