ঢাকা ৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০:১২ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২, ২০২৫
তৌফিকুর রহমান তাহের, সুনামগঞ্জ
সুনামগঞ্জ শাল্লায় গিরিধর উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ দখলে নিয়েছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গত তিনবছর ধরে সড়কের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন বালু, পাথর রেখে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত করে খেলার মাঠটি দখলে নিয়েছিল ঠিকাদার। সড়কের মালামাল রেখে বিদ্যালয়ের খেলার মাঠটিকে খেলাধুলার অনুপযোগী করে ফেলে রেখে গেছে। বছরের পর বছর সড়কের বালু, পাথর রাখার কারণে মাঠ এখন খেলাধুলার জন্য বিপদজনক হয়ে পড়েছে। গত জুন মাসে মাঠে ভিটবালু ফেলে খেলাধুলার উপযোগী করে দেয়ার কথা থাকলেও, কথা রাখেনি সড়কের পুনর্র্নিমাণ কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারের লোকজন।
এমনকি শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে উল্টো আবারও দু’বছরের জন্য মালামাল রাখতে এলাকায় মাইকিং করে অভিভাবক সভার আয়োজন করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সভায় মাঠ সংস্কারের কথা না বলে আবারও মাঠে মালামাল রাখার দাবি করে বসেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এনিয়ে ২৬জুলাই গিরিধর উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি ক্লাস রুমে সভায় চলে পক্ষে-বিপক্ষে তুমুল বিতর্ক। এক পর্যায়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন বলেন আমরা দু’বছর পর আড়াই লাখ টাকা দিব। কিন্তু অভিভাবকদের পক্ষে কেউ একজন প্রস্তাব করেন পাঁচ লাখ টাকার। পরে এনিয়ে একটি বোর্ড গঠনও করা হয়। বোর্ডেও ৫লাখ টাকার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। কিন্তু ঠিকাদারের লোকজন পাঁচলাখ টাকা দিতে রাজি হয়নি। বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ নিয়ে এমন দরকষাকষি চলতে থাকে। ফলে ওই সভায় দু’বছরের জন্য মাঠ ভাড়ার বিষয়ে উভয় পক্ষই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি।
এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা নিজ উদ্যোগে মাঠ সংস্কারে নেমে পড়েন। সরেজমিনে দেখা যায়, ১আগস্ট সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উড়া-কোদাল নিয়ে গিরিধর উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে বালু, পাথর সরানোর কাজ করছেন দিনব্যাপী। তারা নিজেরা কাজে হাত লাগানোর পাশাপাশি নয়জন শ্রমিকেও কাজে লাগান। দুপুরের খাবারও তাদেরকে খেলার উন্মুক্ত মাঠেই খেতে দেখা যায়। বিকেলে তারা আনন্দপুর বাজার থেকে ১২শ’ টাকার বাঁশ এনে গোলপোস্টও তৈরি করে ফেলেন। দিনব্যাপী উৎসাহ উদ্দীপনার নিয়ে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলার মাঠকে সংস্কার কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। শিক্ষার্থীরা জানান এক সপ্তাহ তারা প্র্যাকটিস করবে। এরমধ্যে মাঠটিকে আরও সংস্কার করতে চায় তারা। কারণ, মাঠে ড্রামট্রাক দিয়ে মালামাল নেয়ার সময় অনেক গর্ত হয়ে গেছে। এসব ঠিক করতে কিছু বালুর প্রয়োজন। সপ্তাহখানেক পরে তারা একটি টুর্নামেন্টের আয়োজন করবে বলে জানা গেছে।
এব্যাপারে সিলেট জজকোর্টের আইনজীবী সুব্রত দাশ বলেন খেলাধুলা শিক্ষার অবিচ্ছেদ্য অংশ খেলাধুলা শিক্ষার সাংর্ঘষিক নয়। বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ ইজারা দেয়ার জন্য নয়, এটি শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জন্য। খেলার মাঠ নিয়ে যেন কোন বাণিজ্য না হয়। একারণে শিক্ষার্থীরা নিজ উদ্যোগে মাঠ সংস্কারের ডাক দিয়েছে। আমিও তাদেরকে সহযোগিতা করার জন্য সিলেট থেকে আজ এসেছি। তারা আজ গোলপোস্টও তৈরি করেছে। মাঠে আমিও তাদের সহযোগিতা করেছি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যেন দ্রুত মাঠ সংস্কার করে দেয়। যেনতেনভাবে নয়, মাঠকে মাঠের মত করে দিতে হবে। এখন সংস্কার না করলে ৭লাখ টাকার দাবি জানান তিনি। মাঠ সংস্কারের যাবতীয় খরচ বহন করেন অ্যাডভোকেট সুব্রত দাশ। অন্যদিকে মাঠ সংস্কারের সময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনন্দ মোহন চৌধুরী শিক্ষার্থীদের চা-বিস্কুটও খেতে দেন।
এবিষয়ে পুনর্র্নিমাণাধীন দিরাই-শাল্লা মহাসড়কের ম্যানেজার সুখরঞ্জন ওরফে কালা বাবু বলেন হেমন্ত সৃজনে মাঠ সংস্কারের চেষ্টা করবে তারা। কারণ, এখন ভিটবালু পাওয়া যাচ্ছেনা।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিয়াস চন্দ্র দাস বলেন শিক্ষার্থীরা আমার কাছে মাঠে খেলাধুলা করার জন্য এসেছিল। তাদেরকে বলেছি তোমরা যদি খেলাধুলা করতে চাও-তাহলে বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ কাউকে ব্যবহার করতে দেব না। আমি তাদেরকে খেলাধুলা করার জন্য একটি ফুটবলও দিয়েছি। আমি ঠিকাদারকে বলব দ্রুত সময়ের মধ্যে মাঠটিকে খেলাধুলার উপযোগী করে দেয়ার জন্য।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by Yellow Host