‘ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় কৃষক হতাশ’
সুনামগঞ্জে আমন উৎপাদনের লক্ষ্য দেড় হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত: ৬:৩৩ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৬, ২০২৫

<span style='color:#077D05;font-size:19px;'>‘ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় কৃষক হতাশ’</span> <br/> সুনামগঞ্জে আমন উৎপাদনের লক্ষ্য দেড় হাজার কোটি টাকা

মো. আব্দুল শহীদ, সুনামগঞ্জ
সুনামগঞ্জ জেলায় এবার আমন ধানের ফলন নিয়ে কৃষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া বিরাজ করায় ও সময়মতো ধান কাটা শুরু হওয়ায় মাঠে ব্যস্ততা বেড়েছে কৃষকের। তবে ধানের শীষে চিটা, পোকা আক্রমণে ফলন কম হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন অনেক কৃষক। এদিকে ধানের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় ও উৎপাদন খরচ না উঠায় কেউ কেউ হতাশ হয়ে পড়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, বিলম্বে আবাদ এবং বয়স্ক চারা রোপণ করার কারণে অনেক কৃষকের ফলন কম হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এবছর রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৮৩ হাজার ৫২০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৮২ হাজার ৬৫৬ হেক্টর। এবার ২ লক্ষ ১৬ হাজার ৯৯৭ মেট্রিক টন চাল উৎপাদিত হবে। যার বাজার মূল্য ১ হাজার ৬৩ কোটি ২৮ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। এরমধ্যে শনিবার পর্যন্ত কর্তন করা হয়েছে ৯ হাজার ৩৪৮ হেক্টর। জেলায় প্রায় ৪০ হাজার কৃষক আমন ধানের চাষ করেছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় আমন ধানের ভালো ফলন হয়েছে এবং কৃষকরা সময়মতো ধান কেটে ঘরে তুলছেন, এতে তাদের মুখে হাসি ফুটেছে। আবার কিছু জমিতে পোকার আক্রমণ হওয়ায় ফলনের পরিমাণ ও গুণগতমান কমেছে।

এদিকে যাদের ফলন ভালো হয়েছে তাদের মধ্যে কেউ কেউ ধানের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় হতাশ।

সুনামগঞ্জ দর্শনীয় সদর উপজেলার সাহেবনগর গ্রামের মাজিদ মিয়া বলেন, এই বছর ২৫ কেয়ার জমিতে আমন ধানের চাষ করেছি। মঙ্গলবার পর্যন্ত ৯ কেয়ার জমির ধান কর্তন করা হয়েছে।

কৃষি বিভাগের সহযোগিতা পাননি উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর ফলন কম হয়েছে, প্রতি কেয়ার জমিতে ৮-১০ মন করে ফলন হয়েছে। একই গ্রামের চান মিয়া বলেন, আমি ২০ কেয়ার জমিতে আমন ধানের চাষ করেছি। আজকে পর্যন্ত অর্ধেক জমির ধান কর্তন করেছি। আল্লাহর রহমতে ভালো ফলন হয়েছে। প্রতি কেয়ার জমিতে প্রায় ১৮-২০ মনের বেশি ধান হয়েছে।

সৈয়দপুর গ্রামের কৃষক শাহজাহান মিয়া এই বছর ৫ কেয়ার জমিতে আমন ধানের চাষ করেছেন। আড়াই কেয়ার জমিতে ব্রি-৪৯ এবং বাকি আড়াই কেয়ার জমিতে পাইজং জাতের ধান রোপণ করেছিলেন তিনি। জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বছর তুলনামূলক ধান কম হয়েছে। প্রতি কেয়ার জমিতে খরচের তুলনায় ফলন কম হয়েছে। প্রতি কেয়ার জমিতে ১০-১২ মন ধান হবে।

তিনি বলেন, ধানে বিভিন্ন ধরনের পোকা আক্রমণ করে, এতে করে এই পোকা নিরাময়ের কাজে নানান ঔষধ কিনে দিতে হয়েছে, ব্যয়ও বেড়েছে। তিনি বলেন, আমরা কৃষি অফিস থেকে সহায়তা বা পরামর্শ পাইনি, পেলে হয়তো উপকার হতো।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার রামপুর গ্রামের জিহাদ মিয়া এই বছর সাড়ে তিন কেয়ার জমিতে আমন ধানের চাষ করেছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এই বছর সাড়ে তিন কেয়ার জমিতে আমন ধানের চাষ করেছি। ব্রি- ২২ জাতের ধান রোপণ করেছি। ফলন ভালো হয়নি। এই সাড়ে তিন কেয়ার জমিতে ১০ মণ করে ৩৫ মণ ধান হবে। গত বছরের তুলনায় ফলন অনেক কম হয়েছে।

একই উপজেলার বাদেরটেক গ্রামের আব্দুল মমিন বলেন, আমি ১৬ কেয়ার জমিতে আমন ধানের চাষ করেছি। এরমধ্যে বিনা-১৭ এবং ৪৯ জাতের ধান রোপণ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। প্রতি কেয়ার জমিতে প্রায় ১৯-২০ মন করে হবে।

দোয়ারাবাজার উপজেলার পশ্চিম আজমপুরপুর গ্রামের সায়েদ মিয়া ২৬ কেয়ার জমিতে আমন ধানের চাষ করে বাম্পার ফলনে খুশি। তিনি বলেন, এই বছর প্রতি কেয়ার জমিতে প্রায় ১৮-২০ মন করে ফলন হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপপরিচালক মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, সুনামগঞ্জে রোপা আমনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৩ হাজার ৫২০ হেক্টর। এরমধ্যে হাইব্রিড, উপশি এবং স্থানীয় এই তিন জাতের ধানের চাষ হয়েছে। আবাদ হয়েছে ৮২ হাজার ৬৫৬ হেক্টর। হেক্টর প্রতি গড় ফলন ধরা হয়েছে ২.৬০ মেট্রিক টন চাল। এতে উৎপন্ন হবে ২ লক্ষ ১৬ হাজার ৯৯৭ মেট্রিক টন চাল। যার বাজার মূল্য ১ হাজার ৬৩ কোটি ২৮ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা।

এ বছর ফলন ভালো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এ পর্যন্ত কর্তন করা হয়েছে ১১.৩% অর্থাৎ ৯ হাজার ৩৪৮ হেক্টর। দুই-একটি জায়গায় ফলন কম হয়েছে। তিনি বলেন, যে জমিতে আমন ধানের চাষ বিলম্বিত হয়েছে এবং যে চারার বয়স বেশি ছিল, সেই জমিতে ফলন কম হয়েছে। চারার বয়স ২৫ দিনের বেশি হলে ফলন কম হয়।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর