ঢাকা ১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৮:৪৯ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৯, ২০২৫
মো. মঈন উদ্দিন মিলন
সিলেটের সীমান্ত জনপদ কোম্পানীগঞ্জে ধলাই সেতুর দক্ষিণ বালুমহাল লিজকৃতের অজুহাতে সরকারি সব ধরনের নিয়ম ভেঙে অবাধে নদীর পার, বাজার, কবরস্থান, বসতবাড়ি নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার অভিযোগ ও ভিডিও চিত্রসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ উপজেলা প্রশাসন কোম্পানীগঞ্জ এর অবহেলা, নিষ্ক্রিয়তা আর কোন এক অদৃশ্য স্বার্থে শক্ত ধরনের অভিযান বা লুরপাটকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দা ও ভুক্তভোগী গ্রামবাসীর।
কয়েকটি মামলা রুজুতে মাঝে মধ্যে অভিযান দিলেও তা আইওয়াশ নামে অভিহিত বলে একাধিক স্থানীয় সূত্র দাবি করেন। তারা বলেন একদিকে অভিযান/ মামলার তদন্ত শেষে লুটপাটকারীদের আইনের আওতায় না নেওয়ায় ফের শুরু লুটপাট এতে প্রশাসনের দুর্বলতাকে দায়ী করেন এলাকাবাসী।
গতকাল ব্যাপক লুটপাটের অভিযোগ স্থানীয় এক বাসিন্দা লিটন তাজ ওসি রতন শেখকে জানালে তিনি এলাকাবাসীকে বালুখেকোদের তাড়াইয়া দেয়ার কথা বলেন বলে জানা যায়।
ধলাই সেতুর নিচ থেকে বালু লুটপাটের অভিযোগ কয়েক মাস ধরে চলছে তো চলছেই। সম্প্রতি সেতু এলাকায় পানির স্তর কমায় এবার হামলে পড়েছে বালুখেকোরা নদীতীরবর্তী কলাবাড়ী, বুধবারী বাজার, উত্তর রাজনগর,দক্ষিণ ঢালার পার এলাকায়।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে পাকা সড়ক, বাজার, বসতবাড়ি নিশ্চিহ্নের পথে এলাকাবাসী বাঁধা দিতে চাইলে আসে হুমকি ধামকি।
আলোচিত সাদা পাথর লুটপাট ঠেকানো গেলেও ধলাই সেতুর নিচসহ সেতু এলাকা,তীরবর্তী পাকা সড়ক, কবরস্থান খাবলে খাওয়াসহ ফসলী জমিতে বালু উত্তোলন বন্ধ করা যাচ্ছেনা বেশ কয়েকটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট এর কারণে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিশেষ করে উত্তর রাজনগর এলাকার একটি সিন্ডিকেট দখলীকৃত/রেকর্ডীয় ভূমি মালিক অজুহাতে ২০/২২ টাকা প্রতি ফুট বালু বিক্রি করছেন দেদারসে। গভীর রাত থেকে সকাল পর্যন্ত শতশত লিষ্টার দিয়ে বাল্কহেড ভর্তি করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।ফলে বসতবাড়ি, সড়কসহ ফসলীজমি বিলীন হচ্ছে অবলীলায় এ যেনো দেখার কেউ নাই।
স্থানী বাসিন্দা লিটন তাজ, বাদশা মিয়া, জামাল মিয়াসহ অনেকের অভিযোগ, স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশেই তান্ডবলীলা চলছে অবিরত। এদের মধ্যে স্থানীয় সূত্রে উত্তর রাজনগর গ্রামের মৃত আব্দুল মন্নানের ছেলে মতিউর, আতাউর, তাজুল মিয়া ও মধুর মিয়া এবং একই এলাকার মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে চমক আলি, তৈয়ব আলি সরাসরি বালু বিক্রিতে জড়িত বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে সরাসরি ২/১ জনকে বালু লুটপাটের সময় আতাউর এর উপস্থিতি স্টিল বডিতে দাড়িয়ে লিস্টার মেশিন লোকদের ইশারা দিতে দেখা যায় বালু তুলতে।
অন্যদিকে স্থানীয় জামাল নামের এক অধিবাসী নিজ বসতবাড়ি বাঁচাতে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন গতমাসে স্থানীয় প্রভাবশালী, উত্তর রাজনগর নিবাসী সমছু, রফিক, আলী আকবর, রহিমসহ অজ্ঞাত কয়েকজনের বিরুদ্ধে।
মামলার অগ্রগতি বা জড়িতদের বিরুদ্ধে নামমাত্র তদন্ত শেষে কোনু ব্যবস্থা নেয়নি কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ বলে জানান বাদী জামাল উদ্দিন।
স্থানীয় মুরব্বি ইয়াকুব আলীর সাথে প্রতিবেদক যোগাযোগ করলে তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে গ্রামের পাশে বাজার,পাকা সড়ক, বসত বাড়ীর পাশে বালু উত্তোলন চলায় ভীষণ ক্ষতির সম্মুখীন এলাকা। সামাজিকভাবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ নিষেধ বাধা দিলেও মাঝে-মধ্যে লুটপাট থামে। তবে আপাতত আজ হতে বন্ধ ভবিষ্যতে ফের লুটপাট শুরু হলে সংবাদকর্মীদের সহায়তার আশা প্রকাশ করেন মুরব্বি ইয়াকুব আলী।
এদিকে লুটপাটের সাথে অভিযুক্তদের মধ্যে মতিউর মিয়াকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের পৈত্রিক ভূমি নদীপাড়ে বটে। তবে বালু বিক্রির সাথে তিনি যুক্ত নন বলে জানান। এক প্রশ্নের জবাবে, সোশ্যাল মিডিয়ায় তার ভাইর উপস্থিতি বালু লুটপাটের সাথে উত্তরে তিনি এসবের কিছুই জানেননা বলে প্রতিবেদককে জানান।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন কোম্পানীগঞ্জ এর ইউএনও মোঃ রবিন মিয়ার সাথে প্রতিবেদক যোগাযোগ করলে ভুক্তভোগীদের মামলার অগ্রগতি হচ্ছে না কেনো জানালে তিনি ওসি সাহেবের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। মামলা ব্যতীত সরকারি রাস্তা, নদীর পাড় যে বা যারা ধংস করছে তাদের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসন কী কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায় না? প্রশ্নোত্তরে ইউএনও রবিন মিয়া প্রতিবেদককে এ বিষয়ে আপনাকে কি করা যায় তা পরে জানাবেন বলে জানান।
এ বিষয়ে, কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোঃ রতন শেখ পিপিএম জানান, মূলত এলাকার তীরবর্তী দখলদার অজুহাতে নামমাত্র মুল্যে বালুসিন্ডিকেট বাহিনীর হাতে সুযোগ করে দিচ্ছে বালু লুটপাটে। একভাই বালু বিক্রি করে অন্য ভাই ফোন দেয়। তাছাড়া ভূমি মালিকদের মালিকানা সংক্রান্ত বিষয়ে জটিলতা তবুও আমরা নিয়মিত অভিযান দিচ্ছি। মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলার আয়ূ তার ধারাবাহিক তদন্তের ভিত্তিতে দুষ্কৃতকারীরা জড়িত থাকলে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবে বলে জানান।
এলাকাবাসী ও উপজেলার সচেতন নাগরিক সমাজ এতসব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধংসকারী কে বা কারা তাদের চিহ্নিতকরণে প্রশাসনই উদ্যোগী হওয়ার দাবি জানান। সেই অদৃশ্য শক্তির উৎস কে বা কারা? সেটাই এখন দেখার পালা বলে সোশ্যাল মিডিয়াসহ লোকসমাজে গুঞ্জন চলছে অবিরত।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by Yellow Host