ঢাকা ২০শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০:৫৩ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২০, ২০২৫
বিশেষ প্রতিনিধি, সুনামগঞ্জ
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার আনন্দপুর গ্রাম সংলগ্ন দাড়াইন নদীতে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে মাছ আহরণ করছে একটি প্রভাবশালী মহল। একটি চলমান ও উন্মুক্ত নদীতে আইনের তোয়াক্কা না করে এভাবে বাঁধ দেওয়ার ফলে সাধারণ মানুষের নৌ-চলাচল চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। নদী দখল করে মাছ ধরার এই ঘটনায় স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দাড়াইন নদীটি এই অঞ্চলের মানুষের যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনের অন্যতম প্রধান রুট। কিন্তু আনন্দপুর খেয়াঘাট সংলগ্ন এলাকায় নদীর মাঝ বরাবর বিশাল জালের বাঁধ দেওয়ায় নৌকা চলাচলের পথ সম্পূর্ণ রুদ্ধ হয়ে পড়েছে। এর ফলে ছোট-বড় সব ধরনের নৌযান ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকছে।
এলাকার অনেক ভুক্তভোগী সহ মৌরাপুর গ্রামের ইউপি সদস্য অসীত দাস ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমার এক বড় ভাই নৌকা দিয়ে ধানের ব্যবসা করেন। গত কয়েকদিন আগে ধানের নৌকা নিয়ে আসার পথে এই বাঁধের কারণে তিনি আটকে পড়েন। ইজারাদারদের কাছে দীর্ঘক্ষণ আকুতি-মিনতি করার প্রায় ৫ ঘণ্টা পর তারা বাঁধটি খুলে দেয়। এই বাঁধের কারণে প্রতিদিন সাধারণ মানুষের যাতায়াতে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।”
অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি এই বাঁধ দেওয়ার প্রক্রিয়ার সাথে সরাসরি যুক্ত। এই চক্রের অন্যতম মূল হোতা হিসেবে নাম এসেছে কাশীপুর গ্রামের বর্তমান ইউপি সদস্য টীপু সুলতানের। বাঁধের বিষয়ে জানতে চাইলে টীপু সুলতান দম্ভের সঙ্গেই বলেন, “আমরা প্রতি বছর এভাবেই বাঁধ দিয়ে মাছ ধরে আসছি। এতদিন তো কারও অসুবিধা হয়নি, এখন কেন সমস্যা হচ্ছে? কেউ তো আমাদের সামনে এসে অভিযোগ করেনি।
এই অবৈধ বাঁধ দেওয়ার সাথে আর কারা জড়িত এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আনন্দপুর গ্রামের সাবেক মেম্বার মিহির রায়, কাশীপুর গ্রামের লিপন মিয়াসহ আরও অনেকেই এই প্রক্রিয়ায় তার সাথে রয়েছেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সাবেক মেম্বার মিহির রায় বলেন, “জলমহালে আমি একজন অংশীদার ঠিকই, কিন্তু এই বাঁধের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। জলমহালের দায়িত্ব এখন টিপু সুলতানের কাছে।”
প্রচলিত আইন অনুযায়ী, কোনো চলমান বা প্রবাহমান নদী ইজারা দেওয়ার সুযোগ নেই এবং নদীতে আড়াআড়ি বাঁধ বা স্থায়ী জাল পেতে মাছ ধরা দণ্ডনীয় অপরাধ। অথচ প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বছরের পর বছর এই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালী চক্রটি। এর ফলে নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি বিপন্ন হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মৎস্য সম্পদ।
এ বিষয়ে শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পিয়াস চন্দ্র দাস বলেন, “বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। প্রবাহমান নদীতে বাঁধ দিয়ে নৌ-চলাচলে বিঘ্ন ঘটানো আইনত অপরাধ। আমরা দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব এবং নদীটি সবার চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
সাধারণ গ্রামবাসী ও ব্যবসায়ীদের দাবি, লোকদেখানো কোনো আশ্বাস নয়, বরং দ্রুত এই অবৈধ বাঁধ অপসারণ করে নদীটি স্থায়ীভাবে দখলমুক্ত করা হোক। তারা এই বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by Yellow Host