আলী আমজদ নুনু তৃণমূল ফুটবলের উজ্জ্বল নক্ষত্র

প্রকাশিত: ৯:৫২ অপরাহ্ণ, জুলাই ৩, ২০২৫

আলী আমজদ নুনু তৃণমূল ফুটবলের উজ্জ্বল নক্ষত্র

হারুন রশিদ, ওসমানীনগর
বিশ্ব ক্রীড়া সাংবাদিক দিবসে বিএসপিএ সিলেটের সম্মাননা পেলেন তৃণমূল ফুটবলের উজ্জ্বল নক্ষত্র ওসমানীনগর তাজপুরের সন্তান আলী আমজদ নুনু।
বুধবার (২ জুলাই) বিশ্ব ক্রীড়া সাংবাদিক দিবস। এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএসপিএ) সিলেট শাখার ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগের অংশ হিসেবে সম্মাননা জানানো হয় স্থানীয় ক্রীড়াবিদ ও সংগঠকদের। ফুটবলের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সম্মাননা প্রদান করা হয় তৃণমূল ফুটবলে অসামান্য অবদান রাখা আলী আমজদ নুনু, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টনে আলো ছড়ানো দু’জন জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের কোচ ও সিলেটে সন্তান একেএম মাহমুদ ইমন, জাতীয় ব্যডমিন্টন দলের কোচ ও সিলেটের সন্তান শিব্বির আহমদ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজা ই রাফিন সরকার। বিশেষ অতিথি ছিলেন সিলেট জেলা ক্রীড়া অফিসার নূর হোসেন, সিলেট প্রেসক্লাব সভাপতি ইকরামুল কবির, জেলা প্রেসক্লাব সভাপতি মঈন উদ্দিন এবং সিলেট আম্পায়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আশরাফ হোসেন আরমান প্রমূখ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, আলী আমজদ নুনুর মতো সংগঠকরা মাঠ পর্যায়ে খেলাধুলার ভিত্তি গড়ে তোলেন। তাঁদের নিঃস্বার্থ অবদানই দেশের ভবিষ্যৎ ক্রীড়াবিদদের পথচলা সুগম করে। তৃণমূল পর্যায়ে ফুটবলের উন্নয়নে আলী আমজদ নুনুর অবদান অনন্য। নিজের মেধা বুদ্ধি সময় শ্রম দিয়ে বছরের পর বছর ধরে কাজ করে চলেছেন ভবিষ্যতের ফুটবল তারকা তৈরিতে।
তৃণমূলের ক্রীড়াঙ্গনে নুনুর অবদান অবিস্মরণীয়। তিনি কখনও মিডিয়ার আলোয় আসার চেষ্টা করেননি, বরং নিরবে-নিভৃতে কাজ করে গেছেন ছোটদের নিয়ে। গ্রামগঞ্জের অজপাড়াগাঁ থেকে প্রতিভা খুঁজে এনে ফুটবলের মৌলিক শিক্ষা দিয়ে গড়ে তুলেছেন অনেক ফুটবলার। তৃণমূল ফুটবলের অন্যতম প্রতিনিধি। তাঁর ফুটবল ক্যারিয়ারের সূচনা ১৯৯৮ সালে। স্মৃতি ক্লাব থেকে শুরু করে সিলেট টাউন ক্লাব, ঢাকা স্পোর্টস কোয়ালিটি, রামপুরা ক্রীড়া চক্র এবং উত্তর বারিধারার মতো ক্লাবে খেলেছেন তিনি। তৃতীয় ও প্রথম বিভাগ লিগে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা থাকলেও এক পর্যায়ে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় বাধা পড়ে তাঁর পেশাদার ক্যারিয়ারে। তবে ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা থেমে থাকেনি।
২০১২ সালে প্রয়াত ক্রীড়া সংগঠক জামাল উদ্দিনের উৎসাহে গড়ে তোলেন ‘নুনু ফুটবল একাডেমি’। আজ সেই একাডেমি শুধু ওসমানীনগরের গর্ব নয়, গোটা সিলেট তথা দেশের তৃণমূল ফুটবলের জন্য একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। একাডেমিটি ২০২১ সালে বাফুফের ওয়ান স্টার এবং ২০২৫ সালে টু স্টার স্বীকৃতি লাভ করে। এখান থেকে শত শত খেলোয়াড় দেশের বিভিন্ন পর্যায়ে, এমনকি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টেও অংশ নিয়েছেন। ভারতের শিলচর, হাফলং, ধর্মনগর ও করিমগঞ্জের মতো স্থানে একাডেমির অংশগ্রহণ ছিলো সিলেটবাসীর জন্য বড় গর্বের বিষয়। শুধু খেলোয়াড় নয়, এখান থেকে উঠে এসেছে কোচ, রেফারি ও সংগঠকরাও। নুনু ফুটবল একাডেমির কার্যক্রম আরও সুশৃঙ্খল করতে গঠন করা হয়েছে একটি পরিচালনা কমিটি। এতে বিভিন্ন গ্রামের প্রতিনিধি ছাড়াও প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন অনেক গুনীজনরা।
নুনু শুধু একজন ফুটবলার ও সংগঠক নন, তিনি একজন অভিভাবক, একজন দিকনির্দেশক। তার হাত ধরেই অনেক কিশোর প্রথম ফুটবল মাঠে নামার সাহস পেয়েছে। এবং জাতীয় পর্যায়ে অনেক সুনাম অর্জন করেছে। নিজ খরচে বিভিন্ন সহযোগিতায় বুট-জার্সি ও প্র্যাকটিসের ব্যবস্থার পাশাপাশি খেলোয়াড়দের জন্য বিভিন্ন সময় আর্থিক অনুদান ও দিয়ে আসছেন নুনু। তার মতো নিবেদিতপ্রাণ সংগঠকদের সম্মান জানানো মানে ক্রীড়ার শিকড়কে সম্মান জানানো। তৃণমূলেই জন্ম হয় জাত তারকার, আর সেই তারকা খুঁজে আনার কারিগরদের উৎসাহিত করা না গেলে ক্রীড়াঙ্গনের বিকাশ হবে না। খেলাধুলাকে এগিয়ে নিতে, সমাজকে গড়তে ক্রীড়া প্রেমিকদের এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকল অতিথির প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বক্তারা।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর