নীলাদ্রি লেকেরপাড়েই অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ, বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা

প্রকাশিত: ৮:০৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ২০, ২০২৫

নীলাদ্রি লেকেরপাড়েই অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ, বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা

তৌফিকুর রহমান তাহের, সুনামগঞ্জ
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার জনপ্রিয় পর্যটন স্পট নীলাদ্রি লেকের পাড়ে পল্লী বিদ্যুৎ মিটার থেকে অবৈধ লাইন সংযোগের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা জোনাল অফিস কর্তৃপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলছে এসব অপকর্ম। এতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একটি মিটার থেকে অন্তত ১৫-২০ টি হাউজবোটে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকেন বিদ্যুৎ চোরাকারবারিরা। এসব সংযোগের বিল আবার ওই মিটারে দৃশ্যমানও হয় না। এতে ষ্পষ্ট বোঝা যায় যে, বৈদ্যুতিক মিটারের নিচের মেইন লাইন থেকে সরাসরি এসব সংযোগ স্থাপন করে তারা অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন। ফলে খোদ বিদ্যুৎ বিভাগও প্রতি মাসের বড় অঙ্কের ভর্তুকির শিকার হচ্ছে।
গত শুক্রবার (১৮ জুলাই) নীলাদ্রি নৌকা ঘাট এলাকায় সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়- স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন ক্লিনিকের পেছনের দোকান থেকে বিভিন্ন হাউজবোটে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। রাতভর অবৈধ এই বিদ্যুৎ ব্যবহার করলেও দিনের বেলায় সেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়। মূলত, ভ্রাম্যমান কোনো অভিযান থেকে বাঁচতে এই কৌশল অবলম্বন করে দুষ্কৃতিকারীরা।
এছাড়াও আশপাশের মালিক বিহীন পড়ে থাকা কয়লার ডিপোর বিদ্যুতিক মিটার থেকে স্থানীয় কিছু লোক মালিকানা দাবি করে রাতভর বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে দেখা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নীলাদ্রির পাশের এক কয়লার ডিপোর ম্যানেজার বলেন, পরিত্যাক্ত মালিকবিহীন কয়লার ডিপোর মিটারগুলো সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিলে এর সমাধান মিলবে। নয়তো এভাবে দিনের পর দিন অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার হবে। কর্তৃপক্ষ তাদের ন্যায্যতা হারাবে এবং প্রতি মাসে বড় অঙ্কের ভর্তুকির শিকার হবে। এছাড়াও, যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনারও আশঙ্কা করেন তিনি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, হাওরের বুক জুড়ে চলাচল করা হাউজবোটগুলোতে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবহার করে চালানো হচ্ছে ফ্যান, লাইট, এসি, সাউন্ড, সিস্টেমসহ নানা ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম। যা চরম নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করছে। পানির সাথে লেগে থাকা এসব নৌযানে এমন অবৈধ সংযোগ স্থানীয়দের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তারা বলেন, অধিকাংশ হাউজবোটেই বৈধ মিটার বা অনুমোদিত সংযোগ নেই। দোকান, কয়লার ডিপো ও বাসাবাড়ি থেকে সরাসরি সংযোগ টেনে বিদ্যুৎ নেওয়া হচ্ছে।
একই অবস্থা এশিয়ার বৃহত্তম শিমুল বাগান সংলগ্ন মানিগাঁও ও বারিক টিলা এলাকাতেও, যেখানে নোঙর করা হাউজবোটগুলোতে আলো ও শব্দে রাত জেগে থাকে পর্যটন এলাকা।
বিশেষজ্ঞদের মতে অনুমোদনহীন বিদ্যুৎ সংযোগ আইন লঙ্ঘনের পাশাপাশি প্রাণহানির সম্ভাবনা এবং সরকারের রাজস্ব ক্ষতি ঘটাচ্ছে।
তবে এ বিষয়ে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল হাসেম জানান, হাউজবোটগুলোতে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ একটি গুরুতর বিষয়। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সুনামগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির তাহিরপুর জোনাল অফিসের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার মো. আলাউল হক সরকার বলেন- ‘অনুমতি ছাড়া বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর