ঢাকা ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২:১০ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২১, ২০২৫
কমলগঞ্জ সংবাদদাতা
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিদ্যমান শ্রমআইন সংশোধন করে শ্রম (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫ জারী করলেও তাতে চা-শ্রমিক স্বার্থ উপেক্ষিত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে মৌলভীবাজার চা-শ্রমিক সংঘ। সংগঠনের মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সহ-সভাপতি শ্যামল অলমিক ও সাধারণ সম্পাদক হরিনারায়ন হাজরা ২০ নভেম্বর এক যুক্ত বিবৃতিতে এই অভিযোগ করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, দীর্ঘদিন যাবত চা-শ্রমিকরা শ্রমআইনের বৈষম্য নিরসন করার দাবি জানিয়ে আসলেও শ্রম (সংশোধন) অধ্যাদেশেও চা-শ্রমিকদের সাথে বৈষম্য অব্যাহত রয়েছে। শ্রমআইনের ১১৫ ধারায় সকল শ্রমিক বছরে ১০ দিন নৈমিত্তিক ছুটি প্রাপ্য হলেও চা-শ্রমিকদের জন্য নৈমিত্তিক ছুটি প্রযোজ্য নয়; একইভাবে ১১৭ ধারায় দোকান, বাণিজ্য বা শিল্প প্রতিষ্ঠান বা কোন কারখানা অথবা সড়ক পরিবহণ শ্রমিকরা ১৮ দিন কাজে ১ দিন মজুরিসহ বার্ষিক ছুটি পেয়ে থাকলেও চা-শ্রমিকরা ২২ দিন কাজে ১ দিন মজুরিসহ বার্ষিক ছুটি পান। সরকার শ্রম অধ্যাদেশ জারী করলেও চা-শ্রমিকদের প্রতি বৈষম্য নিরসন করা হয়নি। এমন কি চা-শ্রমিকদের ভূমির অধিকারের দাবিও উপেক্ষা করা হয়েছে।
চা-শ্রমিকদের ভূমির অধিকারের দাবিকে পাশ কাটিয়ে শ্রমআইনের ৩২ ধারায় কোন শ্রমিকের চাকুরি অবসানের ৬০ দিনের মধ্যে বাসস্থান হতে উচ্ছেদ করার আইন সংশোধন করে ৬ মাসের মধ্যে বাসস্থান ছেড়ে দেওয়ার অধ্যাদেশ জারী করে মূলত বাসস্থান থেকে উচ্ছেদ করার আইন অব্যাহত রাখা হয়েছে।
বিশেষায়িত চা-শিল্পের প্রয়োজনেই চা-শ্রমিকদের বাগানে বসবাস জরুরী। চা-শিল্পের শ্রমিকরা চা-বাগানের বাসস্থান থেকে উচ্ছেদ হয়ে গেলে তাদের মাথা গোজার বিকল্প নেই। তাই দীর্ঘদিন যাবত চা-শ্রমিকরা সকল সরকারের নিকট ভূমির অধিকার প্রদানের দাবি জানিয়ে আসছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার অতীতের সরকারগুলোর মতো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও চা-শ্রমিকদের প্রতি বিমাতাসুলভ শ্রম অধ্যাদেশ করেছে। শুধু তাই নয় গত ২৪ আগষ্ট’২৫ চা-শ্রমিক সংঘের পক্ষ থেকে বর্তমান বাজারদরের সাথে সংগতিপূর্ণ বাঁচার মতো মজুরিসহ ১০ দফা দাবি শ্রম উপদেষ্টা বরাবর পেশ করা হয়। ১০ দফা দাবিতে শ্রমআইনের ২৩, ২৬, ৩২, ১১৫, ১১৭ ধারাসহ বিভিন্ন ধারা সংশোধন করে গণতান্ত্রিক শ্রমআইনের প্রণয়নের দাবি জানালেও সরকার তা আমলে নেয়নি। চা-বাগানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের চাকুরিচুত্যিসহ মালিকদের নিপীড়নের একচ্ছত্র ক্ষমতার হাতিয়ার ২৩ ও ২৬ ধারা শ্রম অধ্যাদেশে বলবৎ রাখার মাধ্যমে মালিকদের স্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক ও জাতীয়ভাবে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের প্রেক্ষিতে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে সহজীকরণের চাপ বাড়লে শ্রম অধ্যাদেশে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক সংখ্যা ভেদে ২০ থেকে ৪০০ জন শ্রমিকের সমর্থনে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার প্রদান করা হলেও প্রতিষ্ঠানপুঞ্জের ক্ষেত্রে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়নি। শ্রম অধ্যাদেশে ৫ বছরের পরিবর্তে ৩ বছর অন্তর নিন্মতম মজুরি ঘোষণার যে বিধান করা হয়েছে তা যথাযথ বাস্তবায়ন করা জরুরী। কারণ ইতিপূর্বে ৫ বছর অন্তর মজুরি নির্ধারণ করার আইন থাকলে গার্মেন্টস ব্যতিত কোন সেক্টরের সময় মত নিন্মতম মজুরি ঘোষণা হয়নি।
নেতৃবৃন্দ শ্রম অধ্যাদেশের চা-শ্রমিকদের সাথে বৈষম্যমূলক ৩২, ১১৫, ১১৭ ধারা সংশোধন, নিপীড়নমূলক কালো ধারা ২৩ ও ২৬ বাতিল, চা-শিল্পে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন সহজীকরণসহ গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়নের জোর দাবি জানান।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by Yellow Host