ঢাকা ৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৫:১৮ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৯
ডেস্ক প্রতিবেদন
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নাচের অনুষ্ঠানে ছাত্রীদের সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করা ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তালুকদার মোহাম্মদ মিসবাহ উদ্দিনের বহিষ্কার চেয়ে আন্দোলনে নেমেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এক মানবন্ধনের আয়োজন করে এই দাবি জানায় তারা। মানববন্ধনে ইংরেজি বিভাগসহ অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা বিভাগীয় প্রধান বরাবর এক অভিযোগ পত্র দাখিল করে বলেন, গত ৯ ফেব্রুয়ারি শনিবার সন্ধ্যায় একাডেমিক ভবন-ই’র ৪১৯ নম্বর কক্ষে নাচের অনুশীলন করছিলেন তারা।
“ওই দিন অনুশীলন কক্ষে প্রবেশ করে শিক্ষক মিসবাহ মেয়েদের উদ্দেশে বলেন, রমণীরা আপনারা নাচেন আমি দেখি। আজ পকেট খুব গরম। পকেট থেকে টাকা বের করে তিনি বলেন, আজ আপনাদের নাচের প্রতিটি মুদ্রায় একটা করে মুদ্রা উড়াবো আমি।”
শিক্ষার্থীদের করা এই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে স্বীকার করে ইংরেজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. হিমাদ্রি শেখর রায় বলেন, “আমরা বিভাগীয় কমিটির বৈঠক থেকে ওই শিক্ষককে অভিযোগকারী ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি ১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থীদের কোন ক্লাস নিতে পারবেন না।”
তবে বিভাগের দেওয়া এই শাস্তিতে সন্তুষ্ট নয় শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করা ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী নওশীন বলেন, “আমরা এই শিক্ষকের বহিষ্কার চাই। এর আগেও তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অনেক অভিযোগ ছিল। আমরা এবারই প্রথম রাস্তায় দাঁড়ালাম। এই ধরনের শিক্ষকের কোন প্রয়োজন নেই আমাদের।”
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ইংরেজি বিভাগ ছাত্রলীগের সভাপতি মহিবুর রহমান মুহিব বলেন, “আমাদের বিভাগের মোট ৬টি ব্যাচের মধ্যে ৪টি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ওই শিক্ষকের ক্লাস বর্জন করেছে। আগেও এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ ছিল।”
তিনি বলেন, “আমরা তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই যাতে বঙ্গবন্ধুর বাংলায় কোন শিক্ষক যৌন হয়রানির মতো ঘটনা ঘটাতে না পারে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন নিরোধ কেন্দ্রর প্রধান পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজিয়া চৌধুরী বলেন, একজন শিক্ষক যিনি পড়াবেন; তার কাছ থেকে এমন আচরণ মোটেই কাম্য নয়। এমন ঘটনায় সমাজে নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট পড়ে। শিক্ষকতার আদর্শ থেকে বিচ্যুত হলে তো হবে না।”
তিনি বলেন, “আমি ঘটনাটি শুনেছি। খুবই দুঃখজনক। লিখিত অভিযোগ পেলে ওই শিক্ষকদের শাস্তির জন্য আমরা সুপারিশ করব।”
এ বিষয়ে জানার জন্য অভিযুক্ত শিক্ষক তালুকদার মোহাম্মদ মিসবাহ উদ্দিনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাড়া দেন নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমি শুনেছি, রিহার্সালের অনুষ্ঠানে ওই শিক্ষকের কোন কথায় শিক্ষার্থীরা অসন্তুষ্ট। তবে এটা তারা বিভাগের শিক্ষকদের সাথে কথা বলে সমাধান করতে পারত। সেখানে সমাধান না হলে পর্যায়ক্রমে প্রক্টর, ভিসির কাছে যেতে পারত। এভাবে রাস্তায় নামা ঠিক না।”
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “বিভাগীয় কমিটির সিদ্ধান্তে তাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। একটি সেমিস্টারের ক্লাস সে নিতে পারবে না। তারপরও অতিউৎসাহী একটি গ্রুপ এটাকে ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে।”
তিনি বলেন, “ওই শিক্ষক যেটা করেছেন তা ঠিক নয়। তার আরও সংযত হওয়ার দরকার ছিল, শালীন হওয়ার দরকার ছিল। আমরা তদন্ত করে বিষয়টি দেখবো। তাকে সাবধান করব, সতর্ক করব।”
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by Yellow Host