ঢাকা ১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৮:১৯ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৩, ২০২৫
শান্তিগঞ্জ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই, জগন্নাথপুর ও শান্তিগঞ্জÑএই তিন উপজেলার মানুষের বহুদিনের স্বপ্ন চণ্ডিডহর সেতু নির্মাণ অবশেষে নতুন আশার আলো দেখিয়েছে। বুধবার (১২ নভেম্বর) তিন উপজেলার সচেতন নাগরিক ও তরুণ প্রতিনিধিদের উদ্যোগে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের নিকট আনুষ্ঠানিকভাবে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
তিন উপজেলার সচেতন নাগরিক প্রতিনিধিরা জেলা প্রশাসকের কাছে উপস্থিত হয়ে জানান, চণ্ডিডহর নদীর উপর একটি স্থায়ী সেতু না থাকায় তিন উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা বহু বছর ধরে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এতে শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ প্রতিদিনের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
স্মারকলিপি প্রদানকারীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেনÑমোঃ শাহীনুর পাশা, শাহ আজিজ, মকবুল হোসেন, আব্দুল হালিম, শিমুল চৌধুরী, জাকির হোসেন, কুতুব খান, পিয়ারুল ও আফজল প্রমুখ। তাঁরা জানান, জেলা প্রশাসকের আন্তরিক মনোভাব তাঁদের মধ্যে নতুন আশাবাদ সৃষ্টি করেছে। প্রশাসক যেভাবে বিষয়টি মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন, তাতে মনে হচ্ছে চণ্ডিডহর সেতু নির্মাণের স্বপ্ন এবার বাস্তবায়নের পথে।
স্থানীয়রা জানান, চণ্ডিডহর নদী দিরাই, জগন্নাথপুর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলার সংযোগস্থল। কিন্তু একটি স্থায়ী সেতু না থাকায় বছরের পর বছর নৌকা ও সাময়িক ভেলায় পারাপার করতে হচ্ছে। বর্ষাকালে পরিস্থিতি আরও করুণ হয়ে পড়েÑরোগী, শিক্ষার্থী ও কৃষকদের পণ্য পরিবহনে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।
তাই স্থানীয়দের মতে, চণ্ডিডহর সেতু নির্মাণ কেবল একটি উন্নয়ন প্রকল্প নয়, এটি তিন উপজেলার মানুষের জীবনের প্রয়োজন ও প্রাপ্যতা।
প্রায় ৫৫ বছর ধরে এলাকাবাসী এ সেতুর স্বপ্ন লালন করে আসছেন। বিভিন্ন সময়ে আবেদন ও আন্দোলন হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। সম্প্রতি তরুণ প্রজন্মের উদ্যোগে নতুনভাবে আন্দোলনের ধারা শুরু হয়। কয়েক সপ্তাহ আগে তিন উপজেলার মানুষ একত্র হয়ে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করেন।
মানববন্ধনের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে বিষয়টি দেশব্যাপী টেলিভিশন ও সংবাদপত্রে প্রচারিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার তিন উপজেলার তরুণ ও সচেতন নাগরিকেরা জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি জমা দেন।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়Ñ“চণ্ডিডহর সেতু নির্মাণ হলে তিন উপজেলার মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। এতে শুধু শিক্ষার্থী ও চিকিৎসা সুবিধা লাভকারীরাই উপকৃত হবে না, বরং কৃষি ও ক্ষুদ্র ব্যবসা খাতেও নতুন গতি আসবে। সামগ্রিকভাবে ভাটি জনপদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এটি এক যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে। এ সেতু কেবল যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এটি আমাদের তিন উপজেলার প্রাণের দাবি। আমরা বিশ্বাস করি, সরকার ও প্রশাসন আমাদের এই ন্যায্য দাবিকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবেন।”
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা জানান, একসময় চণ্ডিডহর নদী ছিল গ্রামীণ জীবনের প্রাণকেন্দ্র। কিন্তু এখন এটি ভোগান্তির প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে নদী পার হতে গিয়ে বহু মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছে। তাই দ্রুত সেতু নির্মাণের দাবি এখন সর্বস্তরের মানুষের মুখে মুখে।
স্মারকলিপি প্রদানের সময় প্রতিনিধিরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, প্রশাসকের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া তাঁদের আন্দোলনে নতুন গতি আনবে। তারা আশা প্রকাশ করেন, শিগগিরই সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর চণ্ডিডহর সেতু নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করবে এবং ৫৫ বছরের পুরোনো এই প্রত্যাশা বাস্তবে রূপ পাবে।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by Yellow Host