ঢাকা ৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৯:২৯ অপরাহ্ণ, মে ২২, ২০২৫
লুৎফুর রহমান শাওন, ছাতক
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকতা (পিআইও) কেএম মাহবুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধে টিআর, কাবিখা, কাবিটা ও এডিপির ২২৭টি প্রকল্পের ঘুসের টাকা নিয়ে উদাও হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা অনুপস্থিত থাকায় প্রকল্পের কমিটির সদস্যরা পিআইও কার্যালয়ে কাজ করে বিলের টাকা পাচ্ছেন না। প্রকল্প কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্থানীয়রা ইউএনও বরাবরেও অভিযোগ করেছেন বলে জানা গেছে। ইউএনও’র সাথে পিআইও’র বাকবিতন্ডার পর গত এক সপ্তাহ ধরে তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ছাতকে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) হিসেবে যোগ দেন কেএম মাহবুব রহমান। তিনি যোগদানের পর থেকে উপজেলায় বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তাবায়নে লাখ লাখ টাকার ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ২০২৪-২০২৫ইং অর্থ-বছরের টিআর, কাবিখা, কাবিটা ও এডিপির ২২৭টি প্রকল্পের বিষয়ে সম্প্রতি ঘুস গ্রহণের অভিযোগ উঠে ছাতক উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা (পিআইও)র বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় পিআইওকে গত ১৬ মে ইউএনও’র সাথে পিআইও’র বাকবিতন্ডার ঘটনা ঘটে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পিআইও কার্যালয়ের কার্য-সহকারি নাজমুল ইসলামও। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয় এবং প্রকল্পের কোনো ধরণের ঘুস গ্রহণের অভিযোগ ছাড় দেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন ইউএনও।
পরদিন শনিবার অফিস করেননি পিআইও কেএম মাহব্বু রহমান। ওইদিন রাতে ইউএনও বরাবরে তিন দিনের ছুটি চেয়ে একটি আবেদন লিখে ইউএনওকে না দিয়েই নিজ কার্যালয়ের টেবিলে রেখে ছাতক ছেড়ে যান পিআইও কেএম মাহব্বু রহমান।
একটি সুত্র জানিয়েছে, ঘুষ-দুর্নীতির টাকা হজম করতেই ওই পিআইও ছাতকের ইউএনওকে অভিযুক্ত করে জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর কৌশলে ছাতক থেকে বদলির চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন ওই পিআইও কেএম মাহবুব রহমান। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি ১৪ মে পর্যন্ত ট্রেনিংয়ে থাকা অবস্থায় দুই মাস ছাতক উপজেলার পিআইও’র অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন দোয়ারাবাজার উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা (পিআইও) লুৎফুর রহমান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার কার্যসহকারি নাজমুল ইসলামকে ছাতক থেকে রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলায় বদলি করা হয়। পিআইও’র ঘুষ-দুর্নীতি প্রকাশের ভয়ে এখান থেকে তাকে বদলির চেষ্টা চালানো হয় বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
উপজেলার কালারুকা ইউনিয়নের মুক্তিরগাঁও গ্রামের ইজাজুল হক রনি বলেন, তিনি মুক্তিরগাঁও গ্রামের রাস্তার উভয় পাশে মাটি ভরাট প্রকল্প কাজের সেক্রেটারি। তার কাছ থেকে সরকারি খরচের নামে ২৪ হাজার ৫শ’ টাকা নিয়েছেন পিআইও কেএম মাহবুবুর রহমান।
একই ইউনিয়নের হাসনাবাদ-নয়া লম্বাহাটি রাস্তায় মাটি ভরাট প্রকল্প কাজের জন্য সেক্রেটারি বাহাউদ্দিন শাহী বলেন, আমার কাছে ১২ হাজার টাকা চেয়েছেন ওই পিআইও। এছাড়া বিভিন্ন প্রকল্পের খরচের নামে ওই পিআইও একাধিক প্রকল্প কমিটির কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা পিআইও অফিসের কার্য সহকারি নাজমুল ইসলাম এসব ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ইউএনও ও পিআইওর মধ্যে বাকবিতন্ডা ঘটনা ঘটেছে। গত শনিবার থেকে পিআইও সাহেক কার্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন নেই। তিনি শুনেছেন ওই পিআইও তাকে এখান থেকে বদলি করিয়েছেন।
এবিষয়ে উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা (পিআইও) কেএম মাহবুবুর রহমান তার বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এসব কিছুই ইউএনও সাহেবের ষড়যন্ত্র, তিনি আমাকে ডেকে নিয়ে শারিরিক ভাবে লাঞ্চিত করে আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন। এবিষয়ে গত ১৮মে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকসহ আমাদের মহাপরিচালককে বরাবরেও একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.তরিকুল ইসলাম বলেন, পিআইও কার্যালয়ে কার্য-সহকারি সাথে প্রকল্প কর্মকর্তা কেএম মাহবুব রহমানের কিছু ঝামেলা হয়েছিল। এজন্য তাকে ডেকে বকাঝকা করে সর্তক করা হয়েছিলো, লাঞ্চিত করা হয়নি। ওই প্রকল্প কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে আমার দপ্তরে। এসব বিষয়ে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকেই জানানো হয়েছে।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by Yellow Host