ঢাকা ২০শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৯:১১ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১২, ২০২০
নিজস্ব প্রতিবেদক
সম্পূর্ণ পকেট প্রতিষ্ঠানে পরিণত জেলা পরিষদ সিলেট। ভেঙে পড়েছে চেইন অব কমান্ড। ফলে দুই মেরুতে অবস্থান করছেন জেলা পরিষদ সিলেটের চেয়ারম্যান ও পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। যথাযথ সেবা পাচ্ছে না অধীনস্থ কোন প্রতিষ্ঠান ও সাধারন জনগণ। ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে মুখ লুকিয়ে থাকতে হচ্ছে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের। অসন্তোষের অনলে পুড়ছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার অ্যাসোসিয়েশন। ক্ষুব্ধ জেলা পরিষদ সিলেটের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনিক দফতর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ গণমাধ্যম কর্মীরা। ফলে ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে বর্তমান সরকারের। আর এসব ঘটছে একমাত্র ব্যক্তি জেলা পরিষদ সিলেটের প্রধান নির্বাহী দেবজিৎ সিংহের ক্ষমতার অপব্যহার, স্বৈরাচারী আচরণ ও অনিয়ম আত্মসাতের কারণেই। সরকারে সেবামূলক কাজে অবজ্ঞা অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার হয়ে জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষজন বিমূখ হয়ে পড়েছেন জেলা পরিষদ থেকে। লজ্জায় কাতর হয়ে চেয়ারে বসে থাকতে হচ্ছে ক্লিন ইমেজের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ চেয়ারম্যানকে। চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের কোন সুপারিশই সহ্য করতে পারেছেন না প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কোন সুপারিশ, আর্থিক অনুদান ও সহায়তা প্রশাসনিকভাবে কার্যকর করতে চান না প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দেবজিৎ সিংহ। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দেবজিৎ সিংহ কর্তৃক জেলা পরিষদ সিলেটের আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতার অপ্যবহারের কাছে জিম্মি চেয়ারম্যান-মেম্বার কর্মকর্তা কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত কোনো আবেদন নিবেদন ও অনুদানপত্র প্রধান নির্বাহীর সাথে দেখা ও কার্য সম্পাদন করতে পারেন না কেউ। মাসের পর মাস এমনকি বছর পর্যন্ত ধরণা দিতে হয় প্রধান নির্বাহী দেবজিৎ সিংহের অফিস বারান্দায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জনপ্রতিনিথি এ প্রতিবেদককে জানান, প্রদান নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে প্রশাসনিক বা আর্থিক কোন কার্য সম্পাদনে দেখা করতে যাবেন, তখনই দেখবেন তার অফিসের দরজা বন্ধ। এ সময় হয়তো অধঃস্তন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে বসে আছেন কোন বিষয়ে গোপন ও রূদ্ধদ্বার বৈঠকে। যে কেউই হন না কেন জেলা পরিষদ সিলেটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা বলতে হয় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিথি বা মিডিয়াকর্মী ও কর্তাব্যক্তিদের বসে কথা বলার সুযোগ নেই জেলা পরিষদ সিলেট’র নির্বাহী কর্মকর্তা দেবজিৎ সিংহের অফিসে। এমনকি জাতির সূর্যসন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধারাও অফিসে বসে কথা বলতে পারেন না। কোন কোন মুক্তিযোদ্ধাকে অনুদান বা আর্থিক সহায়তা পেতে মাসের পর মাস দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয় জেলা পরিষদ সিলেট’র নির্বাহী কর্মকর্তা দেবজিৎ সিংহের।
