ঢাকা ৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:৫৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৭, ২০১৯
নিজস্ব প্রতিবেদন : ‘পেঁয়াজ- কাটতে গিয়ে ঘরে কাঁদেন নারী, কিনতে গিয়ে বাজারে কাঁদেন পুরুষ।’ পেঁয়াজের দাম নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আনোয়ার হোসেন নামের এক ব্যক্তির প্রতিক্রিয়া ব্যাপক নজর কেড়েছে অনেকের। মাসাধিককাল ধরে পেঁয়াজ মূল্য তাদের রীতিমতো নাভিশ্বাস তুলে ছাড়ছে। সিলেটে একের পর এক অভিযানেও নিয়ন্ত্রণে আসছে না পেঁয়াজের বাজার। আর এখন পেঁয়াজের সঙ্গে টক্কর দিয়ে বাড়ছে অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য।
কিছুদিন পূর্বেও আড়াইশ’ ঘুরে দর পতন হয়ে ১২০ টাকায় নেমে আসে পেঁয়াজের কেজি। সেই পেঁয়াজের কেজি সিলেটের বাজারে আবারো পৌছালো আড়াইশ’র ঘরে। সীমান্ত দিয়ে সিলেটের হাট-বাজারে পেঁয়াজ আসলেও দামের দিক থেকে অনড় রয়েছে এখনো। ৫কেজি চালের দরে খুচরা বাজারে এক কেজি পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সিলেট নগরীর পাইকারি বাজার কালিঘাট ঘুরে দেখা গেছে, আড়তে পেঁয়াজ থাকলেও রয়েছে ক্রেতার অভাব। ব্যবসায়ীরাও দাম ছাড়ছেন না।
কালিঘাটে বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেছে, ‘অবৈধ’ পথে ভারত থেকে সীমান্ত পেরিয় আসা পেঁয়াজ ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মিয়ানমার থেকে আসা পেঁয়াজ ১৮৫ টাকায়, মিশরী পেঁয়াজ ১৬৫ টাকায়, পাকিস্তানি পেঁয়াজ ১৮৫ টাকায় এবং চায়না পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ১৪০-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কয়েকটি দোকানে পেঁয়াজের এমন মূল্য তালিকা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
আলাপকালে ব্যবসায়ীরা বলেন, নগরীর ১৫/১৬ জন বেপারি পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন। তাই দাম বেশি থাকায় এক ট্রাক পেঁয়াজ এনে ১০/১২ ব্যবসায়ী ভাগ করে নিয়ে বিক্রি করেন। ফলে এক রিসিট সব দোকানে রাখা সম্ভব হয় না। আর ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালালে রিসিট দেখানো যায় না। ব্যবসায়ীরা আরো বলেন, অবৈধ পথে সীমান্ত হয়ে পেঁয়াজের চালান আসায় দাম কিছুটা কমেছিল। কিন্তু নানা কারণে সীমান্ত হয়ে পেঁয়াজ বাজারে ঢুকা কমে গেছে। কিছু আসলেও সেগুলো পর্যাপ্ত নয়। আর এজন্য পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।
বাজার থেকে একাধিক সূত্রে পাওয়া তথ্যে, সিলেট সীমান্ত এলাকায় পেঁয়াজের কেজি শতকের ঘরে। সেই পেঁয়াজ শহরে এলে দাম বেড়ে হয় দ্বিগুণ। তাছাড়া পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরা এখন চতুরতার আশ্রয় নিয়েছেন। অভিযানিক দল মাঠে নামলেই ঝুলানো মূল্য তালিকা্ সরিয়ে কম দামের তালিকা ঝুলিয়ে রাখা হয়। এ জন্য যোগাযোগ রক্ষায় ব্যবসায়ীরা ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ ব্যবহার করে থাকেন। তাই অভিযানিক দল মাঠে নামলে ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে খবর ছড়িয়ে পড়ে পুরো বাজারে। সতর্ক হয়ে যান ব্যবসায়ীরা। আবার ফিরে যাওয়ার পর চড়া দামের মূল্য তালিকা ঝুলিয়ে রাখা হয়।
খুঁচরা বিক্রেতাদের অনেকে বলেন, পাইকারি বাজার থেকে কিনে আনা পেঁয়াজের ২০কেজির বস্তায় অন্তত; ২/৩ কেজি পঁচা বের হয়ে যায়। যে কারণে পরিবহণ খরচসহ অনেকটা দরে বিক্রি না করলে পোষায় না।
নগরীর বন্দরবাজারের খুচরা ব্যবসায়ী আজাদ স্টোরের মালিক ব্যবসায়ী আল-আমিনসহ অনেকে বলেন, বস্তায় অনেক পেঁয়াজ পঁচা বের হয়ে যায়। তাছাড়া ক্রেতা কম থাকায় এক বস্তা পেঁয়াজ আনলে সহজেই বিক্রি করা যায় না। ফলে দোকানে রাখতে রাখতে পঁচন ধরে। এ জন্য লস দিয়েতো আর বিক্রি করা যায় না।
এদিকে, মঙ্গলবার সহকারি কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সানজিদা চৌধুরীর নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের একটি অভিযানিক দল নগরের কালিঘাটে অভিযান চালায়। এসময় পেঁয়াজ ক্রয়ের রিসিট না থাকায় মেসার্স সুরমা ট্রেডিং এজেন্সিকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করে ভ্রাম্যমান আদালত। এদিন দুপুরে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে আরেকটি টিম অভিযানে নেমে ৩৪টি দোকানের মালিককে পেঁয়াজসহ দ্রব্যমূল্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য সতর্ক করে দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের কেজি ২শ’র মধ্যে থাকলেও খুচরা বাজারে আড়াইশ’ থেকে ২৬০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া শুকনা মরিচের দাম ২১০ টাকা থেকে এক লাফে ৩০০ টাকায়, আদা আড়াইশ’, রসুন দেড়শ’ টাকা, ডালের কেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by Yellow Host