সিলেটে শ্রমজীবীদের সহায়তা বিতরণ নিয়ে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া

প্রকাশিত: ৩:১৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৮, ২০২০

সিলেটে শ্রমজীবীদের সহায়তা বিতরণ নিয়ে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া

আবদুল কাদির জীবন : ‘পোলাডা কইতাছে-বাজান ছোডো মাছ দিয়া ভাত খাইবাম। কিন্তু মাছ কিনমু ক্যামনে ? হাতে তো টেহা পয়সা নাইগা’। কথাগুলো দিনমজুর ফজর আলীর। বাড়ি কিশোরগঞ্জে। সিলেটে তোরোরতন এলাকায় স্ত্রী সন্তানসহ একটি কলোনীতে বাস করেন তিনি। কাজ করেন দিনমজুরের। সর্বশেষ ১৯ মার্চ মাত্র ৪শ’ টাকায় কাজ করছিলেন উপশহরের ডি-ব্লকের একটি বাসায়। সেখানে একটি কলোনীর চালের সংস্কার কাজ করে দিনশেষে মজুরী গুনেন । তারপর থেকেই কাজশুণ্য তিনি। পেটের তাগিদ থেকে প্রতিদিনই বের হচ্ছেন তিনি। কিন্তু লোকজন না থাকায় কাজ পাচ্ছেননা ফজর আলী। ফজর আলীর সাথে একই কলোনীতে বাস মাজেদা বানুর। বাড়ি সুনামগঞ্জের বিশ্বম্বরপুর এলাকায়। প্রতিদিনই জীবিকার সন্ধানে তারা জড়ো হন বন্দরবাজারস্থ শ্রমীক হাটে। এখনও তারা শ্রমিকহাটে আসেন প্রতিদিন। কিন্তু নিরাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে হয় প্রতিদিন। কারণ-গোটা নগরী এখন নীরবতায় আচ্ছন্ন। সর্বনাশা করোনা আতঙ্কের আচর পড়েছে ফজর আলী ও মাজেদা বানুর কপালে।

করোনার বৈশ্বিক চিত্র করুণ। ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ভয়াল রূপ ধারণ করছে। বিশ্ব প্রেক্ষাপটে সিলেটেও স্থবিরতা নেমে এসেছে। ঘরমুখো হয়ে পড়ছেন মানুষ। বিপনি বিতানের পর এবার সিলেটের দোকানপাট বন্ধেরও নোটিশ এসেছে। এ অবস্থায় বেকায়দায় স্বল্প আয়ের মানুষ। তারা পড়ে গেছেন চরম বিপাকে।
ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রচেষ্টায় সিলেটের আড়াই হাজার পরিবার পাচ্ছে খাদ্যসামগ্রী। লক ডাউনে থাকা বাংলাদেশের হতদরিদ্র পরিবারগুলির জন্য বাংলাদেশ সরকারের সহায়তা কর্মসুচীর অংশ হিসেবে এই সহায়তা। আজ ২৮ মার্চ থেকে এই কর্মসুচী শুরু হবার কথা রয়েছে। উদ্যোগের অংশ হিসেবে আজ প্রথম ধাপে একশত পরিবারের মধ্যে দেয়া হবে ১ টন চাল। প্রতি পরিবার পাবে ১০ কেজি চাল, ৫ কেজি আলু, ২ কেজি ডাল, ১ কেজি তেল ও সাবান। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে সকল হতদরিদ্র পরিবারে পৌছে দেয়া হবে খাদ্যসামগ্রী।

জানা যায়, ২৫ টন চাল আসছে এই পরিবারগুলির জন্য। এছাড়াও সাথে রয়েছে আলু, ডাল, তেল, সাবান। যা বিতরণ করা হবে সিলেট দরিদ্র, দিনমজুর পরিবার গুলির মধ্যে। সিলেট সদর উপজেলার ৮টি ইনিউনিয়নে বিতরণ করা হবে খাদ্যসামগ্রী।

খাদ্যসামগ্রী বিতরণের ব্যাপারে পররাস্ট্রমন্ত্রীর এই উদ্যোগকে অভিনন্দন জানিয়েছেন সিলেটের বিভিন্ন শ্রেণীপেশার প্রতিনিধিবৃন্দ। সেই সাথে যথাযথ বণ্ঠন নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন তারা। তাদের মতে যথাযথভাবে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ না হলে দিনমজুর পরিবার গুলির মধ্যে অনাহারে দিন যাপন করবে আর তৃতীয় একটি পক্ষের পকেট মোটা হবে।এ নিয়ে কী ভাবছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা? সিলেট প্রতিদিনের সাথে কথা বলছিলেন তাদের কয়েকজন-

আবদুল হামিদ মানিক
নির্বাহী সম্পাদক
দৈনিক সিলেটের ডাক

শুরুতেই পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে এমন উদ্যোগের জন্য ধন্যবাদ জানাতে চাই। সেই সাথে আজ থেকে শুরু হওয়া কর্মসুচী বাস্তবায়নে দলের প্রতিটি ওয়ার্ড, ইউপি শাখা, উপজেলা শাখার দায়িত্বশীল নেতাদের কাজে লাগিয়ে একটি তালিকা তৈরি করার মধ্য দিয়ে কাজটি করা যেতে পারে। তবে, খেয়াল রাখতে হবে-কেউ যাতে মতাদর্শিক কারণে যেনো কোনো ভুক্তভোগী দরিদ্র পরিবার সহায়তা থেকে বঞ্চিত না হয়। যারা শ্রমিক শ্রেণীর মানুষ, তারা সত্যিই এক অমানবিক পরিস্থিতির সামনে দাঁিড়য়ে। সেই অবস্থায় এই মানবিক উদ্যোগ সফল করতে হলে বিতরণকালে আমাদের সবাইকে মানবিক ভাবেই দায়িত্ব পালন করতে হবে। তবে, অবশ্যই বিতরণ কালে নিজেরা মুখে মাস্ক এবং গ্লাভস হাতে পরেই তা করতে হবে।

আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক ওকলামিস্ট
বিষয়টি অবশ্যই ইতিবাচক। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিলেটের একজন অভিভাবক। এই উদ্যোগ গ্রহণের জন্য প্রথমেই পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাই। সেই সাথে সহায়তা তহবিলের নামে তৃতীয় পক্ষ যাতে ফায়দা হাসিল করতে না পারে-সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যারা দিন আনে দিন খায়, সত্যিকার অর্থে বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের অবস্থা খুবই করুণ। সুতরাং এই বিষয়টি ভালোভাবে অনুধাবন করে সবাইকে দায়িত্বশীলভাবে কাজ চালিয়ে যেতে হবে।

রুহুল কুদ্দুস বাবুল
রাজনীতিবিদ এবং বিশ্লেষক
যারা দিন আনে দিন খায়, এমন মানুষগুলোর এখন মানবিক সাহায্য খুবই জরুরী। তাদের খাদ্য দরকার, ঔষধ পত্রও দরকার। কে সাহায্য দিচ্ছে সেটা বড়কথা নয়। সেটা পররাষ্ট্রই হোন বা অন্য কেউ। সঠিক মানুষগুলোর কাছে সাহায্য পৌছলো কিনা সেটাই লক্ষ্য রাখতে হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রি যদি এমন উদ্যোগ নিয়ে থাকেন, তবে তাকে অভিনন্দন।

সালেহ আহমদ খসরু
রাজনীতিবিদ
শুধু সিলেট কেনো-সারাদেশেই এমন সহযোগীতা কার্যক্রম এখন ছড়িয়ে দিতে হবে। সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অবশেষে সিলেটের দিনমজুর পরিবারগুলোর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন-এই জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অভিনন্দন। তবে, বিতরণ কর্মসুচি সফলে রয়েছে যথেষ্ট শঙ্কা। তিনি বলেন, দেশের দুর্যোগকালীন পরিক্ষীত একটি বাহিনীর নাম সশস্ত্র বাহিনী। এই উদ্যোগ যদি রাজনৈতিকভাবে করা হয়, তাহলে ঘৃণ্য রাজনীতির শিকার হয়ে সুবিধাবঞ্চিত হবে অনেক দিনমজুর পরিবার। তাই, তালিকা সংগ্রহ করে সেনাবাহিনীর মধ্য দিয়ে বিতরণ করতে হবে খাবার সামগ্রী।

এডভোকেট মো. মনির উদ্দিন
আইনজীবী
দুর্যোগসময়ে জনপ্রতিনিধই ভরসা। দু:খজনক হলেও সত্য,বাংলাদেশে প্রকৃত অর্থে কোনো জনপ্রতিনিধি নেই। নৈশকালীন ভোটে কিংবা যে সব কায়দায় বা অপকৌশলে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে থাকে, বাংলাদেশে তাদেরকে জনপ্রতিনিধি বলা যায় না। ফলে তাদের মাধ্যমে কোনো কিছু জনগনকে পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ ভালো হবে না।বিশেষ করে যদি ত্রাণ সামগ্রী হয়,তাতে তো কোনো কথা নেই।অর্থাৎ কোনওভাবেই ত্রাণ বিতরণের কর্তৃত্ব এককভাবে এসব নৈশকালীন ভোট কিংবা প্রকৃত অর্থে জনপ্রতিনিধি নয়,এমন মেকি প্রতিনিধির কাছে ছেড়ে দেওয়া ঠিক ও যথার্থ হবে না মোটেও। যেহেতু সেনাবাহিনী মাঠে বিদ্যমান আছে,সেহেতু তাদেরকে মুল কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব দিয়ে যেকোনো ত্রাণ সামগ্রী বা অন্যকিছু সরবরাহ বা বিতরণ করলে ভালো হবে বলে মনে করি।

মিহির মোহন
প্রভাষক
সিলেট মদন মোহন কলেজ
দেশের দুর্যোগকালীন সময়ে দিনমজুরদের বিষয়ে পরররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু আমাদের দেশের সকল ভালো উদ্যোগই ভেস্তে যায়। কারণ, যাদের নিয়ে এই উদ্যোগ তারা বঞ্চিত হন এবং এই উদ্যোগে সামিল হয়ে একশ্রেণীর লোক নিজেদের রাতারাতি পাল্টে ফেলে। এমন অবস্থা সত্যিই দু:খজনক। আমার প্রস্তাব থাকবে-সহায়তা সামগ্রী বিতরণকালে নজরদারি বৃদ্ধি রেখে সুশৃঙ্খলভাবে কাজটি করা উচিত।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর