ঢাকা ১৩ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৫:৩৯ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৩, ২০২৫
আব্দুল শহীদ, সুনামগঞ্জ
সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলার বিআইডব্লিউটিএ, টোল ট্যাক্স, খাস কালেকশন, উপজেলা নৌকা ঘাট, পাটলাই কোডগাড়ি ও যাদুকাটা নদীর রয়েলিটি শ্রমিকদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সরকার নির্ধারিত হারে টোল আদায় করছেন ইজারাদার এবং স্থানীয় প্রশাসন। এতে করে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে সরকারের। পাশাপাশি হাজারো নৌ-শ্রমিক এবং বালু-পাথর ব্যবসায়িদের মনে স্বস্থি ফিরে এসেছে।
শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) সকালে সরেজমিন নৌপথ ঘুরে খোজ নিয়ে জানা যায়, আবুয়া বিআইডব্লিউটিএ, টোল ট্যাক্স, খাস কালেকশন এবং যাদুকাটা নদীর রয়েলিটি সরকারের নিয়োগকৃত ইজারাদারগণ সরকার নিধারিত হারে টোল আদায় করছেন।
সম্প্রতি ঐসমস্ত নৌকাঘাট ও রয়েলিটি ইজারাদারগনের মেয়াদও প্রায় শেষের দিকে। কিন্তু বিগত অর্থ বছরে খাস কালেকশনে আগ্রহী উপযুক্ত দরদাতা না পাওয়ায় এবং মামলা সংক্রান্ত জটিলতা থাকায় এসব নৌকাঘাটের ইজারা প্রদান করা সম্ভব হয়নি। যার ফলে খাস কালকশনের মাধ্যমে সরকার নিধারিত হারে টোল আদায় করা হচ্ছে ।
তাহিরপুর উপজেলার অন্যতম প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদ বালু-পাথর মিশ্রিত কোয়ারীর রয়েলিটি ও টোল ট্যাক্স নদীর উভয় পাশে নৌকাঘাটের টোল চার্ট টাঙ্গিয়ে টোলচার্টে প্রদত্ত হার মোতাবেক শুধুমাত্র ঘাট ব্যবহারকারী মালবাহী ভলগেট,বাজ, দেশীয় বড় নৌকা, ছোট নৌযানের নিকট থেকে রশিদের মাধ্যমে টোল আদায় করা হচ্ছে।
উক্ত নৌকাঘাট ব্যবহারকারী কয়েকটি পরিবহন নৌকার সুকানীর সাথে কথা হলে তারা জানায়, ঘাট ব্যবহারকারী নৌযানসমূহ শুধুমাত্র টোলচার্টে উল্লেখিত হারে কোন রকম জোর জবরদস্তি ছাড়াই রশিদের মাধ্যমে টোল আদায় করা হচ্ছে।
যাদুকাটা নদীর উভয় পাশে কার্গো বা দেশীয় বালু পাথর ও অন্যান্য সকল ধরনের মালামাল বহনকারী যাত্রীবাহী ছোট নৌকা (অনুর্দ্ধ ৩০০০ টাকা থেকে মালবাহী ভলগেট/ কার্গো/ বার্জ উর্দ্ধে ৪০০০ টাকা হারে টোল আদায় করা হচ্ছে।
আবুয়া নদীতে চলাচলকারী বালুবাহী সততা নৌ পরিবহনের সুকানী সংগ্রামপুর গ্রামের বাসিন্দা আইনুল হক বলেন, আমার দেশীয় মালবাহী বড় নৌকা আমার কাছ থেকে রশিদের মাধ্যমে ২৭০০ টাকা টোল নিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ ইজারাদার। যে টাকা টোল দিয়েছি তা সরকার নির্ধারিত টোল।
সুহালা গ্রামের নৌ পরিবহনের সুকানী ফারুক মিয়া বলেন, আমার ১শত মেঃ টনি দেশীয় ছোট নৌকা আমি ২৫০০ টাকা টোল দিয়েছি। এই টোল আদায়ে শ্রমিক এবং আমাদের ব্যবসায়িদের মনে স্বস্থি ফিরে এসেছে। টোল আদায়ে কোন রকম জোর জবরদস্তী করা হচ্ছে না। একই চিত্র বিআইডব্লিউটিএ ঘাটসহ উপজেলার খাস কালেকশনকৃত পাটলাই নৌকাঘাট এবং কোডগাড়িতে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাহিরপুর উপজেলার লাউড়েরগর বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ি বলেন, সরকারী নিয়মনীতি অনুসারে টোল এবং খাস কালেকশনকৃত নৌকাঘাটগুলো থেকে টুল আদায় করছে। ফলে সরকারী রাজস্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং নৌ শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের জোর জবরদস্তি থেকে রেহাই পেয়েছে আমি মনে করি।
নৌ-শ্রমিক মোবারক আকবর আলী বলেন, একটি অসাধু ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট চক্র ইজারাদারকে টোল না দিয়ে নৌপথে চলাচল করতে চায়, রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে তাদের পরিবহনে নির্ধারিত টোল আদায় করতে চাইলে নামে-বেনামে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ, সভা সমাবেশ করে সরকার এবং ইজারাদারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে মরিয়া।
আবুয়া বিআইডব্লিউটিএ ইজারাদার জানান, যে শ্রমিকরা নদীর তীরে মানববন্ধন করেছেন তারা আমার কাছে আর্থিক সুবিধা চেয়েছিলেন। কিন্তু আমি তাদের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সাবেক ইজারাদারের লোকজন উদ্দেশ্যমূলক অতিরিক্ত টোল আদায়ের নামে মানববন্ধন করছেন। কর্তৃপক্ষের দেওয়া রেটে টোল আদায় করছি।
টুকের বাজার নৌ-পুলিশের ইনচার্জ দিলীপ বড়ুয়া বলেন, সুনামগঞ্জের নদী পথে অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়ে আমাকে কেউ জানায়নি। তবে খোঁজ নিয়ে দেখবো।
তাহিরপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি খাইরুল আলম শান্তনু নদীতে অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, বিআইডব্লিউটিএর টোলের ব্যাপারে আমাদের কিছুই করার নেই। স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষ দেখবে। তারপরও আমি খোঁজ নিয়ে দেখবো।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা আব্দুল মতিন খান বলেন, আবুয়া নদীতে অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। মৌখিক কিংবা লিখিত ভাবে কেউই জানায়নি। অভিযোগ পেলে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান মানিক বলেন, নদী পথে অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়ে এখন পযর্ন্ত কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। তবে খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। খাস কালেকশনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে জবাবে তিনি আরো বলেন, ঘাগড়া-লাউরেরগড় ও শ্রীপুর নৌকাঘাট মামলা সংক্রান্ত জটিলতা থাকায় এসব নৌকাঘাটে সরকারের নিয়মনীতি অনুযায়ী প্রশাসনের লোকজন দিয়েই খাস কালেকশন করা হচ্ছে। এখানে কোন ধরনের সিন্ডিকেট নেই। ঐ মামলা গুলো নিষ্পত্তি হওয়ার পর ইজারা দেওয়া হবে।
সুনামগঞ্জের নৌপথে টোল আদায়ের নামে অতিরিক্ত টোল বিষয়ে জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, নদী পথে অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে সঠিক তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদেরকে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হবে।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by Yellow Host