নার্স-ডাক্তারহীন ছাতকে অবহেলায় ধুঁকছে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা

প্রকাশিত: ৬:৩৩ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৭, ২০২৫

নার্স-ডাক্তারহীন ছাতকে অবহেলায় ধুঁকছে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা

লুৎফুর রহমান শাওন, ছাতক
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্যসেবায় দীর্ঘদিন ধরে বিরাজমান চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর সংকট এখন চরম আকার ধারণ করেছে। দিনে দিনে রোগীর চাপ বাড়লেও প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় স্বাস্থ্যসেবা পুরোপুরি ব্যাহত হচ্ছে। ফলে চিকিৎসা নিতে এসে রোগী ও স্বজনদের ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা, সঠিক চিকিৎসা না পাওয়া, ডাক্তারের স্বল্পতা, অবিন্যস্ত ব্যবস্থাপনা সব মিলিয়ে জনসাধারণের ভোগান্তি সীমা ছাড়িয়েছে।

উপজেলার প্রায় চার লাখ মানুষের প্রধান নির্ভরযোগ্য সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কিন্তু এ হাসপাতাল নিজেই দীর্ঘ সংকটাবস্থায়। ফলে সাধারণ মানুষকে বাধ্য হয়ে ব্যয়বহুল বেসরকারি ক্লিনিক-হাসপাতালের দিকে ছুটতে হচ্ছে। এতে দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত মানুষের চিকিৎসা পাওয়াই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

১৯৭০ দশকের কাঠামোতে চলছে ২০২৫ সালের হাসপাতাল প্রশাসনিকভাবে ৫০ শয্যার অনুমোদন থাকলেও ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চলছে পুরোনো ৩১ শয্যার ভবনে। আধুনিক চিকিৎসাসেবা দেয়ার সক্ষমতা না থাকায় বিভিন্ন বিভাগ পর্যাপ্তভাবে চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।

৩১ শয্যার কাঠামো অনুযায়ী এখানে থাকার কথা ১ জন আরএমও (জগঙ), ২ জন মেডিকেল অফিসার (গঙ), কিন্তু বাস্তবে হাসপাতালের দায়িত্ব পালন করছেন পরিবার পরিকল্পনা কর্মকতাসহ মোট ৪ জন ডাক্তাররে ওপর যারা ২৪ ঘণ্টাই সামলাচ্ছেন জরুরি বিভাগ, ইনডোর-আউটডোর, ডেলিভারি, মেডিসিন সবকিছু।

একজন চিকিৎসক বলেন- এত রোগীর চাপ নিয়ে মাত্র চারজন ডাক্তার দিয়ে হাসপাতাল চালানো মানবিক দায়িত্বের বাইরে গিয়ে করা। কিন্তু না করলে রোগীরা চিকিৎসা বঞ্চিত হবে তাই আমরা কাজ করছি।

৫০ শয্যার হাসপাতালে নার্স থাকার কথা ২৫ জন, কিন্তু রয়েছেন মাত্র ১৪ জন। যেখানে একজন নার্সের দায়িত্ব ৮-১০ জন রোগী হওয়া উচিত, সেখানে একজন নার্সকে সামলাতে হয় ২৫-৩০ জন রোগী! সাপোর্ট স্টাফ সংকটও ভয়াবহ।

ওয়ার্ডবয়: স্বাভাবিক মানদণ্ডের চেয়ে প্রায় ৫০% কম, ফলে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা, ওয়ার্ড ম্যানেজমেন্ট, রোগী পরিচর্যা-সবকিছু প্রভাবিত হচ্ছে।

ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতি মাসে ১০০-১৫০ জন প্রসূতি মা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সন্তান প্রসব করেন, প্রতিদিন ৪০-৫০ জন ইনডোর রোগী ভর্তি হন, ওপিডিতে দৈনিক শতশত রোগীর দীর্ঘ লাইন দেখা যায়, ওপিডি থেকে মাসে ১.৫-১.৮ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা পড়ে।

একজন রোগীর স্বজন আব্দুল বাকি মুহিত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন- ডাক্তার দুইজন, রোগী কয়েক হাজার-এটা কোনোভাবেই সম্ভব না। অনেক সময় সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে রোগীকে সিলেট পাঠাতে হয়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডায়রিয়া,ডেঙ্গু,সর্দি-জ্বর,নিউমোনিয়া,পানিবাহিত রোগ,তীব্রভাবে বেড়ে গেছে। এতে রোগীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে, কিন্তু জনবল বাড়ছে না। অতিরিক্ত চাপ সামলাতে চিকিৎসকদের পক্ষে মানসম্মত সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুসরাত আরফিন বলেন, জনবল সংকটের বিষয়টি আমরা লিখিতভাবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করছি দ্রুতই সংকটের সমাধান হবে।

জেলা সিভিল সার্জন জসিম উদ্দিনও বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যেই ডাক্তার সংকটের সমাধান হবে বলে আশা করছি।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর