ঢাকা ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৮:০০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৫, ২০২৫
বিজয়ের কণ্ঠ ডেস্ক
রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত পরিষদের উদ্যোগে শুরু হয়েছে ‘আন্তর্জাতিক খতমে নবুয়ত মহাসম্মেলন’। শনিবার সকাল ৯টায় আনুষ্ঠানিকভাবে এ সম্মেলন শুরু হয়। এতে বাংলাদেশসহ পাঁচটি দেশের শীর্ষ আলেমদের যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। মহাসম্মেলনকে কেন্দ্র করে এদিন দেশের বিভিন্ন স্থানের আলেম-ওলামা ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ভোর থেকেই সম্মেলনস্থলে আসতে দেখা যায়।
কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন- জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম পাকিস্তানের সভাপতি মাওলানা ফজলুর রহমান, জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের (ভারত) সভাপতি মাওলানা সাইয়্যিদ মাহমুদ মাদানি, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া পাকিস্তানের মহাসচিব মাওলানা হানিফ জালন্দরি, ইন্টারন্যাশনাল খতমে নবুওয়ত মুভমেন্টের ওয়ার্ল্ড নায়েবে আমির শায়খ আব্দুর রউফ মক্কি,পাকিস্তানের ইউসুফ বিন্নুরী টাউন মাদ্রাসার নায়েবে মুহতামিম ড. আহমাদ ইউসুফ বিন্নুরী, পাকিস্তানের মাওলানা ইলিয়াছ গুম্মান, মিসরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শায়খ মুসআব নাবীল ইবরাহিম।
সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির মাওলানা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল মালেকসহ দেশের শীর্ষ আলেম ও রাজনীতিবীদরা উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলনে সব বিষয়ে সমঝোতা করা গেলেও আকিদার (ধর্মীয় বিশ্বাস) বিষয়ে কোনো সমঝোতা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের সভাপতি ও বিশ্বের প্রভাবশালী আলেম মাওলানা সাইয়েদ মাহমুদ মাদানী। তিনি বলেন, আমাদের নবীর পরে কোনো নবী নেই। যারা এটা মানবে না তারা ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে; আর যারা তাদের মানবে তারাও ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে।
আকিদার বিষয়ে কোনো সমঝোতা নয় উল্লেখ করে মাহমুদ মাদানী বলেন, অনেক বিষয়ে সমঝোতা করা গেলেও আকিদার বিষয়ে কোনো সমঝোতা সম্ভব নয়। বিশেষ করে আকিদা যখন রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কেন্দ্র করে আসে, তখন সমঝোতার প্রশ্নই ওঠে না। আমাদের দায়িত্ব হলো গ্রামে গ্রামে প্রত্যেকের কাছে পৌঁছা। খতমে নবুওয়ত রক্ষা করা। আমরা খতমে নবুওয়াত সংরক্ষণে কাজ করব। ইনশাল্লাহ এর মাধ্যমে আমরা মহান আল্লাহর ক্ষমা প্রাপ্ত হবো।
এদিকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণাসহ খতমে নবুয়ত পরিষদের দাবিদাওয়া নিয়ে সংসদে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি ‘আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’ সংবিধানে পুনর্বহাল করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, যারা আল্লাহর রাসুলকে মানে না তারা মুসলিম হতে পারে না। এরসঙ্গে বিএনপি একমত। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণাসহ খতমে নবুয়ত পরিষদের দাবিদাওয়া নিয়ে সংসদে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সালাহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সারা বিশ্বের জন্য রহমত হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে। আমরা মুসলিমরা বিশ্বাস করিÑ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ। তিনি আখেরি নবী; তার পরে কোনো নবী বা রাসুল আসবেন না। যারা এর পরে নিজেকে নবী দাবি করে, তারা এই বিশ্বাসের বাইরে।
তিনি বলেন, আমরা আখেরি নবী হিসেবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর বিশ্বাস করেই কালেমা পড়ে মুসলিম হয়েছি। বাংলাদেশে এই পরিচয়কে আমরা সম্মান করি। আল্লামা ইকবালের ভাষায়Ñ যদি মিল্লাতের একাত্মতায় আমরা এক থাকি, কেউ আমাদের আলাদা করতে পারবে না।
এদিকে জামায়াত ক্ষমতায় গেলে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, আজকের এই সমাবেশে শুধু বাংলাদেশের মুসলমান নয়Ñ গোটা মুসলিম বিশ্বের প্রতিনিধিরা উপস্থিত হয়েছেন। কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণার বিষয়ে সবার অবস্থান এক।
তিনি আরও বলেন, রাসুল সা. বহু হাদিসে ঘোষণা দিয়েছেনÑ তিনিই শেষ নবী, তার পরে আর কোনো নবী আসবে না। এই আকিদা ইসলামি উম্মাহর সর্বসম্মত বিশ্বাস। বাংলাদেশের জনগণ যদি আমাদের নির্বাচিত করে তাহলে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা করা হবে, ইনশাআল্লাহ।
এদিকে সম্মেলনের মঞ্চ থেকে নতুন চার কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফ্ফুজে খতমে নবুওয়ত বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা করা না হলে জাতীয় ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলন থেকে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
ঘোষিত চার কর্মসূচি হলোÑআগামী বছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত আলেম-ওলামা ও তৌহিদি জনতার গণস্বাক্ষর গ্রহণ; মে ও জুন মাসে দেশের প্রতিটি জেলার ডিসিকে স্মারকলিপি প্রদান; জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে প্রতিটি বিভাগে পর্যায়ক্রমে বিভাগীয় খতমে নবুওয়ত সম্মেলন আয়োজন।
এরপরও দাবি আদায় না হলে পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণে দেশের প্রতিনিধিত্বশীল আলেম-ওলামাদের নিয়ে ডিসেম্বরে জাতীয় ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলন করবে খতমে নবুওয়ত।
প্রসঙ্গত, কাদিয়ানিদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘আন্তর্জাতিক খতমে নবুওয়ত মহাসম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। খতমে নবুয়ত সংরক্ষণ পরিষদের উদ্যোগে এ আয়োজনে অংশ নিয়েছেন দলমত নির্বিশেষে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ধর্মপ্রাণ মুসলিম জনতা। এদিন সকাল ৯টায় এ সম্মেলন শুরু হয়। এতে বাংলাদেশসহ পাঁচটি দেশের আলেম-ওলামারা যোগ দেন।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by Yellow Host