জুলাই-অভ্যুত্থানের এক বছর: গণআকাঙ্খার বাস্তবায়ন কতটুকু

প্রকাশিত: ৯:৩৭ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৫, ২০২৫

জুলাই-অভ্যুত্থানের এক বছর: গণআকাঙ্খার বাস্তবায়ন কতটুকু

মাহদিউস সুন্নাহ
‎‎পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ একটি ছোট্ট স্থান দখল করে আছে। দেশটির বয়সও খুব একটা বেশি না, মাত্র অর্ধ শত বছর পেরুলো। কিন্তু স্বপ্নের এই দেশটি স্বল্প বয়সে অসংখ্য অবিস্মরণীয় স্মৃতি, ঘটনা ও উপাখ্যানের সাথে মুলাকাত করেছে। তার মধ্যে ২৪ এর গণ-অভ্যুত্থান ইতিহাসের পাতায় গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান দখল করে আছে। কোটা আন্দোলন থেকে শুরু করে সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব জাগরণে জালিম সরকারের পতন হয়েছে। মানুষ প্রাণের মায়া পেছনে রেখে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঠে ঝাপিয়ে পড়েছে। বুক চেতিয়ে দিয়েছে স্বৈরাচারীদের বন্দুকের নলে। শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করে কত শত মানুষ পরপারে চলে গেছে।
‎‎এত এত মানুষের ত্যাগ, কুরবানি ও জীবন-বিসর্জন কী জন্য? এমনি এমনি কী মানুষ রাস্তায় নেমে গেছে, অবলীলায় নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছে? কক্ষনো না। ষোল বছরের অভাবনীয় জুলুম-নিপিড়নের জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে, প্রাণের মায়া ছেড়ে মানুষ রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছে। জনমানুষের বড় একটি আশা ও স্বপ্ন এই আন্দোলনে নামতে এবং জালিম-স্বৈরশাসকদের পতন নিশ্চিত করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। মানুষের আশা ছিলো—বাংলার আকাশে একটি নতুন সূর্যের উদয় ঘটবে। স্বপ্নের দেশ গড়বে। জুলুম-নিপীড়নের শৃঙ্খল থেকে সবাই বের হবে। মানুষের ভাগ্যে স্বস্তি ফিরবে। অযাচিত, মিথ্যা এবং অকারণে নির্দোষীদের আর কারাভোগ করতে হবে না। দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার বন্ধ হবে। কোনো পরাশক্তি বা ভিনদেশী হিংস্রদের আধিপত্যের কবল থেকে এদেশ নিরাপদ থাকবে । এছাড়া গণমানুষের আরো কতো আশা ও স্বপ্ন ছিলো অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ নিয়ে। আজ এই গণ-আন্দোলনের এক বৎসর হয়ে গেছে। অভ্যুত্থানকে ঘিরে মানুষের যে আশা ও স্বপ্ন ছিলো তার কতটুকু বাস্তবায়ন পরিলক্ষিত হয়েছে— এসব একটু পর্যালোচনা করার প্রয়াস থেকে এই ছোট্ট নিবন্ধ।
‎‎এক.
‎আজকে অভ্যুত্থানের এক বছর পরে যে সব সফলতা দৃষ্টিগোচর হয় তার মধ্যে আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধকরণ অন্যতম। কিন্তু গণমানুষের আকাঙ্খা তো ছিলো—আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধকরণের সাথে সাথে তাদের জুলুমী ও জাহেলী শাসনব্যবস্থার সংস্করণ। অথচ আওয়ামী শাসনামলে প্রণিত একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার কতটুকু পরিমার্জন হয়েছে তা সবার কাছে দিবালোকের মতো স্পষ্ট। যেগুলো বিভিন্ন ইস্যুতে পরিলক্ষিত হয়েছে । যেমন আমরা দেখেছি—তাসলীমা নাসরিনের বই নিয়ে বইমেলার ওই ঘটনাতে, রাখাল রাহাসহ নবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে কটুক্তির সকল ইস্যুসহ আরও অনেক ইস্যুতে আওয়ামী শাসনামলের অবিকল চিত্র আমরা দেখেছি।
‎‎দুই.
‎আওয়ামী শাসনামলে নিয়োগপ্রাপ্ত বিভিন্ন সেক্টরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এখনও আগের অবস্থানে আছে। আগের মতো দূর্ণীতিতে তাদের প্রবণতা রয়ে গেছে। তারা আওয়ামী শাসনের মতো এখনও কার্যপরিচালনায় তৎপর। এবং আওয়ামী যুগে যে সকল হলুদ মিডিয়া দেশ ও জাতির শত্রুর রূপ ধারণ করেছে—তারা আজও আগের মতো বহাল তবিয়তে আছে। তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। আরো একটি বিষয় হচ্ছে—আওয়ামী আমলে যে সকল নির্দোষ মানুষ, বিশেষ করে মজলুম আলেম— এখনও অনেকে অন্ধকারের কারাপ্রকোষ্টে রয়ে গেছেন। বছর হয়ে গেল তবু তাদের মুক্তাকাশে বের হওয়ার কোন খবর নেই।
‎‎তিন.
‎আওয়ামী সময়ে ঘটিত- শাপলা, পিলখানাসহ সকল হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার কী হয়েছে? অথচ উচিৎ ছিলো—আগস্টের পরপরই এগুলো নিয়ে আগে মাথা ঘামানো। এবং গণশত্রু সকল আওয়ামী শাসকদের আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো। সুষ্ঠু বিচার করা। কই এক বছর তো হয়ে গেল এগুলোর কিছুই তো দৃষ্টিগোচর হলো না!
‎আরও একটি বিষয় হচ্ছে— ব্যাপক হারে আন্দোলনে মানুষের উপস্থিতির অন্যতম একটি কারণ—ভিনদেশের আধিপত্য থেকে এদেশকে রক্ষা করা। কিন্তু মানুষের এই প্রত্যাশা কী স্বতস্ফূর্ত বাস্তবায়িত হয়েছে? এক দেশের আধিপত্যের কবল থেকে বের হয়ে ভিন্ন কোন পরাশক্তির দাসত্বে ঢুকবে, ‘মানবাধিকার কার্যালয়’ নামে এদেশে সমকামিতার এজেন্ডা বাস্তবায়ন হবে— এজন্য কী এতোসব মায়ের বুক খালি হয়েছিল? এতগুলো তাজা প্রাণ ঝরছিল?

‎আওয়ামী শাসনামলে যারা দেশ, জাতি ও মিল্লতের কথা বলতো—তাদের ধমানোর জন্য সাজানো হতো ‘জঙ্গি-নাটকে’র খেলা। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে আজকে অভ্যুত্থাম-উত্তর মাত্র এক বছর যেতে পারে নি, সেই ‘জঙ্গি-নাটকে’র খেলা পুনরায় শুরু হয়েছে!
‎‎আসল কথা হলো- এদেশের শাসক-কমিটির পরিবর্তন হয়েছে ঠিক; কিন্তু শাসনব্যবস্থার কোন পরিবর্তন সাধিত হয়নি। প্রায় আগের মতোই আছে। যত দিন পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে জাহেলি শাসনব্যবস্থার পতন না ঘটবে, ততদিন এদেশের ভাগ্যাকাশে কোন নতুন সূর্যে আগমন- এটা কল্পনার বাহিরে।
লেখক : শিক্ষার্থী দারুল উলূম মাদানীনগর ঢাকা।

সর্বশেষ ২৪ খবর