ঢাকা ৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৩:৪৯ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১২, ২০১৮
খলিলুর রহমান
সিলেটে পল্লীবিদ্যুতায়নে লোডশেডিং ও গ্রাহক দূর্ভোগ চরমে হয়ে উঠেছে। গ্রীষ্মকালে দৈনিক গড়ে ১৫-১৬ ঘন্টা তাদের কাটাতে হয় বিদ্যুহীন। পল্লীবিদুৎ অঞ্চলে অনেকের ঘরে ফ্রিজ-টিভি থাকলে মাছ-মাংস ও কাচাদ্রব্যাদি রাখতে পারেন না গ্রাহকরা। টিভিতে দেশবিদেশের সংবাদসহ সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষণীয় প্রোগ্রামও দেখতে পারেন না গ্রাহক পরিবার। আর এহেন দুর্ভোগের মূলে পল্লীবিদ্যুতের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দলীয়করণ ও নানা অনিয়ম-গাফিলতি দায়ী বলে সচেতন মহল মনে করছেন।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো কাজের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠান ও সরকার থেকে কাজের মূল্য ও বিল পুরোপুরি পেয়ে থাকে থাকলেও ঠিকাদাররা কাজের বিনিময়ে গ্রাহকদের কাছ থেকেও অবৈধভাবে কাড়ি কাড়ি টাকা আদায় করে নেয়। স্থানীয় একশ্রেণির দালালদের মাধ্যমে ঠিকাদাররা এ টাকা আদায় করে থাকে। টাকা না দিলে ঠিকাদাররা ঠিককমত কাজ করেন না। এমনকি যারা টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন তাদের বাদ দিয়েই বিদ্যুতায়ন করা হয়ে থাকে। ফলে পল্লীবিদুৎ অঞ্চলে দিনের পর দিন জনদুর্ভোগ লেগেই থাকে। পল্লীবিদ্যুৎ বোর্ডের আওতাধীন সিলেট ও সুনামগঞ্জ অঞ্চলে এমন অভিযোগ রয়েছে বিস্তর। ফলে সিলেট ও সুনামগঞ্জে বিঘিœত হচ্ছে সরকারের শতভাগ বিদ্যুতায়নের কাজ।
বাংলাদেশ পল্লীবিদ্যুতায়ন বোর্ড (বাপবিবো) সিলেট জোন-এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মহসিন আলী ঠিকাদারদের অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির সত্যতা স্বীকার করে জানান, যে সব ঠিকাদার গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কাজ করে থাকেন তাদের চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার আওতায় নেওয়া হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে কোন গ্রাহক লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে বিহীত ব্যবস্থা নিতে কোন কার্পন্য নেই বাংলাদেশ পল্লীবিদ্যুতায়ন বোর্ড কর্র্তপক্ষের। ইতোমধ্যে বেশ কিছু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং এ ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে। তবে রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তি ও নানাবিধ জটিলতার কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম প্রকাশে অপরগতা প্রকাশ করেন তিনি।
এছাড়াও শতভাগ পল্লীবিদ্যুতায়নে এ প্রতিবেদকের কাছে স্থানীয় নানা প্রতিবন্ধকতা ও সমস্যার কথাও তুলে ধরেন প্রকৌশলী মহসিন আলী। তিনি জানান, শতভাগ বিদ্যুতায়নে আমাদের নিরলস প্রচেষ্টার কোন ত্রুটি নেই। কিন্তু বিদ্যুতের লাইন টানতে গিয়েও প্রায়ই বাঁধার সম্মুখীন হতে হয় কর্তৃপক্ষের। অনেক স্থানে ক্ষেতের জমি হলে বহুতল ভবন নির্মাণের দোহাই দিয়ে লাইন টানতে দেন না জমির মালিকরা। এছাড়াও লাইন টানতে মসজিদ মাদরাসা স্কুল কলেজও অনেক সময় অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। সরকারি রাস্তার অপ্রতূলতার কারেণেও অনেক গ্রামে ও ভাটি অঞ্চলে লাইন টানাও সম্ভব হয় না।
প্রকৌশলী মো. মহসিন আলীর দাবি, সিলেট জেলার ১৩ টি উপজেলার মধ্যে ৮টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর নাগাদ আরো ২টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন সম্পন্ন করা হবে। জেলার অন্য কয়েকটি উপজেলায় নানা প্রতিবন্ধকতা থাকায় তা দূরীকরণের চেষ্টা চলছে। অচিরেই সমস্যা ও বাঁধা দূর করে অন্য সব উপজেলাগুলোতে শতভাগ বিদ্যুতায়ন সম্পন্ন করা হবে বলে জানান তিনি।
সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জের ১০টি উপজেলার মধ্যে মাত্র ১টিতে শতভাগ বিদ্যুতায়ন সম্ভব হয়েছে বলে জানান প্রকৌশলী মো. মহসিন আলী। তিনি বলেন, ভাটি এলাকায় শতভাগ বিদ্যুতায়নে প্রকৃতিক নানা প্রতিকূলতাও রয়েছে। এতদসত্বেও সকল প্রতিকূলতা ডিঙ্গিয়ে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সুনামগঞ্জর বাকি ৯ টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায় সম্পন্ন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by Yellow Host