নৌ-পুলিশের বিরুদ্ধে নৌযান থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ

প্রকাশিত: ১১:৩২ অপরাহ্ণ, মে ৩১, ২০২৫

নৌ-পুলিশের বিরুদ্ধে নৌযান থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ

মো. আব্দুল শহীদ, সুনামগঞ্জ
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা নদী, তাহিরপুর যাদুকাটা নদী, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার আবুয়া নদী,জামালগঞ্জের রক্তি নদীতে বালু ভর্তি নৌযান থেকে টুকের বাজার নৌ-পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে বাদাঘাট এলাকার বাসিন্দা আল সাইফ নৌযানের ব্যবসায়ি আতাউর রহমান প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে নৌ-পথে চাঁদাবাজি বন্ধে অভিযোগও করেছেন। তিনি জানান, ছাতক থেকে আমদানিকৃত বালু ভর্তি বাল্কহেড নৌকা সুরমা নদী হয়ে যাওয়ার পথে গত বুধবার (২৮ মে) দিবাগত রাত ১১ টার সময় টুকের বাজার নৌ-পুলিশ নৌকা আটক করে নগদ তিন লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে আমার কাছে। পরে ফাঁড়ি ইনচার্জ দিলীপ বড়ুয়া এবং মুন্সি হাফিজ উদ্দিন মামলার ভয় দেখিয়ে নগদ দুই লক্ষ টাকা আদায় করার পর বৃহস্পতিবার (২৯ মে) ভোর সাড়ে ৫ টার সময় নৌকা ছাড়িয়ে নিয়ে যাই। কিন্তু এই বালু পরিবহনে পথে পথে চাঁদা আদায় হচ্ছে। চাহিদা মত টাকা না দিলে নৌকার সুকানী ও শ্রমিকদের নির্যাতন করা হয়। এর ফলে ব্যবসা বানিজ্যকে ক্ষতির মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এক নৌকা বালু বিক্রি করে ৩/৪ হাজার টাকা ইনকাম করা যায়। পুলিশ যদি রক্ষক হয়ে ভক্ষকে পরিনত হয় তাহলে নদীতে ব্যবসা করা সম্ভব হবে না। ঘটনার রাতে আমি কোন উপায় না পেয়ে রাত ৩ টার সময় চড়া সুদে দুই লক্ষ টাকা এনে নৌ-পুলিশের কাছ থেকে উদ্ধার হই। টুকের বাজার নৌ-পুলিশ নেত্রকোনা লিপসা নৌ-পুলিশ,লালঘাট নৌ-পুলিশকে দিয়ে আবারও আমাকে হয়রানি করে তারা চাঁদার টাকা বাগ বাটোয়ারা করে নেন। চাঁদা গ্রহনের পর আমাকে শাসিয়ে দেয় যে এ বিষয়ে জানা জানি হলে নদীতে তোর নৌযান চলবে না। এমন মামলা দেব সারা জীবন জেলে পঁচে মরতে হবে।

এ বিষয়ে মেসার্স ওমর এন্ড ফাতেমা এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটার কামাল হোসেন জানান,টুকের বাজার নৌ-পুলিশের চাঁদাবাজির কারণে আমরা ব্যবসায়ী শ্রমিক সবাই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। উচ্চ আদালতের মামলা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে যাদুকাটা এবং ধোপাজান নদী বন্ধ হওয়ার পর ছাতক,ভোলাগঞ্জ ও জাপলং থেকে বালু আমদানি করি। বুধবার (২৮ মে) বাদাঘাট এলাকার ব্যবসায়ি আতাউর রহমান আমার ডাম্প থেকে বালু লোড করে নেত্রকোনা বরাইল টাকরাকোনা যাওয়ার পথে নৌ-পুলিশ নৌকা আটকিয়ে তিন লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। পরে রাত তিনটার সময় দুই লক্ষ টাকা দিয়ে বৃহস্পতিবার ভোরে নৌকা ছাড়িয়ে নিয়ে যান। গত দুই সপ্তাহ আগে বিশ্বম্ভরপুর ফতেপুর ইউপির আলীপুর গ্রামের জিয়া এন্টারপ্রাইজের ব্যবসায়ি শফিকুল ইসলামের নৌকা আটকিয়ে সদর থানা পুলিশ, সাংবাদিক, বৈষম্যবিরুধী ছাত্র আন্দোলনের নামে নৌ-পুলিশ আমার কাছ থেকে নগদ ৩০ হাজার টাকা চাঁদা নেয়। নৌ-পুলিশ আমাদের সাথে কনটাক্ট করেছে ডাম্পে বডি লোড হলে প্রতি নৌকা বাবদ দুই হাজার টাকা দিতে হবে। আমার কাছ থেকে দুই হাজার টাকা চাদা নেওয়ার পর যখন ব্যবসায়িরা মালামাল নিয়ে যাওয়ার পথে আবারও ঐ বডি আটকিয়ে ৫০/৬০ হাজার টাকা চাঁদা নেন। আমরা চাই এই অবৈধ চাঁদাবাজি চিরতরে বন্ধ হোক।

