ছাতকে শিক্ষার্থী হেনস্তা : অভিযুক্ত সেই মাদ্রাসা শিক্ষক নির্দোষ প্রমাণিত

প্রকাশিত: ৭:২৩ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৩১, ২০২৫

ছাতকে শিক্ষার্থী হেনস্তা : অভিযুক্ত সেই মাদ্রাসা শিক্ষক নির্দোষ প্রমাণিত

লুৎফুর রহমান শাওন, ছাতক
সুনামগঞ্জের ছাতক পৌর শহরের তাতিকোনা হাবিবউল্লাহ জামেয়া ইসলামিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক হাফেজ মো. আলী হোসেনকে এক শিক্ষার্থীর ওপর শারীরিক হেনস্তার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়।
মামলার এজহারে উল্লেখ আছে, ১৫ জুন’২৫ দুপুরে মাদ্রাসার বাথরুমে এক শিক্ষার্থীর ওপর শারীরিক হেনস্তার অভিযোগ উঠে হাফেজ মো. আলী হোসেনের বিরুদ্ধে। পরবর্তী দিন, ১৬ জুন’২৫ রাত ৮টার দিকে, বাদী এবং ১৫০-২০০ জন লোক বিভিন্নভাবে মাদ্রাসা এলাকায় উপস্থিত ছিলেন।
এর মধ্যে প্রায় ১৫-২০ জন লোক মাদ্রাসার অফিস কক্ষে প্রবেশ করে শিক্ষককে মারধর করেন এবং মাদ্রাসার অফিস কক্ষ তছনছ করেন। এরপর, কল দিয়ে পুলিশকে অবগত করা হলে ছাতক থানার এসআই আখতারুজ্জামানসহ পুলিশ ফোর্স ঘটনাস্থলে পৌঁছে শিক্ষককে আটক করেন। বাদী ওইদিন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এর ৯(১) ধারায় মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-১৯, তারিখ-১৭ জুন ২০২৫)।
থানার এসআই (নিঃ) মো. সোহেল রানা খন্দকার মামলার তদন্তভার পান।
গ্রেফতারের পরে (২২ জুলাই’২৫) বাদ মাগরিব মাদ্রাসার হলরুমে অনুষ্ঠিত হয় এক প্রতিবাদ সভা। সভায় সভাপতিত্ব করেন মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দিন তালুকদার এবং সঞ্চালনা করেন শিক্ষক হাফেজ হাবিবুর রহমান।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ছাতক জালালিয়া কামিল (এম.এ) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল আহাদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন আরবি প্রভাষক মাওলানা আলী আজগর খান ও মতিনিয়া শহিদিয়া হুফ্ফাজুল কুরআন বোর্ডের সভাপতি মাওলানা আব্দুল গফ্ফার আল হাসান।এছাড়া স্থানীয় আলেম-উলামা, শিক্ষাবিদ ও অভিভাবকরা বক্তব্য রাখেন।
তাদের দাবি, হাফেজ মো. আলী হোসেন একজন নৈতিক ও আদর্শবান শিক্ষক। তাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাঁসানো হয়েছে। এ ধরনের অভিযোগ শুধুমাত্র ব্যক্তিকে নয়, পুরো মাদ্রাসার সুনাম ক্ষুণ্ন করে।
অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য থানা পুলিশ কতৃক ভিকটিম শিক্ষার্থীর মেডিকেল পরীক্ষা করা হয়। প্রতিবেদনে শারীরিক হেনস্তার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। ফলে মামলার ভিত্তি নড়বড়ে হয়ে পড়েছে।
দায়রা জজ আদালত সুনামগঞ্জ (৩১ আগস্ট) রবিবার হাফেজ মো. আলী হোসেনকে জামিনে মুক্তি দেন। সুনামগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট আব্দুল হক ও এডভোকেট আলহাজ্ব নুরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
শিক্ষক আলী হোসেনের জামিনে মুক্তির খবরে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা জানান, আমরা প্রথমেই বলেছিলাম এটা মিথ্যা ও সাজানো, শেষ পর্যন্ত সত্য প্রকাশ পেয়েছে।
মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দিন তালুকদার বলেন, হাফেজ মো. আলী হোসেন একজন নৈতিক ও আদর্শবান শিক্ষক। দীর্ঘদিন ধরে তিনি আমাদের মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের নৈতিক ও শিক্ষাগত শিক্ষাদানে অনবদ্য অবদান রেখেছেন। তাকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো অত্যন্ত নিন্দনীয়।
তিনি আরও বলেন, ১৬ জুন’২৫ রাত ৮টার দিকে, বাদী এবং ১৫০-২০০ জন লোক বিভিন্নভাবে মাদ্রাসা এলাকায় উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে প্রায় ১৫-২০ জন লোক মাদ্রাসার অফিস কক্ষে প্রবেশ করে শিক্ষককে মারধর করেন এবং মাদ্রাসার অফিস কক্ষ তছনছ করেন। এ ধরনের সহিংস ও অশোভন আচরণ সম্পূর্ণভাবে নিন্দনীয়। আমরা চাই এমন কর্মকান্ড যেন আর কখনো ঘটতে না পারে। আমাদের মাদ্রাসা শিক্ষার পরিবেশ রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, কিছু মানুষ আমাদের মাদ্রাসার সাফল্য দেখে ঈর্ষান্বিত হয়ে হাফেজ মো. আলী হোসেনকে বেশি বেতন দিয়ে অন্যত্র নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু তিনি এটিকে সম্মানের সাথে প্রত্যাখ্যান করেছেন। সম্ভবত এই কারণে তাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি সবে মাত্র পবিত্র হজ্ব করে আসছেন, তার দ্বারা এমন জঘন্য কর্মকাণ্ড সংঘটিত হতে পারে না।
ছাতক থানার অফিসার ইনচার্জ মো. সফিকুল ইসলাম খান জানান, মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর