ঢাকা ১৬ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৫:৫১ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৫, ২০২১
মীম সালমান
সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার একটি অবহেলিত ও অনুন্নত ইউনিয়ন হচ্ছে ১নং লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়ন। এটি একটি প্রাচীন জনপদ হলেও এর উন্নয়ন সব সময়ই পিছনে পড়েছে। আর বিভিন্ন সময়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো হয়েছে বাধাগ্রস্ত।
স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও ইউনিয়নবাসী পায়নি তাদের ন্যায্য অধিকার। ডিজিটাল বাংলাদেশে উন্নয়নের জয়জয়কার হলেও রাজনৈতিক মারপ্যাঁচের কারণে যুগ যুগ ধরে ইউনিয়নের জনগণ তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ইউনিয়নের পূর্ব ও উত্তরে ভারতের সীমান্ত এবং দক্ষিণে সেতুহীন সুরমা নদীর কারণে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক জনসংখ্যার ইউনিয়নটি একটি জীবন্ত কারাগার হিসেবে মানচিত্রের জায়গা জুড়ে আছে।
জানা যায়, এই ইউনিয়নে সব সময়ই বিপরীত মেরুর প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে আসছেন। যেমন, বিএনপি যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়, তখন আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান। আবার আওয়ামী লীগ যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় তখন বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ফলে প্রতি বছর উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলেও কখনও তার বাস্তবায়ন হয়নি।
বর্তমানেও বিরোধী দল সমর্থিত ইউপি চেয়ারম্যান ডাক্তার ফয়াজ উদ্দিন দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি সঙ্গত কারণেই ইউনিয়নে কাক্সিক্ষত উন্নয়নের কাজ করতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন বলে জানা গেছে। ফলে পার্শ্ববর্তী অন্যান্য ইউনিয়নে উন্নয়ন কর্মকান্ড ত্বরান্বিত হলেও এই ইউনিয়নের ক্ষেত্রে ঘটছে উল্টো।
ইউনিয়নবাসী জানান, এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি হিসেবে লক্ষণীয় হলো- এই ইউনিয়নের রয়েছে লোভাছড়া পাথর কোয়ারী, লোভা চা-শিল্প, পানের বাগান ও মৌসুমি ফলের ওপর নির্ভরশীল। সরকার প্রতি বছর এসব থেকে কোটি কোটি টাকা ট্যাক্স আদায় করে। সরকারের রাজস্বের একটি বড় যোগান হচ্ছে এই ইউনিয়ন থেকেই। কিন্তু, দুঃখ আর পরিতাপের বিষয় হলো! এসবের বিনিময় কি পাচ্ছে এই ইউনিয়নের মানুষ? সেই হিসাব মেলাতে গেলে মাথায় কাজ করে না। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত যতটাকা ট্যাক্স নিয়েছে সরকার, এর অর্ধেক যদি এই ইউনিয়নের জন্য ব্যয় করা হতো, তাহলে ইউনিয়ন একটি মডেল ইউনিয়ন হিসেবে আমরা দেখতে পেতাম। কিন্তু কে শুনবে? এই হতদরিদ্র ইউনিয়নবাসীর বেঁচে থাকার আর্তনাদ?
ইউনিয়নের সচেতন নাগরিকবৃন্দ জানান, বর্তমানে শিক্ষার হার আগের চেয়ে বেশি হলেও এই ইউনিয়নে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অসন্তোষজনক। রাস্তা-সড়কের রয়েছে বেহালদশা। পাকা সড়ক নেই বললেই চলে। যা আছে সেটা সিসি ঢালাই ফাঁড়ি রাস্তার কিছু অংশ বিশেষ। কাঁচা রাস্তায় ছোট যান চলাচলে চরম অসুবিধা নিত্যদিনের। বর্ষা মওসুমে জনগণের ভাগ্যে দুর্ভোগের সীমা থাকে না। স্বাস্থ্যসেবা নেই বললেই চলে। কমিউনিটি ক্লিনিক থাকলেও ডাক্তার ও ওষুধ না থাকায় এলাকাবাসী এর সেবা থেকে দূরে রয়েছে। স্যানিটেশন কার্যক্রম এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। একটি পুলিশ ফাঁড়ির প্রয়োজন থাকলেও সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নেই কোন পদক্ষেপ। যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য নেই কোন নেটওয়ার্ক সংযোগ। সামাজিক অপরাধ দমনে নেই সক্রিয়তা। বেকার যুবকদের কাছে মাদক চোরা চালানি এখন নিত্যদিনের সঙ্গী।
তারা আরও জানান, দীর্ঘ একযুগ ধরে কানাইঘাট-জকিগঞ্জ আসনটি বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের দখলে থাকলেও এই ইউনিয়নের প্রতি তেমন কোন গুরুত্ব দেখাতে দেখিনি কোন সাংসদকে। যেহেতু ইউনিয়নটি বিরোধী দলের ভোটারদের দখলে। একটি ইউনিয়নের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন কার্যক্রম ঘটাতে হলে অবশ্যই সেখানে স্থানীয় সাংসদ ভূমিকা নিতে হয়। শুধু চেয়ারম্যানের উপর নির্ধারিত বরাদ্দ দিয়ে কখনও একটি ইউনিয়ন মডেল ইউনিয়ন হিসেবে গড়ার কোন অবকাশ নেই।
রাজনৈতিক সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে একটি অবহেলিত ও অনুন্নত ইউনিয়নের জনগণের আর্তনাদগুলো কর্ণকুহরে নিতে সক্ষম হবেন স্থানীয় সাংসদ আলহাজ্ব হাফিজ আহমদ মজুমদার এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন ইউনিয়নবাসী।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by Yellow Host