এদিকে তাহিরপুর বালুজুরি গ্রামের মাশাল্লাহ এন্টারপ্রাইজের ব্যবসায়ি ফেরদৌস মিয়া জানান, রামনগর এলাকায় বালু লোড করা অবস্থায় আমার বডি আটকিয়ে দশ হাজার টাকা চাঁদা নেয় নৌ-পুলিশ। বডি পুরো পুড়ি লোড না হওয়ায় দেড়-দুই হাজার বালুর জন্য রামনগর থেকে কামাল হোসেনের সুনামগঞ্জ ডাম্পে গিয়ে বালু লোড করি। সেখানে গিয়ে আবারও ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। পরে ডাম্পের মালিক কামাল হোসেন বিশ হাজার টাকা নৌ-পুলিশকে দেওয়ার পর বডি ছাড়িয়ে নিয়ে যাই। তাদের কথা মত টাকা না দিলে নৌকা আটকে রেখে শ্রমিকদের মারধর করে। নৌ-পুলিশের চাঁদাবাজি বন্ধে এবং আমাদের ব্যবসা রক্ষার্থে জেলা পুলিশের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

বিশ্বম্ভরপুর ভাদেরটেক গ্রামের এমবি খাদেজা পরিবহনের ব্যবসায়ি মো আব্দুল মন্নান জানান, গত মঙ্গলবার (২৭ মে) বালু ভর্তি বাল্কহেড নৌকা নিয়ে যাওয়ার পথে টুকের বাজার নৌ-পুলিশ পাঁচ হাজার,মান্নানঘাট নৌ-পুলিশ পনের হাজার,লিপসা নৌ-পুলিশ পঞ্চাশ হাজার টাকা চাঁদা নেয় আমার কাছ থেকে। আমরা সুনামগঞ্জ থেকে নৌযান নিয়ে যাওয়ার পথে টুকের বাজার নৌ-পুলিশে ইশারায় আমাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে থাকে। পরে তারা বাগ বাটোয়ারা করে নেয়।

বিশ্বম্ভরপুর ফতেপুর এলাকার জিয়া নৌযানের ব্যবসায়ি শফিকুল ইসলাম জানান,নৌ-পুলিশের কাছে আমরা ব্যবসায়িরা জিম্মি হয়ে পড়েছি। তাদেরকে নিয়মিত চাঁদা দেওয়ার পরও বিভিন্ন স্থানে নৌযান আটকিয়ে ৫০/৬০ হাজার টাকা অবৈধভাবে আদায় করে থাকে। প্রতিবাদ করলে মামলার ভয় দেখায়।

সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো আবুল কালাম বলেন,শুনেছি কামাল হোসেনের বাল্কহেড নৌকা আটক করেছে। তার নৌকা থেকে যদি আমার থানার নাম ভাঙ্গিয়ে কোন ধরনের আর্থিক লেনদেন করে থাকে তাহলে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

টুকের বাজার নৌ-পুলিশের ইনচার্জ দিলীপ বড়ুয়া নৌযানে চাঁদা দাবির বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন,আমার ব্যারাকের কোন লোক চাঁদাবাজির সাথে জড়িত নেই।

নৌ-পুলিশ সিলেট অঞ্চলের এসপি ফাল্গুনী মুখপাত্র বলেন,আমি টুকের বাজার নৌ-পুলিশের ইনচার্জ এর সাথে কথা বলে তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনার সত্যতা প্রমাণ হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর