পিতাকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ অটোরিকশা চালক আব্দুল মালিকের অবুঝ তিন শিশু

প্রকাশিত: ৬:১৭ অপরাহ্ণ, মে ৩০, ২০১৯

পিতাকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ অটোরিকশা চালক আব্দুল মালিকের অবুঝ তিন শিশু

কানাইঘাট প্রতিনিধি
তিন মেয়েকে নিয়ে সুখেই চলছিল ড্রাইভার আব্দুল মালিকের সংসার। বাবাকে হারিয়ে ৩টি অবুঝ শিশু আজ অসহায় হয়ে পড়েছে। এই তিন সন্তানে দায়িত্ব নেবে কে? এ আলোচনা এখন উপজেলা জুড়ে সবার মুখে।

জানা গেছে, উপজেলার সাঁতবাক ইউপির দিঘীরপাড় লন্তিরমাটি গ্রামের মৃত নুরুল হকের পুত্র দেওয়ান আব্দুল বাছিতের(৪৫) এর কাছে জুলাই মাঝরচটি গ্রামের জামাল উদ্দিনের পুত্র আব্দুল মালিক (৩৩) এক হাজার পাঁচশত টাকা পাওনা ছিল। এ নিয়ে গত ১৬মে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ২টায় স্থানীয় সড়কের বাজারে আব্দুল বাছিতের নিকট আব্দুল মালিক তার পাওনা টাকা চান। এতে ক্ষীপ্ত হয়ে আব্দুল বাছিত দেশীয় ধারালো চাকু দিয়ে আব্দুল মালিককে আঘাত করে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে। সাথে সাথে স্থানীয় জনসাধারণ আশঙ্কাজনক অবস্থায় আব্দুল মালিককে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। তার অবস্থার অবনতি হলে পরবর্তীতে সিওমেক থেকে ইবনে সিনা হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫দিন থাকার পর মঙ্গলবার রাত ২টায় আব্দুল মালিকের মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে নিহতের লাশ নিজ বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে পারিবারিকভাবে দাফন সম্পন্ন করা হয়।

ড্রাইভার আব্দুল মালিকের মৃত্যুর পর থেকে কানাইঘাটের জনসাধারণ ফুঁসে উঠেছেন। তাদের দাবি কানাইঘাটে দিন দিন অপরাধ বেড়েই চলেছে। আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয় না বিধায় আজ অবুঝ তিন সন্তান তাদের পিতা আব্দুল মালিককে হারিয়েছে। ছুরির আঘাত শুধু আব্দুল মালিকের জীবন কেড়ে নেয়নি, অন্ধকার করে দিয়েছে তার তিন অবুঝ সন্তানের ভবিষ্যৎ। পরিবারের একমাত্র রোজগার ব্যক্তি ছিলেন আব্দুল মালিক। অবুঝ সন্তানেরা পিতাকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে।

আব্দুল মালিক হত্যার পর থেকে কানাইঘাটের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মানববন্ধন করে যাচ্ছেন। মানববন্ধনে কুখ্যাত খুনী আব্দুল বাছিতের ফাঁসির দাবি জানানো হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, খুনি আব্দুল বাছিত স্থানীয় এলাকায় টাইলস ও রাজ মিস্ত্রিরীর কাজ করতো। এই সামান্য আয় রোজগারে তার পেট ভরছিল না। ধীরে ধীরে জড়িয়ে পড়ে অপরাধ সম্রাজ্যে, বাড়তে থাকে তার বিভিন্ন অপরাধমূলক ব্যবসা। পূর্বে একটি হত্যাকা-ের ঘটনায় দীর্ঘদিন জেল খেটে বের হয়ে এলে তার মাঝে কিছুটা ভালো চরিত্র লক্ষ্য করা যায়। পরে আবারও টাকার নেশায় মাতাল হয়ে পূর্বের খোলসে নিজেকে জড়িয়ে নেয় বাছিত।

এদিকে, কানাইঘাটের সাঁতবাক ইউপির জুলাই গ্রামের বাসিন্দা কানাইঘাট উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আলিম উদ্দিন আলিমের সাথে এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নিহত আব্দুল মালিক একজন ভালো মানুষ ছিলেন। পরিবারের অভাব অনটন মেটাবার জন্য দেড় দুই বছর আগে প্রবাসে পাড়ি জমান। সেখানে অনেকদিন থাকার পর ভিসা জটিলতায় তাকে দেশে ফেরত আসতে হয়ে হয়েছে। পরে তিনি কারো উপর নির্ভরশীল না থেকে কিছু টাকা দিয়ে একটি সিএনজি কিনে আয় রোজগার করতে থাকেন। কিন্তু নিতহ আব্দুল মালিকের কাল হয়ে দাঁড়ায় আব্দুল বাছিতের কাছে টাকা ধার দেওয়া। পরিবারের একমাত্র রোজগার ছিলেন আব্দুল মালিক, বর্তমানে তিনি মারা যাওয়ায় তার তিন সন্তানসহ পরিবার বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় এই তিন সন্তানের লেখাপড়ার খরচসহ পরিবার চালাতে দেশ বিদেশের বিত্তবানদের কাছে সহযোগিতা প্রদানের জন্য আহবান জানান তিনি।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর