সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে পৃথক দুর্ঘটনায় ১ আনসারসহ নিহত ২

প্রকাশিত: ৭:৩৭ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৭, ২০২৫

সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে পৃথক দুর্ঘটনায় ১ আনসারসহ নিহত ২

সুয়েব রানা, জৈন্তাপুর
সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে পর্যটকদের আনন্দ ভ্রমণ মুহূর্তেই রূপ নিল গভীর বিষাদে। মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে একই মহাসড়কে সংঘটিত দুটি পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় পর্যটকবাহী বাসের এক সহকারী (হেলপার) এবং একজন আনসার সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন।

মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) এই মর্মান্তিক ঘটনাগুলো ঘটে। বেপরোয়া গতি এবং অসতর্কতা এই দুই তাজা প্রাণ ঝরে পড়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যা স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদের মধ্যে শোকের ছায়া ফেলে দিয়েছে।
দুর্ঘটনার পরপরই খবর পেয়ে তামাবিল হাইওয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে। উদ্ধারকার্য ত্বরান্বিত করতে এবং মহাসড়কের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হাইওয়ে পুলিশের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যোগ দেয় জৈন্তাপুর মডেল থানা পুলিশ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি চৌকস দল। যৌথ বাহিনীর এই সম্মিলিত তৎপরতায় দ্রুততম সময়ে হতাহতদের উদ্ধার ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।

প্রথম দুর্ঘটনাটি ঘটে সকালের শুরুতেই। সকাল ৯টা ১০ মিনিটের দিকে মহাসড়কের হরিপুর বাজার ও করিচের পুলের মধ্যবর্তী স্থানে ঢাকা থেকে আসা একটি পর্যটকবাহী বাসের সঙ্গে বিপরীতমুখী একটি পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই বাসের সহকারী (হেলপার) মোহাম্মদ জিহাদ নিহত হন। নিহত জিহাদ নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানার হাজিগঞ্জ এলাকার নুরুল হক নুরার ছেলে। তিনি জীবিকার তাগিদে পর্যটকবাহী ওই বাসে কাজ করছিলেন। এই ঘটনায় বাস ও পিকআপের আরও অন্তত ১০ জন যাত্রী আহত হন। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সহায়তায় দ্রুত নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে আইনি প্রক্রিয়া শেষে ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই দুপুরের দিকে একই মহাসড়কের হরিপুর সাত নম্বর কুপ এলাকায় ঘটে দ্বিতীয় দুর্ঘটনাটি। ঢাকা মিরপুর থেকে ছেড়ে আসা জাফলংগামী একটি পর্যটকবাহী মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক আনসার সদস্যকে চাপা দেয়। নিহত ওই আনসার সদস্যের নাম মোস্তফা। তিনি শেরপুর জেলার নকলা থানার বারৈকান্দি গ্রামের বাসিন্দা এবং হরিপুর গ্যাস ফিল্ডে কর্মরত ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, মাইক্রোবাসটি প্রথমে একটি সিএনজি অটোরিক্সার সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটায় এবং এরপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের একটি দোকানের বারান্দায় উঠে যায়। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা মোস্তফা ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। এই ঘটনায় সিএনজি চালকসহ আরও ৪ জন গুরুতর আহত হন, যাদের তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

দুটি দুর্ঘটনাই নিশ্চিত করেছেন তামাবিল হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। তিনি জানান, দুর্ঘটনার খবর পাওয়া মাত্রই তিনি তার টিম নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান। পর্যটকদের ভিড় এবং মহাসড়কের ব্যস্ততা সামাল দিতে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা দিনভর অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। ওসি হাবিবুর রহমান নিজে উপস্থিত থেকে উদ্ধারকাজ তদারকি করেন। বিশেষ করে জৈন্তাপুর মডেল থানা পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর তাৎক্ষণিক সহযোগিতায় মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হতে পারেনি এবং আহতরা দ্রুত চিকিৎসা সেবা পেয়েছেন। এই সমন্বিত উদ্যোগের ফলে বড় ধরণের বিশৃঙ্খলা এড়ানো সম্ভব হয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনা ও সার্বিক নিরাপত্তা বিষয়ে তামাবিল হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধানই আমাদের মূল ব্রত। দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও জৈন্তাপুর থানা পুলিশের সহযোগিতায় আমরা দ্রুত উদ্ধারকাজ শেষ করতে পেরেছি। পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে প্রশাসন সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে, তবে চালকদের আরও বেশি দায়িত্বশীল ও ট্রাফিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। একটি দুর্ঘটনা কেবল একটি প্রাণ কেড়ে নেয় না, বরং একটি পরিবারের সারা জীবনের স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করে দেয়।

দিনশেষে হাসপাতালের মর্গে স্বজনদের আহাজারি আর মহাসড়কের রক্তমাখা পিচ যেন এক নিদারুণ বাস্তবতার সাক্ষী হয়ে রইল। কর্মঠ আনসার সদস্য মোস্তফা কিংবা জীবিকার সন্ধানে বাসে থাকা তরুণ হেলপার জিহাদ-কেউই জানতেন না, আজকের দিনটিই হবে তাদের জীবনের শেষ দিন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ক্লান্তিহীন পরিশ্রম হয়তো সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছে, কিন্তু ঝরে যাওয়া প্রাণগুলো আর ফিরবে না। এই অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু আবারও মনে করিয়ে দিল, সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। সচেতনতা আর সাবধানতাই পারে এমন করুণ মৃত্যুর মিছিল থামাতে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর