ঢাকা ৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৯:২০ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২, ২০২৫
বিজয়ের কণ্ঠ ডেস্ক
পথশিশুদের সুরক্ষা, তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও জীবনযাত্রার মান-উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রতিবছরের ২ অক্টোবর জাতীয় পথশিশু দিবস দিবস পালিত হয়। কেবল দিবস এলেই চিন্তা করা হয় তাদের নিয়ে। জানানো হয় সরকারের নানা উদ্যোগের কথা।
কিন্তু বাস্তবে এসবের কোনো কিছুই নেই। যার কারণে পথশিশুরা পথেই থেকে যাচ্ছে। সিলেটের পথশিশুরা ধুকছে মাদকের মতো নেশায়। বিশেষ করে ‘ড্যান্ডি’ নামক একধরনের মাদকাসক্তি বাড়ছে পথশিশুদের মধ্যে। এতে করে মাদকের টাকা জোগাড় করতে জড়িয়ে পড়ছে নানা রকম অপরাধে।
বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) জাতীয় পথশিশু দিবস দিবস। সরকারি ছুটির দিন কোনো কর্মসূচি হাতে নেয়নি জেলা প্রশাসন। বেসরকারিভাবেও দিবসটি পালনের কোনো খবরও পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় কাগজে-কলমেই পালিত হচ্ছে জাতীয় পথশিশু দিবস দিবস।
সিলেটে কী পরিমাণ পথশিশু রয়েছে তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে জানা গেছে, সমাজসেবা অধিদপ্তরে আওতাধীন দুইটি প্রতিষ্ঠান পথশিশুদের সুরক্ষায় কাজ করে। কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে সব সুযোগ-সুবিধা থাকলেও পথশিশুদের এখানে আটকে রাখা যায় না।
সরেজমিনে সিলেট নগরীর চৌহাট্টা, বন্দরবাজারের ফুটওভারব্রিজ, কাজিরবাজার ব্রিজ, কিনব্রিজ ও তার আশেপাশের এলাকা, রিকাবীবাজার, টিলাগড়, সুরমা মার্কেট, শেখঘাট, নবাব রোডসহ বিভিন্ন স্থানে পথশিশুদের সবচেয়ে বেশি অবস্থান করতে দেখিা যায়। এসব স্থানে সন্ধ্যা নামলেই শিশুদের মাদক গ্রহনের দৃশ্য চোখে পড়ে। অনেক সময় দিনের বেলাও মাদক সেবন করে শিশুরা। বিশেষ করে, ‘ড্যান্ডি’ নামক একধরনের মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছে এসব এলাকার বেশিরভাগ পথশিশু।
এদিকে, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বেড়ে ওঠা এবং অপর্যাপ্ত ও অপুষ্টিকর খাবারের ফলে মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে পথশিশুরা।
‘ড্যান্ডি’ এক ধরনের আঠা, যা মূলত সলিউশন নামে পরিচিত। এতে মাদকদ্রব্যের তালিকাভুক্ত টলুইন নামে এক প্রকার উপাদান থাকে। এটি সাধারণত জুতা তৈরি ও রিকশার টায়ার-টিউব লাগানোর কাজে ব্যবহার করা হয়। ওই আঠা পলিথিনের মধ্যে রেখে নিশ্বাস নিলে এক ধরনের নেশা হয়। দীর্ঘমেয়াদে এ নেশা শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করে। পথশিশুরা রিকশাচালকদের মাধ্যমে এ আঠা সংগ্রহ করে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সর্বশেষ প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা যায়, দেশের ৫৮ শতাংশ পথশিশু মাদকে আসক্ত। যার ১৪ শতাংশ শিশু ১০ বছরের আগেই মাদক সেবন করে। বিভিন্ন সহজলভ্য মাদকে তারা আসক্ত হচ্ছে। তার মধ্যে ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ গাঁজা ও ১৫ দশমিক ২ শতাংশ শিশু ড্যান্ডিতে আসক্ত। মাদকাসক্ত ছাড়াও পথশিশুদের মধ্যে অন্তত ৪৬ শতাংশ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে।
সমাজসেবা অধিদপ্তর সিলেট জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হক জানান, ‘পথশিশুদের জন্য সিলেটে সরকারিভাবে দুইটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে সব সুযোগ-সুবিধা থাকলেও শিশুরা এখানে থাকে না। তবে পথশিশুদের আপদকালীন সময়ে এই প্রতিষ্ঠানগুলো ভরসা হয়ে দাঁড়ায়।’
তিনি বলেন, ‘ সমাজসেবা অধিদপ্তর পথশিশুদের নিয়ে কাজ করে। আমরা শিশুদের এখানে এনে তদারকি করি, তবে তারা থাকতে চায় না। আমরা চাই এ বিষয়ে সবাই সচেতন হোক, পথশিশুরা নিরাপদ আশ্রয় পাক। ’
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘পথশিশুদের মাদকে জড়িত হওয়ার বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখছি। আমরা বিশেষভাবে এর তদারকিও করছি। নগরীর বিভিন্নস্থানে প্রায়ই পথশিশুদের মাদক গ্রহণ করতে দেখা যায়। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে আমরা অত্যন্ত কঠোর অবস্থানে আছি। সেটা হোক পথশিশু বা যেকোন বয়সের কেউ। মাদকমুক্ত সিলেট নগরী গড়তে আমরা বদ্ধপরিকর।’
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by Yellow Host