২ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন
শতাধিক পাকা রাস্তা-ঘাট পেল সুনামগঞ্জের গ্রামীণ জনপদ

প্রকাশিত: ৬:৩৭ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৮, ২০২৫

<span style='color:#077D05;font-size:19px;'>২ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন</span> <br/> শতাধিক পাকা রাস্তা-ঘাট পেল সুনামগঞ্জের গ্রামীণ জনপদ

আব্দুল শহীদ, সুনামগঞ্জ
সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় টিআর ও কাবিটা প্রকল্পে মাটির রাস্তা এবং অন্যান্য প্রকল্প করে নির্ধারিত বরাদ্দ ব্যবহার করলেও সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস গ্রামীণ স্থায়ী পাকা সড়ক নির্মাণ করে বিশেষ আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরে প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসারের কার্যালয় অন্তত ১০০টি পাকা সড়ক নির্মাণ করে স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় সুবিধাভোগীদের প্রশংসায় ভাসছে। মাটির বদলে পুরনো রাস্তাগুলোকে ৮-১৩ ফিট প্রস্থ ও ৫০০-১০০০ হাজার মিটার দৈর্ঘ্যরে করে গ্রামীণ চলাচলের আপত স্থায়ী সুবিধা করে দেওয়া হয়েছে। ১০০টি গ্রামীণ সিসি পাকা সড়ক নির্মাণ করতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২ কোটি টাকা। এতে উপজেলার লাখো মানুষের যাতায়াত সহজ হওয়ার পাশাপাশি দৃশ্যমান হয়েছে স্থানীয় সরকারের উন্নয়নও।

সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরে সদর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে কাবিটা কর্মসূচির আওতায় ১ কোটি ৪৯ লক্ষ ২৩ হাজার ৩৬৮ টাকা এবং টিআর প্রকল্পে ১ কোটি ১৮ লক্ষ ৬০ হাজার ৭৮০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে এই বরাদ্দে ৯টি ইউনিয়নে ১০০টি পাকা ছোট সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে ৫টি কালভার্ট। এর মধ্যে ৬৫ ভাগ বরাদ্দই পাকা সড়কে ব্যবহার করা হয়েছে। বাকি বরাদ্দ মসজিদ-মন্দির উন্নয়নে ব্যবহার করা হয়েছে।
স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা জানান, বিভিন্ন সময়ে গ্রামীণ সড়কে মাটির কাজ হয়েছে। এবারও মাটির কাজের জন্য তারা প্রকল্প জমা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সংশ্লিষ্টরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সরেজমিন প্রকল্প এলাকায় গিয়ে সড়কগুলো পরিদর্শন করে সামান্য মাটির কাজ করে এই বরাদ্দে পাকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এতে বিস্মিত হন স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়রা। পরে ১০০টি সড়কের প্রকল্প গ্রহণ করে সিসি রাস্তার কাজ শুরু করা হয়। বর্তমানে প্রায় ৯০ ভাগ সড়কের কাজ শেষ হয়ে গেছে। ধীরে ধীরে এই প্রক্রিয়ায় সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অবশিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ সড়ক পাকা হয়ে যাবে বলে জানান তারা। এই সড়কগুলো স্থানীয় বাজার, সদর রাস্তাসহ গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় লিংক সড়ক হিসেবে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার মানুষজন ব্যবহার করছেন।
সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম বলেন, স্থানীয় সরকার আমাদেরকে অল্প বাজেট দেয়। এই বাজেটে অন্যান্য সময় এমপিদের লোকজনের চোখ পড়ে। যার ফলে বাজেট নয়ছয় হয়। কিন্তু এবার অল্প বাজেট দিয়েও আমরা এলাকায় একাধিক পাকা সড়ক করেছি। যদি বাজেট বাড়ানো হয় এবং স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের চাপ দেওয়া না হয় তাহলে স্থানীয় সরকারের গ্রামীণ উন্নয়ন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা যাবে।
লক্ষণশ্রী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হাফিজ উদ্দিন বলেন, আমার ইউনিয়ন বড়। কিন্তু বরাদ্দ কম। এই কম বরাদ্দেও এবার বেশ কয়েকটি পাকা সড়ক করেছি। যা দিয়ে এলাকার হাজারো মানুষের যাতায়াত সহজ হয়েছে এবং এর সুবিধা টানা কয়েক বছর ভোগ করতে পারবেন। স্থানীয় সরকারের উন্নয়নে বরাদ্দ বাড়িয়ে ইউনিয়ন পরিষদকে স্বাধীনতা দিয়ে কাজ করালে বদলে যাবে গ্রাম বাংলা-বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবু হাসনাত সরকার বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী এবার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে আমরা ১৩৫টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। এর মধ্যে ৬৫ ভাগ বরাদ্দই গ্রামীণ পাকা সড়ক নির্মাণ করে দিয়েছি। এতে লাখো মানুষের যাতায়াত সহজ হয়েছে এবং যাতায়াত ব্যবস্থাও স্থায়ী ও টেকসই হবে। ভবিষ্যতেও এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা জেরিন বলেন, সুনামগঞ্জ বৃষ্টিপ্রবণ অঞ্চল। প্রতি বছর মাটির রাস্তা তৈরি হয় আবার ধসে যায়। তাই আমরা এবারের বরাদ্দে স্থায়ী কাজ করার চেষ্টা করেছি। আমরা চেয়ারম্যান ও মেম্বারদেরকে বলেছিলাম মাটির কাজের বদলে তারা যেন পাকা সড়কের প্রকল্প দেন। তারাও সহযোগিতা করেছেন। আমরা সবাই মিলে বরাদ্দের বেশিরভাগই পাকা সড়ক নির্মাণে ব্যবহার করেছি। কাজের মান যাতে ঠিক থাকে এবং কোনও প্রকার দুর্নীতি না হয় সেজন্য আমার কঠোর নজরদারি ছিল। এই প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে স্থানীয় সরকারের কাজগুলো দৃশ্যমান হবে। মানুষও উপকৃত হবে।

সর্বশেষ ২৪ খবর