ঢাকা ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:৪৯ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৭, ২০১৯
কানাইঘাট সংবাদদাতা
আগামীকাল সোমবার দ্বিতীয় ধাপে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে তেমন আগ্রহ নেই। এখন পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। বিচ্ছিন্ন ২/১টি ঘটনা ছাড়া কোথাও নির্বাচন নিয়ে প্রার্থী ও সমর্থদের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। নির্বাচনের প্রচারণার শেষ দিনে শনিবার ভোটের লড়াইয়ে থাকা আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আলহাজ্ব আব্দুল মুমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের (বিদ্রোহী) স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আলহাজ্ব মস্তাক আহমদ পলাশের মটর সাইকেল ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা আবুল খায়ের চৌধুরীর আনারস মার্কার সমর্থনে কানাইঘাটের বিভিন্ন স্থানে সর্বশেষ নির্বাচনী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নির্বাচনী এলাকার নানা শ্রেনী পেশার ভোটারদের সাথে কথা বলে নির্বাচনী জরীপে চেয়ারম্যান পদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে নৌকার প্রার্থী মুমিন চৌধুরী ও দলের (বিদ্রোহী) স্বতন্ত্রপ্রার্থী মস্তাক আহমদ পলাশের মটর সাইকেল মার্কার মধ্যে এমন আবাস পাওয়া গেছে। এ দু’প্রার্থীর মধ্যে ভোটকেন্দ্রে যে প্রার্থী বেশি ভোটারদের নিয়ে আসতে পারবেন বিজয়ের পাল্লা তার দিকে ভারী হবে। এছাড়া নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়-পরাজয়ের ক্ষেত্রে বিএনপি-জামায়াত, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ভোট বড় ফেক্টর হবে। নৌকা ও মটর সাইকেল মার্কার প্রার্থী বিএনপি-জামায়াতের ভোট নিজেদের পক্ষে আনার জন্য নানাভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মুমিন চৌধুরীর সমর্থকরা জানিয়েছেন, তিনি (মুমিন চৌধুরী) ব্যক্তিগতভাবে একজন সৎ নিষ্ঠাবান, সমাজসেবি ব্যক্তিত্ব ও সাদা মনের মানুষ হিসাবে দলের বাহিরেও অন্যান্য দলের নেতাকর্মীরা তাকে পছন্দ করে থাকেন। বিএনপি-জামায়াতের অনেক প্রভাবশালী নেতাদের সাথে তাঁর পারিবারিক ও আত্মীয় সম্পর্ক রয়েছে। আত্মীয়তা কাজে লাগিয়ে ভোট তার পক্ষে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। মুমিন চৌধুরীর বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বিরোধী জোটের নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি রয়েছে।
অপর দিকে দলের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী মস্তাক আহমদ পলাশ বিএনপি-জামায়াতের ভোট আদায়ে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এ জোটের ভোট তার পক্ষে আনার জন্য নির্বাচনী সবধরনের কৌশল গ্রহণ করেছেন তিনি। ইতিমধ্যে তার বিভিন্ন নির্বাচনী সভায় বিশেষ করে লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ও পশ্চিম, সাতবাঁক ইউপি, পৌরসভা, সদর এলাকার বিএনপির অনেক দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ প্রকাশ্যে পলাশ কে সমর্থন জানিয়ে বক্তব্য রাখছেন বলে তার সমর্থকরা দাবী করছেন।
তবে উপজেলা নির্বাচনে ভোট বর্জনকারী বিএনপি-জামায়াত ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন যেহেতু নির্বাচনে আমরা নেই এবং আওয়ামী লীগ ঘরনার ৩ চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে যে কেউ নির্বাচিত হবেন এজন্য ভোট নিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে কোন আগ্রহ নেই। কোন চেয়ারম্যান প্রার্থীকে দলগতভাবে আমরা সমর্থন দেইনি। যারা আওয়ামী লীগ ঘরনার চেয়ারম্যান প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনী সভা-সমাবেশে প্রকাশ্যে বক্তব্য দিচ্ছেন নিবার্চন পরে দলীয়ভাবে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তারা বলেন, ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে যারা রাতের আধারে জনগণের ভোট হরন করে ছিল এবং একাধিক মামলা দিয়ে বিএনপি-জোটের শত শত নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও নিযার্তন করেছিল তারা এখন আমাদের ভোট নিতে নানা ধরনের ফন্দিফিকিরের আশ্রয় নিয়েছে। ইতিমধ্যে বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতাকর্মীদের ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আশিক উদ্দিন চৌধুরী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