একজন মুক্তিযোদ্ধাকে চেয়ারম্যনের অনুদান প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দেবজিৎ সিংহের কাছে দীর্ঘ কয়েক মাস ধরণা দিতে হয়েছে। রোগাক্রান্ত একজন মিডিয়াকর্মী চেয়ারম্যানের সুপারিশকৃত ৫ হাজার টাকার অনুদান পেতে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দেবজিৎ সিংহের কাছে দীর্ঘ একমাস ধরণা দিতে হয়েছে। চেয়ারম্যানের কোন শুভেচ্ছা বিজ্ঞাপনের বিল পরিশোধ করেন না প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। দীর্ঘ একবছর হাটতে হাটেতে এক পত্রিকা কর্তৃপক্ষ তার বিল পান নি। বিলপত্র ফিরিয়ে দেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দেবজিৎ সিংহ। ফলে মিডিয়া কর্তৃপক্ষের কাছে চরমভাবে লজ্জিত হতে হয় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে। অবস্থা দৃষ্টে প্রতীয়মান হয় সিলেট জেলা পরিষদের রাষ্ট্রীয় অর্থ দেবজিৎ সিংহের একক পৈত্রিক সম্পত্তি।
জেলা পরিষদ সিলেটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দেবজিৎ সিংহের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো কোনো ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে আঁতাত, স্বজনপ্রীতি ও আত্মীয় করণের গুরুতর অভিযোগে উঠেছে। নিজের পছন্দসই ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দিতে নানা কুটকৌশল অবলম্বন করে থাকেন তিনি। অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে প্রকল্পের টাকা আত্মসাত ও ভাগবাটোয়ারা করে নিতে সিদ্ধহস্থ প্রধান এই নির্বাহী কর্মকর্তা।
এমন অভিযোগে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে তার মনোমালিন্য ও দুরত্ব চরমে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে প্রকল্পের কাজের বিল পেতে হলে খুশি করতে হয় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে। অন্যথায় বছরের পর বছর ধরনা দিয়েও বিল পান না অনেক ঠিকাদার।
জেলা পরিষদ সিলেটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কর্তৃক বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ নতুন নয়। অনিয়মের যাতাকলে পিষ্ঠ হয়ে স¤প্রতি ফুঁসে ওঠেছেন ঠিকাদাররা। ফলে অনেক প্রকল্পের কাজে ভাটা পড়ে আছে। থমকে গেছে জেলা পরিষদ সিলেটের সকল উন্নয়ন প্রকল্প। ফলশ্রæতিতে গত আগস্ট মাসে সিলেট জেলা পরিষদ কন্ট্রাক্টর ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন রাস্তায় নেমে আসে। তারা প্রতিবাদ সমাবেশ করে জেলা পরিষদ সিলেটের পধান নির্বাহী কর্মকর্তার আর্থিক কেলেঙ্কারী ও স্বরাচারী কর্মকান্ডের।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, সিলেট জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ কতিপয় কর্মকর্তা সরকারি নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে তাদের পছন্দমতো গুটিকয়েক ঠিকাদারকে টেন্ডার কারসাজির মাধ্যমে কাজ দিয়ে থাকেন। তারা অনিয়মের মাধ্যমে নগরের মেন্দিবাগ মার্কেট নির্মাণ ও জেলা পরিষদের ডাকবাংলোসহ বিভিন্ন কাজ তাদের পছন্দের ঠিকাদারদের দিয়ে রাখ লাখ টাকা ভাগিয়ে নিয়েছেন।
এছাড়া প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকল্পের কাজ না করিয়ে কোটেশনের মাধ্যমে লাখো কোটি টাকার বিল তুলে তাদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারাও করে নেন। উপরন্তু জেরা পরিষদ সিলেটের ওয়েবসাইটও উন্মুক্ত থাকে না সবার জন্য। তাই কোন প্রকার তথ্য উপাত্ত পেতে বেগ পেতে হয় অনেককে। এতে করে প্রতীয়মান হয় জেলা পরিষদ সিলেট যেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দেবজিৎ সিংহের নিজস্ব পকেট অফিস।
তবে জেলা পরিষদ সিলেটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দেবজিৎ সিংহের অনিয়ম-আত্মসাত, ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বৈরাচারী কর্মকান্ডের বিস্তারিত তথ্য ও ফিরিস্তি ইতোমধ্যে বিজয় কণ্ঠের তালাশ টিমের হাতে পৌঁছে গেছে। অচিরেই তা ক্রমান্বয়ে প্রকাশ হবে।
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য নিতে মুঠোফেনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও দেবজিৎ সিংহ এ প্রতিবেদকের মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by Yellow Host