ঢাকা ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৮:৪১ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৫
মো. মঈন উদ্দিন মিলন, কোম্পানীগঞ্জ
গণঅভ্যুত্থান ২৪ এর পরই আলোচিত সাদা পাথর হরিলুট চরম আকার ধারণ করলে দেশব্যাপী সমালোচনায় সকল গণমাধ্যমে শতশত কোটি টাকার পাথর লুটপাটের চিত্র বহুল আলোচনার কেন্দ্রে পরিণত হয়।বিষয়টি উচ্চ আদালতে ও দৃষ্টি আকর্ষণ হলে পর্যটন স্পট সাদাপাথর বাঁচাতে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহীনি,দুদকসহ সংশ্লিষ্ট দফতর মাঠে ময়দানে দৌড়ঝাপ শুরু করেন।
ফলে দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে স্থানীয় প্রশাসনের অবহেলা, রাজনৈতিক,জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট কর্তৃক সাদা পাথর হরিলুটের সংশ্লিষ্টতা। প্রাথমিক তদন্তে দুদক ৪২ জনের তালিকায় নাম আসে উপজেলার কাঠালবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ছাত্রদল নেতা উপজেলা বিএনপি’র সহ মুক্তিযোদ্ধা সম্পাদক ইকবাল হোসেন আরিফ ৩৪নং এ ও তার বড় ভাই স্থানীয় ইউ/পি সদস্য দেলোয়ার হোসেন জীবন ৩৫ নং তালিকায় দুদকের তালিকায় দুই ভাইয়ের নাম।
প্রশাসনের চিরুনী অভিযানে গ্রেফতার হতে থাকে সাদা পাথর লুটপাটে জড়িতরা, আতংকে গা ঢাকা দিতে থাকে আসামিরা। এ অবস্থায় পাথর ও বালু লুটের ঘটনায় জড়িত নয় মর্মে /রেহাই পেতে গণস্বাক্ষর মিশনে নামেন দুদক তালিকাভুক্ত বি,এন,পি নেতা ও স্থানীয় ইউ/পি সদস্য উভয়ে তারা দুই সহোদর।
একপর্যায়ে স্থানীয় উপজেলা সদরস্থ থানা বাজারে মহি উদ্দিন আল মামুনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গণস্বাক্ষর শীটে জীবন মেম্বারের ভাই বি,এন,পি নেতা আরিফ ব্যবসায়ী স্ট্যাম্প ভেন্ডার মামুনকে নির্দেশ দেন ২৫ শে আগষ্ট দুপুরে । আলোচিত সাদা পাথর হরিলুট সংক্রান্ত বিষয়ে আমি অবগত নই মর্মে গণস্বাক্ষর শীটে সই করতে অপারগতা প্রকাশ করলে ঘঠে বিপত্তি!
একপর্যায়ে মারামারির ঘটনায় পৌঁছলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা উভয়কে বড় সংঘাত থেকে বারণ করেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, পাথর কান্ডে অভিযুক্ত ঐ দুইসহোদর সদরস্থ পাশের গ্রামের বাসিন্দা অন্যদিকে ব্যবসায়ী আল মামুন দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা সদরে স্থায়ী বসবাসে ব্যবসা করলেও ৮ কিলোমিটার দূর পূর্নাছগ্রাম এলাকায় জন্ম। এ সুবাদে ব্যবসায়ী আল মামুন জানান,পেশীশক্তিকে কাজে লাগিয়ে গণস্বাক্ষরে সই না দেয়ায় হামলা করেও ক্ষান্ত হয়নি বরং এলাকাছাড়া, প্রাণনাশসহ দেখে নেয়ার বীরদর্পে জনসম্মুখে আওয়াজ তুলেন মামুনের বিরুদ্ধে ওই বিএনপি নেতা আরিফ বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ঐ ব্যবসায়ী। সে কারণে তিনি স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অবগত করে অন্যত্র চলে গেলে এক সপ্তাহের মধ্যেই খবর পান উল্টো আদালত কতৃক তার বিরুদ্ধে উল্ঠো প্রাণনাশের মামলা!
বিষয়টি স্থানীয় একাধিক ব্যবসায়ী,প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণে উঠে আসে। এতে স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. গাজী মিয়া জানান, মূলত সাদা পাথর কান্ডে দুদকের তালিকা থেকে জীবন মেম্বার ও তার ভাই আরিফের নাম খন্ডাতে গণস্বাক্ষর শীটে ব্যবসায়ী মামুন সই না করায় মারামারির ঘটনা, আমরা ব্যবসায়ীরা বিষয়টি মীমাংসা প্রক্রিয়ার চেষ্টা করেছি কিন্তু মামলার বাদীপক্ষ সময়ক্ষেপণ করছেন। এক প্রশ্নের জবাবে মূলত স্বাক্ষর না কোর্ট ফি ঘটনায় হামলা মামলার ঘটনা জবাবে ব্যবসায়ী গাজী মিয়া বলেন, মূলত গণস্বাক্ষর শীটে স্বাক্ষর বিষয়টি নিয়ে বাকবিতণ্ডায় হাতাহাতির ঘটনা ঘঠেছে আর দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়ী মামুন উপজেলা সদরে বসবাস সহ ব্যবসা পরিচালনায় একজন স্বজ্জন ব্যক্তি হিসেবে চিনি। কোর্ট ফি বিষয় নিয়ে এমন ঘটনা হওয়ার কথা না!
গণস্বাক্ষর শীটে স্বাক্ষর নেয়া ঘটনায় উপস্থিত এক প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্যে মহিষখেড় গ্রাম নিবাসী খাগাইল বাজারের ব্যবসায়ী বিলাল আহমদ জানান, আমি ফটোকপি করতে ওই দোকানে থাকাবস্থায় কাঁঠাল বাড়ি গ্রামের পূর্ব পরিচিত ইকবাল হোসেন আরিফ একটি কাগজ মহিউদ্দিন আল মামুনের কাছে ধরিয়ে দিয়ে পড়ে একটি দস্তখত দেয়ার কথা বলেন, পরক্ষণেই বিষয়টি পড়ে আরিফকে লক্ষ্য করে তুমিতো মানুষ ভালো আমার পরিচিত! তবে কাগজে উল্লেখিত সাদা পাথর বালু ব্যবসায় তুমি সম্পৃক্ত আছো কিনা তা আমি জানিনা, এজন্য তিনি সই করতে অপারগতা প্রকাশ করলে ওই ব্যক্তি রাগান্বিত হয়ে দেখতে দাঁড়ি পাঞ্জাবীতে বেশ ভালো কিন্তু তুমি একটা খারাপ মানুষ বলে গালমন্দ করেন। এতে ঐ ব্যবসায়ী প্রতিবাদ করলে উভয়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি, চিৎকারে মূহুর্তের মধ্যে বাজারের বহু সংখ্যক ব্যবসায়ী,পথচারী জড়ো হলে বড় দূর্ঘঠনা থেকে বারণ করার চেষ্টা করেন।তবুও পাথর/ইট দিয়ে ব্যবসায়ী মামুনের দোকানে হামলার চেষ্টা করেন তিবি। প্রত্যক্ষদর্শীসহ বেশ ক’জন ব্যবসায়ীর সহযোগিতায় ইকবাল হোসেন আরিফকে অন্যত্র নিয়ে আপোষ নিষ্পত্তির চেষ্টা করেন।
এ বিষয়ে মামলার আসামি প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে বলেন, হামলা মামলার পাশাপাশি প্রাণনাশের হুমকিতে প্রায় ১ মাসের কাছাকাছি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসা বাড়িতে যেতে পারছিনা। তিনি আইন শৃঙ্খলা বাহীনির উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কাছে সুষ্ঠু তদন্তে ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানান।
ঘটনার মামলার এজাহার সূত্রে ইকবাল হোসেন আরিফ অভিযোগ দায়ের করেন এই মর্মে, ২৫ আগস্ট দুপুরবেলা ২০ টাকা মূল্যের কোর্ট ফি উপজেলা সদরস্থ ব্যবসায়ী আল মামুন এর দোকানে যান তিনি কিনতে। কোর্ট ফি চেয়ে ১০০ টাকার নোট ক্যাশে বসা ব্যবসায়ী আল মামুনের হাতে ধরিয়ে দিলে ৫০ টাকা ফেরত দেন। ২০ টাকা মূল্যের কোর্ট ফি কাগজ ৩০ টাকা বেশি নেওয়া নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বাকবিতন্ডায় মারামারিতে রূপ নেয়। এতে গুরুতর আহতসহ প্রাণনাশের অভিযোগ এজাহারে আনা হয়। গত ০২ সেপ্টেম্বর আদালতে দায়েরকৃত মামলাটি কোম্পানীগঞ্জ থানায় রেকর্ডের আওতায় এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিজ্ঞ আদালত নির্দেশ প্রদান করেন। যার মামলা নং সি আর, ১৫৫/২৫ কোম্পানীগঞ্জ থানা। এ বিষয়ে বাদী ইকবাল হোসেন আরিফ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে বলেন, মূলত গণস্বাক্ষর শীটে স্বাক্ষর না দেয়ার পরদিন জরুরি কোর্ট ফি/ফটোকপি কাজ সেরে বিল দিতে গেলে ব্যবসায়ী মামুনের ম্যানাজার ফটোকপির বিল রেখে কোর্ট ফির বিল ক্যাশ চেয়ারে বসা মামুনের কাছে দেয়ার কথা বললে বাদী আরিফ ১০০ টাকার নোট দেন।এতে ব্যবসায়ী মামুন ৫০ টাকা ফেরত দিলে ২০ টাকার কোট ফি ৫০ টাকা কেনো? বাকবিতন্ডায় একপর্যায়ে ব্যবসায়ী মামুন ও তার কর্মচারীর সহযোগীতায় লোহার পাইপ দিয়ে হাতে পায়ে আঘাত করলে মারাত্মক আহত হন বলে জানান। এছাড়া তিনি আরো বলেন, কোর্ট ফি উপজেলা সদরে আর কোথাও নাই বিধায় জরুরি দরখাস্ত দাখিলের জন্য মামুনের দোকানেই যাওয়া উল্লেখ করে দীর্ঘদিন ধরে অন্তত ৫০ জন ব্যক্তির অভিযোগ কোর্ট ফি ও স্ট্যাম্প বাবৎ অতিরিক্ত চড়া দাম রাখেন স্ট্যাম্প ভেন্ডার মামুন। এ বিষয়ে অভিযোগকারী ভুক্তভোগী কে বা কারা জানতে চাইলে বাদী ইকবাল হোসেন আরিফ তার সাথে ঘটে যাওয়ার বিবরণ তার ফেইসবুক আইডি চেক করলেই ভুক্তভোগীদের কমেন্টসে দেখতে পাবেন বলে জানান।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, স্বাক্ষর না দেয়ার ঘটনা নিয়ে নিরীহ ঐ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলার ঘটনায় ব্যবসায়ীরা হতবাক!অথচ লীজ বহির্ভূত এলাকা থেকে জীবন মেম্বার ও তার ভাই সিন্ডিকেট করে পিয়াইন নদীর মোহনায় কাঁঠালবাড়ি গুচ্ছ গ্রাম তীরে লিষ্টার মেশিনের সাহায্যে লাখ লাখ টাকার বালু লুটপাটের সাথে দীর্ঘদিন ধরে তারা জড়িত। যা একটি ভিডিও চিত্রে চলমান বালুর স্তুপ ও স্টক রয়েছে বলে জানান ওই ব্যক্তি। বিষয়টি অনুসন্ধানে, গত ২২ শে আগষ্ট ২৫ ইং তারিখের জাতীয় গণমাধ্যম যুগান্তরে ‘কোম্পানীগঞ্জে ৭০ কোটি টাকার বালু লুট’ শিরোনামে স্থানীয় ইউ/পি সদস্য দেলোয়ার হোসেন জীবন ও তার ভাই উপজেলা বিএনপি’র সহ মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক ইকবাল হোসেন আরিফসহ অন্যান্যদের নাম প্রতিবেদনে উঠে আসে।
এদিকে মামলা সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন মূল রহস্য কি জানতে চাইলে মামলার স্থানীয় থানার তদন্ত কর্মকর্তা এস,আই নাজমুল বলেন, ঘটনাটি উপজেলা সদরস্থ বাজারের একটি স্ট্যাম্প ভেন্ডার স্টেশনারীতে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। আহত বাদী উপজেলা সদর ও ওসামানী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন মর্মে এম,সি প্রতিবেদন পেতে আবেদন করা হয়েছে। আমরা যোগাযোগ করে আসছি এমসির রিপোর্ট আসলেই আমরা আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করবো।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by Yellow Host