সিলেটবাসীর সাথে বৈষম্য কেন?

প্রকাশিত: ৮:৩২ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৩, ২০২৫

সিলেটবাসীর সাথে বৈষম্য কেন?

মুহাম্মদ আবদুল হামিদ
দীর্ঘদিন থেকে সিলেটে দৃশ্যমান তেমন কোনো উন্নয়ন নেই। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে সিলেটকে নানাভাবে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের আমলেও একই অবস্থা। সমগ্র সিলেটের সড়ক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। যেখানে সিলেট থেকে ঢাকা যেতে ৫/৬ ঘন্টা লাগে, সেখানে এখন ১৫/১৬ ঘন্টা সময় লাগে। সিলেট-ঢাকা, সিলেট-চট্টগ্রাম মহাসড়ক উন্নয়নের কাজ থমকে আছে। শুধুমাত্র মহাসড়ক নয়, সিলেট শহরের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোরও বেহাল অবস্থা। অধিকাংস সড়কই খানাখন্দে ভরে গেছে। কার্পেটিং উঠে কাদামাটি আর ধুলোবালিতে একাকার হয়ে গেছে। দুর্ভোগ আর যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে সিলেটে পর্যটকের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে।

দীর্ঘ দিনের অবহেলার কারণে সিলেটের রেলওয়ের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে পড়েছে। এক সমাবেসে সিলেটের সাবেক মেয়র জনাব আরিফুল হক চৌধুরী বলেছেন, ”ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৬২ সালে যাত্রা শুরুর পর আজ পর্যন্ত সেই মান্ধাতা আমলের নিয়মে পরিচালিত হচ্ছে রেলওয়ে স্টেশন। ফলে সিলেটবাসী তীব্র সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। ঘন ঘন দুর্ঘটনা, টাকার বিনিময়ে অনির্দিষ্ট স্থানে ট্রেন থামানো, দালালের কারণে টিকিট না পাওয়া, নির্ধারিত সময়ে ট্রেন না ছাড়াসহ নানা সমস্যা এখন সিলেটবাসীর নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিলেট-ঢাকা রুটে নতুন ট্রেন সংযোজনের কথা থাকলেও তা বাতিল করা হয়েছে।” মি. আরিফ এসব বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ কামনা করেছেন।

সিলেটে যথেষ্ট পরিমান বিদ্যুত উৎপদন হলেও সিলেটের মানুষ বিদ্যুতের সঠিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সিলেটে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ২ হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট। এর মধ্যে পুরো সিলেট বিভাগবাসী পায় মাত্র ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। যা সিলেটের চাহিদার তুলনায় অনেক কম। চাহিদার তুলনায় কম সরবরাহের কারণে প্রতিদিন মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং হচ্ছে সিলেটে।

গ্যাস একটি প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদ। সিলেটে প্রচুর পরিমাণে আবিষ্কৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত রয়েছে। সিলেটের গ্যাস ক্ষেত্রগুলো সার্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। সিলেট অঞ্চলে মোট আটটি গ্যাসক্ষেত্র অবস্থিত। এই অঞ্চলে মজুত গ্যাসের মোট পরিমাণ প্রায় ১৪ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফুট। জালালাবাদ গ্যাস সিস্টেম লিমিটেড এর মতে, এই কোম্পানির বার্ষিক রাজস্ব আয় ৫৬৬ কোটি। সিলেটের গ্যাস দেশব্যাপী এমনকি বহির্বিশ্বে সাপ্লাই হচ্ছে। সিলেটের অনেকগুলো গ্যাসক্ষেত্র জাতীয় গ্রিডকে সমৃদ্ধ করছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সিলেটের গ্যাস উৎপাদন সাত গুণ বৃদ্ধি পেতে পারে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়—সিলেটবাসী আবাসিক ও অনাবাসিক গ্যাস সংযোগের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন। তবুও গ্যাস পাচ্ছেন না। তাছাড়া বাংলাদেশের একমাত্র তেল ক্ষেত্র সিলেট অঞ্চলে অবস্থিত।

সিলেটের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকের ৫২৬টি পদ শূন্য। শিক্ষক সংকটের কারণে মানসম্মত পাঠদান সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশ ডাক বিভাগের সিলেট অফিসে তিনজনের কাজ একজন কর্মচারী দিয়ে করানো হচ্ছে। এভাবে প্রতিটি সেক্টরেই হাজারো শূণ্যপদ রয়েছে। অথচ, হাজার হাজার শিক্ষিত যুবক চাকরি পাচ্ছেন না। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের শূন্যপদ পূরণসহ সিলেটের শিক্ষা ব্যবস্থা ও অন্যান্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠান মানসম্মত করে গড়ে তোলা সময়ের অপরিহার্য্য দাবী।

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মি. আরিফ বাজেটের ক্ষেত্রে দেশের বিভিন্ন সিটি করপোরেশনের পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, “সিলেটের সঙ্গে এটা কেমন বৈষম্য?” বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রায় ২৩ শতাংশ অবদান রাখছে সিলেট জেলা। এছাড়া কৃষি ব্যবস্থাপনা যেমন; চা, ধান, মাছ, কমলা, লেবু, আনারস, বাশঁ, আম, ইত্যাদি এই অঞ্চলের মানুষের অনন্য অবলম্বন। সিলেটের প্রবাসীরা রেমিট্যান্সে বড় ভুমিকা পালন করেন। অথচ, রেমিট্যান্স যোদ্ধারা দেশের মাটিতে পদার্পণের পর নানা ভাবে হেনস্তার শিকার হতে হয়। লাগামহীন বিমানভাড়ায় নাজেহাল হচ্ছেন।

সিলেটের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ খাতের ন্যায্য প্রাপ্যতা আজও নিশ্চিত হয়নি। রাজনৈতিক, সামাজিক প্রতিটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সত্ত্বেও সিলেটবাসী বৈষম্যের শিকার। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি—অর্থাৎ নাগরিকের মৌলিক চাহিদাগুলোর ন্যায্য অধিকার থেকে সিলেটবাসী বারবার বঞ্চিত হচ্ছে। সিলেট শুধু একটি শহর নয়, এটি বাংলাদেশের অর্থনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি। এই অঞ্চলটির অর্থনৈতিক উন্নয়নকে আরও ত্বরান্বিত করার মাধ্যমে পুরো দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অনেকখানি বৃদ্ধি করা সম্ভব।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর