ভিটা প্রতি হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা
ছাতকে হাটবাজার বন্দোবস্ত দেয়ার নামে কোটি টাকা বাণিজ্য

প্রকাশিত: ১:০০ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২৩, ২০২৫

<span style='color:#077D05;font-size:19px;'>ভিটা প্রতি হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা</span> <br/> ছাতকে হাটবাজার বন্দোবস্ত দেয়ার নামে কোটি টাকা বাণিজ্য

বিজয়ের কণ্ঠ ডেস্ক
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ এলাকায় সরকারি ভূমি বন্দোবস্ত দেয়ার নামে কোটি টাকা বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। হাটবাজার উন্নয়ন প্রকল্প-এর আড়ালে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রতি ভিটা ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ছাতক-সিলেট সড়কসংলগ্ন সরকারি ভূমিতে প্রায় একশতাধিক পাকা ভিটা তৈরির নামে এ বাণিজ্য চলছে বলে জানা গেছে।
এ ঘটনায় স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও মৎস্যজীবীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। তারা অভিযোগ করেছেন, সরকারি নিয়মে অল্প টাকায় বন্দোবস্ত পাওয়ার কথা থাকলেও কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি নামমাত্র উন্নয়ন কাজের আড়ালে বড় অঙ্কের অর্থ বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন।
উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারি ভিটা বন্দোবস্তের নিয়ম থাকলেও প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের উদ্যোগে পূর্ব রামপুর মৌজার (জে.এল.নং ২৪৬) ১নং খতিয়ানভুক্ত ভূমিতে বিগত এক মাস ধরে পাকা ভিটা তৈরির কাজ চলছে। এ অবস্থায় প্রকৃত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও মৎস্যজীবীরা বঞ্চিত হচ্ছেন এবং এলাকায় যেকোনো সময় সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
সূত্র জানায়, গত ৮ আগস্ট উপজেলা সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হাটবাজার রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন সংক্রান্ত এক সভায় নয়টি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। এর মধ্যে গোবিন্দগঞ্জ নতুন বাজারের পূর্বাংশ সংস্কারে ২ লাখ টাকা, ফিস শেড-০১ নির্মাণে ৫ লাখ টাকা, মাছ বাজারের পশ্চিমাংশ সংস্কারে ২ লাখ টাকা এবং ফিড শেড-০২ নির্মাণে ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। মোট ১৪ লাখ টাকায় ৪টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হলেও এর বাইরে আরও ২টি প্রকল্পে দরপত্রের মাধ্যমে অতিরিক্ত ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ফলে মোট ৬টি প্রকল্পে বরাদ্দ দাঁড়ায় ২৪ লাখ টাকা।
তবে অভিযোগ উঠেছে, প্রকল্পের এসব বরাদ্দের আড়ালে প্রতি ভিটা ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এতে এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
হাটবাজার এডিপি ও অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজের আরএফকিউ এবং পিআইসি দরপত্র প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে ইতিমধ্যে উপজেলার তালিকাভুক্ত ঠিকাদাররা উপজেলা প্রকৌশলীর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে তারা বলেন, দরপত্র প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও ন্যায়সংগত অংশগ্রহণ নিশ্চিত না করে নির্দিষ্ট মহলের স্বার্থে কাজ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।
গোবিন্দগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে জেলা প্রশাসকের ১নং খতিয়ানভুক্ত ভূমিতে স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ীদের জন্য ৩টি সেডে ৬০টি দোকান নির্মাণের উদ্যোগ নেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম। পরবর্তীতে স্থানীয় ব্যবসায়ী, প্রতিবন্ধী, হিজড়া ও মুক্তিযোদ্ধাদের নামের আড়ালে আরও ৪০টি ভিটা নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়।
তবে অভিযোগ রয়েছে, গোবিন্দগঞ্জ মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কোটি টাকার বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন। প্রতিটি ভিটা ৩ থেকে ৪ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে স্থানীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৩০টি ভিটা বিক্রি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে। স্থানীয় সাংবাদিকদের হাতে অডিও ও ভিডিও প্রমাণও সংরক্ষিত আছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, কেউ কেউ স্ত্রীর গহনা বিক্রি করে ভিটা কিনেছেন। একজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, তিনি ১১ লাখ টাকায় ৩টি ভিটা কিনেছেন। অন্যজন ৮ লাখ টাকায় ২টি ভিটা, আরেকজন ৭ লাখ টাকায় ২টি ভিটা ক্রয় করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন।
প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে নানা হুমকি ও হয়রানি চলছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। অনেকেই জানিয়েছেন, সরকারি জায়গায় দোকান থাকা সত্ত্বেও নির্দোষ ব্যবসায়ীদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা হচ্ছে। পরবর্তীতে তাদেরকেই ৩ থেকে ৪ লাখ টাকায় পজিশন কিনে নিতে বাধ্য করা হচ্ছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গোবিন্দগঞ্জ মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি বলেন, ভিটা পেতে প্রায় একশত আবেদন জমা হয়েছে। সরকার নির্ধারিত রাজস্ব ও খাজনাসহ মাথাপিছু ১০-১৫ হাজার টাকার মতো খরচ হতে পারে বলে ধারণা করা হয়েছে। ৩-৪ লাখ টাকার বিষয়টি আমার জানা নেই, এটি ইউএনও সাহেব ভালো বলতে পারবেন।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহাজান মিয়া বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। সব বিষয় সভাপতি দেখছেন।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সঞ্জয় ঘোষ বলেন, বন্দোবস্তের বিষয়ে আমি কোনো ফাইলে স্বাক্ষর করিনি। নতুন এসিল্যান্ড সাহেব বিষয়টি দেখবেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ব্যবসায়ীদের জন্য সরকার নির্ধারিত নিয়মে শেড নির্মাণ করা হচ্ছে। সরকার শুধু নির্ধারিত রাজস্ব নিচ্ছে। অতিরিক্ত অর্থ নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী ও হিজড়া প্রতিনিধিদেরও দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে দোকান বরাদ্দে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর