ঢাকা ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২:৩০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২০, ২০১৯
নিজস্ব প্রতিবেদন
সিলেটের কানাইঘাটের সিমান্তবর্তী লোভাছড়া পাথর কোয়ারীতে পাথরখেকু চক্রের ধ্বংসলীলা চলছে। প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকন্যা লোভা নদীর পানি প্রবাহের গতিপথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। গতিপথে অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি করে পাথর উত্তোলন করাতে সেগুলো এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন এসব অবৈধ পাথর কোয়ারী বা গর্ত মালিকদের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোনরূপ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করাতে তারা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তবিত হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও বিনষ্ট হচ্ছে সরকারি ভূ-সম্পদ। সেই সাথে কোয়ারীতে আধিপত্য এবং পাথরের গর্তের মালিকানা ও দখল নিয়ে মারামরিসহ কোটি কোটি টাকার লীলা খেলা চলছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন।
ক্ষোভের সাথে এলাকাবাসী জানান, অবৈধ পাথর কোয়ারীর নিয়ন্ত্রণকারী চক্রটি প্রতিদিনই প্রশাসনসহ বিভিন্ন মহলের নাম ভাঙিয়ে নামে বেনামে চাঁদাবাজিতে লিপ্ত রয়েছে। তাদেরকে রীতিমতো চাঁদা প্রদান করে বেঙের ছাতার মতো নতুন নতুন কোয়ারী গড়ে উঠছে। অরতি ও বেআইনীভাবে এসব পাথরখেকুরা যত্রযত্র গর্ত সৃষ্টি করে পাথর উত্তোলণ করাতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। সেই সাথে নষ্ট হচ্ছে প্রকৃতির নান্দনিক পরিবেশ। তবে, এসব টাকা সরকারি কোনো দপ্তরে যাচ্ছে কিনা বা গেলে কোন কোন দপ্তর হতে পারে সে সম্পর্কে কোন ধারণা দিতে পারেন নি বিােব্দরা।
জানা যায়, গত শনিবার সকাল ১১টার দিকে তেরহালী সাউদগ্রাম ও কান্দলা নামক স্থানে লোভা নদীর মধ্যখানে গর্ত করে পানি চলাচলে প্রতিন্ধকতা সৃষ্টি নিয়ে বিজিবি জোয়ানদের সাথে পাথর শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। কোয়ারীর তেরহালী নামক স্থানে কিছু প্রভাবশালী পাথর ব্যবসায়ী ফেলোডার, স্কেভেটর দ্বারা লোভা নদীর মধ্যখানের চারিদিকে বড়বড় গর্ত করে বালুমাটি তুলে বাঁধ তৈরী করে পানি চলাচলের মারত্মক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। কয়েকটি বড় গর্ত ও বাঁধ নির্মাণ করে পানির গতিপথ বন্ধ করার ফলে লোভা নদীর মূল উৎপত্তিস্থল ভারত থেকে নেমে আসা পানি উজানে আটকা পড়ে। এতে করে কোয়ারীর মুলাগুল, কান্দলা, নয়া বাজারের পাশে লোভা নদীতে স্কুলের শিক্ষার্থী ও জনসাধারনের পারাপারে বাঁশের সাঁকোর দুপারের অংশ তলিয়ে যায়। চরম দুর্ভোগে পড়েন স্থানীয় মুলাগুল হারিছ চৌধুরী একাডেমির শিক্ষার্থী, মহিলা, শিশুসহ স্থানীয় জনসাধারন। কয়েক দিন এভাবে চলতে থাকলে ধীরে ধীরে ফুঁসে ওঠে শিক্ষার্থীরা। তারা নদীর প্রবাহ ধারা স্বরূপে ফিরিয়ে দিতে শনিবার সকাল ৯টার দিকে স্থানীয় লোভা ছড়া বিজিবি কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করেন। শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দিয়ে ঘণ্টাখানেক পর বিজিবি সদস্যরা কোয়ারীর তেরহালী নামক স্থানে পানি প্রবাহের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সেখানে যান এবং মাটিবালুর বাঁধ কেটে দেন। এতে জমা থাকা পানি প্রবাহিত হয়ে কান্দলা পাড়ের পাথর উত্তোলনের ৩/৪টি গর্ত তলিয়ে দেয়। এ নিয়ে পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা বিজিবি জোয়ানদের সাথে বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তলিয়ে যাওয়া পাথর কোয়ারীর মালিক ও শ্রমিকরা একত্রিত হয়ে প্রতিবন্ধক এলাকা সাউদ গ্রামের প্রভাবশালী পাথর কোয়ারীর বাঁধগুলো কেন অপসারণ করা হলো না বা হচ্ছে না এ বিষয়ে বিজিবি জোয়ানদের কাছে জানতে চান। এতে উভয় প বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলে জড়ো হয়ে সবকয়টি বাঁধ অপসারণের দাবী জানায়। এতে উত্তেজনার সৃষ্টি হলে পরিস্থিতি সামাল দিতে বিজিবি জোয়ানরা লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ করে দেয়।
হারিছ চৌধুরী একাডেমির প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান জানান, তিনি ঘটনার সময় স্কুলে ছিলেন না। পারাপারের সাঁকো ডুবে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে কষ্ট হয় সে বিষয়টি জানাতে তারা বিজিবি ক্যাম্পে গিয়েছিল। পরে বাঁধ অপসারণ নিয়ে সৃষ্ট ঘটনায় বিজিবি তাদের লাঠি চার্জ করেছে বলে শিক্ষার্থীরা তাকে জানিয়েছেন।
এব্যাপারে লোভাছড়া ক্যাম্পের বিজিবি নায়েক সুবেদার আব্দুল কাদিরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, হারিছ চৌধুরী একাডেমির অনেক শিক্ষার্থী সকালে আমাদের ক্যাম্পে এসে অভিযোগ করে। তেরহালী এলাকায় পাথর ব্যবসায়ীরা লোভা নদীর পানি প্রবাহের গতিপথ বাঁধ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়ায় বাঁেশর সাঁকো ডুবে যাওয়ায় তারা স্কুলে যেতে পারছেন না বলে জানায়। তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সেখানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে বিজিবি’র সদস্যরা পানি প্রবাহের মূল গতিপথ থেকে বালুমাটির বাঁধ অপসারণ করেন। এতে পানি প্রবাহের পথ সুগম হয়। এসময় কিছু পাথর ব্যবসায়ী ও পাথর শ্রমিকরা ইটপাটকেল ছুড়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উস্কানী দিয়ে বিজিবি’র সাথে লেলিয়ে দিতে চেষ্টা করলে আমরা পরিস্থিতি শান্ত করি। শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে তাদের প্রতিষ্ঠানে চলে যায় এবং শিার্থীদের সাথে তাদের কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বলে তিনি নিশ্চিত করেন।
এব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) লুসিকান্ত হাজং জানান, লোভাছড়া কোয়ারীতে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি বিভিন্ন সময় অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে আসছে। গত শনিবার বাঁধ অপসারণ নিয়ে কিছু পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা ছাত্রদের ভুল বুঝিয়ে বিজিবি’র সাথে জামেলা সৃষ্টি করতে চেয়ে ছিল। পরে বিজিবি পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। যার ফলে অনাকাক্সিত কোন ঘটনা থেকে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বেঁচে যায়।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by Yellow Host