নানা শ্রেণী পেশার ভোটারদের সাথে কথা হলে জরিপ অনুযায়ী সাধারণ ভোটারদের মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মুমিন চৌধুরীর পক্ষে বেশি সমর্থন পাওয়া গেছে। তাকে কেন ভোট দিবেন জানতে চাইলে অনেক ভোটার বলেন, নৌকা প্রতীকে নয় ব্যক্তিগতভাবে একজন সৎ ভাল মানুষ হিসাবে তারা মুমিন চৌধুরী কে ভোট দিবেন। আওয়ামী লীগের কর্মী ও সমর্থকদের বেশিরভাগ ভোট পাবেন মুমিন চৌধুরী নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হওয়ায়। অপর দিকে জেলা আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সাতবাঁক ইউপির ৩ বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান মস্তাক আহমদ পলাশের পক্ষে তুলনা মূলকভাবে তরুণ ভোটারদের বেশিরভাগ সমর্থন পাওয়া গেছে। যার কারণে সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মুমিন চৌধুরী ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থী মস্তাক আহমদ পলাশের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি ভোটের লড়াই হবে। যে প্রার্থী ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি বেশি করবেন এবং বিএনপি জামায়াত জোটের ভোট বেশি পাবেন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌছে যাবেন নির্বাচনী এলাকায় এমন সমিকরন পাওয়া গেছে।
চেয়ারম্যান পদে আনারস মার্কার প্রার্থী আবুল খায়ের চৌধুরী উল্লেখযোগ্য ভোট পেলেও নির্বাচনী মেরুকরণে তিনি মূল প্রতিদ্ব›িদ্বতায় আসতে পারবেন না বলে জনমত জরিপে পাওয়া গেছে। তবে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভোট নিয়ে ভোটারদের মধ্যে তেমন আগ্রহ নেই। অনেকে জানিয়েছেন তারা ভোট দিতে যাবেন না। কেন যাবেন না? জানতে চাহিলে বলেন- ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্রে গিয়ে তারা ভোট দিতে পারেননি। বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থার উপর তাদের আস্থা নেই।
কানাইঘাট উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান ৪ জন প্রার্থী এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। এর মধ্যে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে কোন প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল না করায় একমাত্র প্রার্থী হিসাবে খাদিজা বেগম বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাংবাদিক শাহিন আহমদের মাইক ও জমিয়তে উলামা নেতা আব্দুল আল শাকিরের চশমা এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এমাদ উদ্দিনের ডিবটিউওয়েব মার্কার মধ্যে তৃতীয় মুখী লড়াই হবে। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণের লক্ষ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
নির্বাচনে ৮১টি ভোটকেন্দ্রে মোট ১ লক্ষ ৭০ হাজার ২২৮ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। তার মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৮৪ হাজার ৮২৭ জন এবং নারী ভোটারের সংখ্যা ৮৫ হাজার ২০১ জন। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ ঘরনার ৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করায় কানাইঘাটে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভোটারদের মধ্যে ভোট নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই। ন্যাপ সমর্থিত প্রার্থী সাংবাদিক এহসানুল হক জসিম নির্বাচনী মাঠ থেকে দূরে রয়েছেন। মনোনয়ন দাখিলের পর থেকে তাকে নির্বাচনী এলাকায় একবারও দেখা যায়নি, কোথাও তার পোস্টার ও নেই। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মুমিন চৌধুরী ও দলের বিদ্রোহী চেযারম্যান প্রার্থী মস্তাক আহমদ পলাশের মধ্যে ভোটের লড়াই হওয়ায় ৮১টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে বেশির ভাগ ভোট কেন্দ্র ঝুকিপূর্ণ রয়েছে। তার মধ্যে অধিক ঝুকিপূর্ণ কানাইঘাট পৌরসভা, সদর ইউনিয়ন, ৫নং বড়চতুল, ১নং লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব, ২নং লক্ষী প্রসাদ পশ্চিম, সাতবাক ও দিঘীরপার ইউনিয়নের প্রতিটি ভোট কেন্দ্র সার্বক্ষণিকভাবে নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সচেতন মহল নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া সুলতানা জানিয়েছেন আগামীকাল সোমবার অনুষ্ঠিত কানাইঘাট উপজেলা পরিষদের নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও উৎসব মুখর পরিবেশে ভোট গ্রহনের লক্ষ্যে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কোন প্রার্থী পেশী শক্তি ব্যবহার করে নির্বাচন প্রভাবিত করতে পারবেন না। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা হবে। কেউ কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার ও নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা পক্ষপাতিত্বে চেষ্টা করলে সাথে সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by Yellow Host