মিরপুরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৬

প্রকাশিত: ১১:২৪ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৪, ২০২৫

মিরপুরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৬

নিহতদের মুখ ঝলসে গেছে * পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ টেস্ট * ছবি হাতে স্বজনদের হাতে আহাজারি


বিজয়ের কণ্ঠ ডেস্ক
ঢাকার মিরপুরের রূপনগর এলাকায় পোশাক কারখানা ও রাসায়নিকের গুদামে অগ্নিকাণ্ডে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৬ জন। সাড়ে সাত ঘণ্টা পরও নেভানো যায়নি রাসায়নিকের গুদামের আগুন।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। প্রাথমিকভাবে নিহতদের নাম-পরিচয় জানাতে পারেননি তিনি।
এ ঘটনায় দগ্ধ হয়ে তিনজন জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান।
মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে রূপনগরের শিয়ালবাড়ি এলাকার কসমিক ফার্মা নামের একটি কেমিকেল গোডাউন এবং পাশের পোশাক কারখানায় আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। পর্যায়ক্রমে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট সেখানে নিয়ে আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেয়। তারা পোশাক কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলেও রাসায়নিকের গুদামে সন্ধ্যার পরও আগুন জ্বলছিল।
ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম চৌধুরী বিকালে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, ফায়ার কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই প্রতিষ্ঠানে একসঙ্গে আগুন দেখেছেন। কেমিকেল গোডাউনে নাকি গার্মেন্টস কারখানা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এদিকে রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর এলাকায় গার্মেন্টস ও কেমিক্যাল গোডাউনে অগ্নিকাণ্ডে এ পর্যন্ত ১৬ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। তবে, তাদের পরিচয় এখন পর্যন্ত শনাক্ত সম্ভব হয়নি।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, আগুনে মৃতদের মুখ পুরো ঝলসে গেছে। পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষা প্রয়োজন।
সন্ধ্যায় এক ব্রিফিংয়ে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান, চারতলা ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার বিভিন্ন জায়গা থেকে মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তিনি বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমরা ১৬টি মরদেহ উদ্ধার করেছি। প্রচণ্ড তাপে তাদের মুখ সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে, তাই পরিচয় শনাক্ত সম্ভব হচ্ছে না। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমেই পরিচয় শনাক্ত করতে হবে।’
নিহতরা দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার মাঝখানে আটকা পড়েছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল বলেন, ‘রাসায়নিক বিস্ফোরণ থেকে সৃষ্ট বিষাক্ত গ্যাসের কারণে তারা অচেতন হয়ে সঙ্গে সঙ্গে মারা যান।’ ‘আগুন খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হয়। ভেতরে আটকা পড়া ব্যক্তিরা তখন জ্ঞান হারান এবং আর বের হতে পারেননি,’ বলেন তিনি।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের মোট ১২টি ইউনিট আগুন নির্বাপনে কাজ করে।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, সন্ধ্যা পর্যন্ত গার্মেন্টস অংশের আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে, তবে পাশের রাসায়নিক গুদামে আগুন এখনো জ্বলছে।
রাসায়নিক গুদামে প্রবেশ করা এখনো বিপজ্জনক বলে জানান লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল। তিনি বলেন, ‘গুদামে উদ্ধার অভিযান শুরু করা যায়নি, কারণ ভেতরে প্রবেশ করা নিরাপদ নয়। আমরা প্রযুক্তিÑযেমন লুপ মনিটর ও ড্রোন ব্যবহার করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। ওই অংশের আগুন এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি, আরও সময় লাগবে।’
স্থানীয় শ্রমিক ও বাসিন্দাদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘ওই গুদামে ৬-৭ ধরনের রাসায়নিক রাখা ছিল। এর মধ্যে ব্লিচিং পাউডার, পটাশ, এনজাইম, লবণ ও হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডসহ বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে বলে জানা গেছে। ভেতরে এখনো আগুন জ্বলছে, ধোঁয়া বের হচ্ছে, নেভাতে আরও সময় লাগবে।’
গার্মেন্টস অংশ থেকে উদ্ধার করা ১৬টি মরদেহ শনাক্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে বলে জানান তিনি।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, পোশাক কারখানা ও রাসায়নিক গুদামÑদুটির কোনোটির অগ্নিনিরাপত্তা লাইসেন্স বা অনুমোদন ছিল না।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর