ঢাকা ৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:৪২ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৯
সনাতন ধর্ম্মাবলম্বী বাঙ্গালী হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। যে দুর্গা পূজা আদিকালে রাজা, মহারাজা, সামন্ত জমিদাররা করতেন- তা আজ রূপ নিয়েছে সার্বজনীন দুর্গাপূজা বা সার্বজনীন দুর্গোৎসব রূপে। কথিত আছে রাজা সুরথ, সমাধিবৈশ্য দুর্গাপূজা করেছেন। পরবর্তীতে বঙ্গের বরেন্দ্র অঞ্চলের জমিদার কংস নারায়ণ সহ বারজন ইয়ার বা বন্ধু মিলে রাজকীয় ভাবে বারোযারী দুর্গাপূজা আরম্ভ করেন। এখন তা সর্বজনীন উৎসব হিসেবে পরিণত হয়েছে।
আদিগ্রন্থ রামায়ণ পাঠে জানা যায়, রাক্ষণ কুলপতি রাবণকে বধ করার প্রয়োজনে অকালে শ্রীরাম চন্দ্র চন্ডিকামাতার বর প্রার্থী হন, মাতৃদেবী চন্ডিকা আবির্ভূতা হয়েছিলেন বলে শরৎকালের আগমনকে অকালবোধন আখ্যায়িত করা হয়।
মা দুর্গা – চন্ডী – কালী অসংখ্য নামাকরণে একই আধ্যাশক্তি মহামায়া। আর ধরাধামে যখন অসুর শক্তির প্রাদুর্ভাব ঘটে তখন মাতৃশক্তি মহামায়া প্রকট হয়ে অসুর দমন করে, জীবকে রক্ষা করেন। তাই আমরা মাতৃদেবীকে স্ত্যোতি করে প্রণাম জানাই–
“যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেন সমস্তিতা
নমোতস্মৈ নমোতস্মৈ নমোতস্মৈ নমঃ নমঃ”
“যা দেবী সর্বভূতেষু শান্তিরূপেন সমস্থিতা
নমোতস্মৈ নমোতস্মৈ নমোতস্মৈ নমঃ নমঃ”
“যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেন সমস্থিতা
নমোতস্মৈ নমোতস্মৈ নমোতস্মৈ নমঃ নমঃ”
দেখা যায় আমরা মায়ের আরাধনার সাথে শান্তি ও শক্তির আরাধনা করি।
জীবশ্রেষ্ঠ মানবকুলের একান্ত রক্ষাকারী হচ্ছেন ‘মা’। মা’র মত আপন আর কেহ নন। মা’র প্রতি যার শ্রদ্ধা ভক্তি নেই সে নরাধম, অসুর তূল্য- তাই বার বার মা অসুর দমন করেন। অসুরকে ঐশ্বরিক শক্তি দিয়ে নিধন করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন। এই হলো আধ্যাশক্তি মহামায়া’র মাতৃরূপিনী মাহাত্ম্য।
বাংলা ষড়ঋতুর মধ্যে শরৎকাল ভাদ্র ও আশ্বিন মাস, আর আশ্বিন মাসের অমবস্যা তিথিতেই দেবীর ধরাধমে আগমন করেন। ঐ আগমনীর দিনই মহালয়া। মহালয়ার শব্দ বিশ্লেষণ করে যা বুঝায়, তা হচ্ছে মহা+আলয়+আ- উৎসব+আশ্রয়+ মানুষ যখন অসহায় হয় তখন আশ্রয় খোঁজে- মা যখন ডাকে সাড়া দিয়ে অসুর দমন করে আশ্রয় দেন তখন হয় মহোৎসব। তাই দুর্গাপূজা মাতৃশান্তি ও শক্তির মহোৎসব এবং বাঙ্গালী হিন্দুদের প্রধান উৎসব।
দূর্গাপূজায় যে সকল দেবতা স্থাপন এবং উপকরণ ব্যবহৃত হয় তা সকলই বাংলা অঞ্চলের পূজ্য ও সামঞ্জস্যপূর্ণ বিধায় সার্বজনীন সমর্থন পেয়েছে।
একসময় শূদ্র বর্ণের বেদ-পুরাণাদি পাঠ নিষিদ্ধ ছিল। কালের বিবর্তনে তা; উঠে গিয়ে নিজ মাতৃভাষা বাংলাতে সকল ধর্মীয় গ্রন্থাদি পাওয়া যাচ্ছে এবং পঠিত হচ্ছে। মানুষ বুঝে শুনে তার মমার্থ হৃদয়াঙ্গম করে; মা দুর্গা মহামায়াকে ডাকতে পারছে। বর্ণ বৈষম্য ভুলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সহ আন্তঃধর্ম সম্প্রীতি গোটা বিশ্বে শক্তি শান্তি দুর্গামাতার পূজা ও জয়গান ধ্বনিত হচ্ছে। এটাই দুর্গামায়ের আশীর্বাদ।
দূর্গতিনাশিনি মা দুর্গার আগমনী দিবস ‘মহালয়া’ উৎসব উপলক্ষে জ্ঞানের আলো প্রতিফলিত হচ্ছে তজ্জন্যে সাধুবাদ। অব্যহতভাবে বিদগ্ধ লিখিয়ে দ্বারা আলোর অঞ্জলি মাতৃচরণে নিবেদিত হোক এবং মাতৃ কৃর্ত্তীকৃপা শরণাগত সন্তানদের প্রতি আশীর্বাদে দুর্গতিনাশ করে সুখী সমৃদ্ধশালী মানবসন্তান গণ্যে দেশ-জাতি ও বিশ্বকে গড়ে তোলার অঙ্গীকার নিয়ে আবারো মাকে প্রণাম জানাই-
“সর্ব মঙ্গল মঙ্গল্যে শিবে সর্ব্বার্থ সাধিকে
শরণ্যে ত্র্যম্বকে গৌরি নারায়ণী নমোহস্ততে।” প্রেস-বিজ্ঞপ্তি।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by Yellow Host