ছাতকে এনাম হত্যা : সাড়ে তিন মাসেও অধরা মামলার মূল আসামিরা

প্রকাশিত: ৬:০৬ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৩, ২০২১

ছাতকে এনাম হত্যা : সাড়ে তিন মাসেও অধরা মামলার মূল আসামিরা

লুৎফুর রহমান শাওন, ছাতক
ছাতকে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হাজী মোস্তফা আনোয়ার এনাম হত্যাকাণ্ডে জড়িত মূল আসামিরা এখনও অধরা। হত্যা ঘটনায় প্রায় সাড়ে তিন মাস অতিবাহিত হলেও মূল আসামিদের একজনকেও গ্রেপ্তার দেখাতে পারেনি পুলিশ। তবে, কোন অদৃশ্য কারণে পুলিশ এমন নির্বকার ভূমিকায় রয়েছে তা নিয়ে উপজেলা জুড়ে নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। যেখানে গোটা দেশ জুড়ে প্রযুক্তির বদৌলতে অনেক পুরনো ও পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার করে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা হচ্ছে, সেখানে এনামের বেলায় কেন এতো অবহেলা? নাকি আসামিরা প্রভাবশালী ও ক্ষমতাসীন দলের লোক হওয়ায় পুলিশ তাদের অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পরও গ্রেপ্তার না করে সমিহ করছে? নাকি এনামের পরিবার মোটা অঙ্কের টাকা ছাড়তে পারেনি বলে তারা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে? এমন হাজারো প্রশ্নের উদ্রেক হচ্ছে জনমনে। এসব প্রশ্নের উত্তর আছে কেবলই পুলিশের কাছে। এনাম হত্যার মূল হোতাদের গ্রেপ্তার করে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করলেই সব প্রশ্নের উত্তর মিলে যাবে বলে মনে করছেন এনামের স্বজন, শুভাকাক্সক্ষী ও উপজেলার সচেতন মহল।

 

গত সোমবার ছাতক প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিকদের সহযোগিতা চান নিহতের ছোট ভাই মোস্তফা দিলোয়ার। এসময় তিনি এনাম হত্যার বিবরণ দিতে গিয়ে আবেগ তাড়িত হয়ে পড়েন। ভাই হারানোর শোকে কাতর পারভেজ জানান, তার বড় ভাই এনামকে কতিপয় সন্ত্রাসীরা মধ্যযুগীও কায়দায় মারপিট করে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। তিনি ভাই হত্যার বিচার চেয়ে হত্যা মামলা দায়ের করলেও পুলিশ এখনও মূল হোতাদের কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। যার ফলে আসামিরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকেও হত্যার হুমকি দিচ্ছে। এ অবস্থায় পরিবার পরিজন নিয়ে ভীতসন্ত্রস্ত দিন পার করছেন পারভেজ।

 

জানা যায়, গত ১৩ মে ইফতারের পূর্বমুহূর্তে ছাতক পৌরসভার নোয়ারাই মহল্লার মৃত মতিন মিয়ার পুত্র হাজী মোস্তফা আনোয়ার এনাম (৪০)’র বাড়িতেই তার উপর হামলা চালায় চাচাতো ভাই দবির মিয়া, তার স্ত্রী লাভলী বেগম, আওয়ামী লীগ নেতা শিহাব মিয়া ও মিশুসহ ১০জন। হামলায় গুরুতর আহত হন এনাম। পরে পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও স্থানীয় জনতা তাকে উদ্ধার করে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে আইসিইউতে থাকার পর তাকে সিলেটের পার্কভিউ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেও তাকে আইসিইউতে রাখা হয়। দু’টি হাসপাতালে ৮ দিন আইসিইউ-তে থাকার পর গত ২০ মে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এনামের মৃত্যু হয়।

 

হামলার ঘটনার একদিন পর গত ১৫ মে এনামের ছোট ভাই মোস্তফা জোবায়ের বাদী হয়ে ছাতক থানায় ১০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটিকে পরবর্তীতে হত্যা মামলা হিসাবে রেকর্ড করা হয়।

 

পুলিশের তথ্য মতে, হাজী মোস্তফা আনোয়ার এনামের উপর হামলার ঘটনায় ওই রাতে ৩ জনকে আটক করা হয়। পরবর্তীতে তাদেরকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। এরপর থেকে পুলিশ আর কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করেনি।

 

মামলার বাদী মোস্তফা জুবায়ের অভিযোগ করে বলেন, ‘যাদেরকে আটক করে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে তারা ওই মামলার মূল আসামি নয়। তারা জড়িত ছিল, তবে হুকুমের গোলাম হিসেবে। হামলার নির্দেশ দাতা ও এজাহার নামীয় মূল আসামিদের এখনও গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। মূল আসামিদের ভয়ে আমার বড় ভাই যুক্তরাজ্য প্রবাসী মোস্তফা কামাল দেশে আসতে পারছেন না। তিনি দেশে আসলে ওই ভূমি খেকো চক্র তার উপরও হামলা চালিয়ে প্রাণনাশ করতে পারে। তারা আমাদের পরিবারের সহায় সম্পদ লুট করে নিতে আমাদের শেষ করে দিতে চায়। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’ তিনি বলেন, ‘আসামিরা এখনও আমাদেরকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। সেই সাথে আসামিরা আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে একাধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, আমরা ন্যায় বিচার চাই।’

 

হত্যা মামলাটি যেকোনো নিরপেক্ষ সংস্থার মাধ্যমে তদন্ত এবং হত্যাকারী দবির মিয়া তার স্ত্রী লাভলী বেগম, আওয়ামী লীগ নেতা শিহাব মিয়া ও মিশুসহ অন্যান্যদের দ্রুত গ্রেপ্তারের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান জুবের।

 

এব্যাপারে মামলা তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আতিকুল আলম খন্দকার জানান, এ মামলার মূল আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আসামিদের অবস্থান নিশ্চিত হতে পারলেই তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর