ঢাকা ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২:২২ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৮, ২০১৯
ডেস্ক প্রতিবেদন
সিলেটে ইনোভেটর আয়োজিত বইপড়া উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে জনপ্রিয় লেখক, সাংবাদিক আনিসুল হক বলেন, তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তের ঋণ শোধ করতে করতে হবে। নিজেকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করার মাধ্যমে এ ঋণ শোধ করা যাবে। সবাইকে বইয়ের আলোয় উদ্ভাসিত হতে হবে। দেশকে ভালোবাসতে হবে।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির বিরুদ্ধে বইপড়–য়া তরুণরাই প্রকৃত যোদ্ধা। জ্ঞানের আলোর কাছে কোনো অন্ধকারই টিকে থাকতে পারে না। ইনোভেটর এর বইপড়ার এ আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে বড় ভূমিকা পালন করবে।
আনিসুল হক শিক্ষার্থীদের উদ্দ্যেশে বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের মতো ত্যাগ ও গৌরবের ইতিহাস পৃথিবীর আর কোন জাতির নেই। মুক্তিযোদ্ধাদের দ্রোহ, সংগ্রাম ও বীরত্ব গাঁথা আমাদের অনন্তকাল পথ দেখাবে। আজকের এই তরুণ প্রজন্মকে আমাদের মুক্তিযোদ্ধের ইতিহাস অনুসন্ধান করতে হবে। তাদেরকে ফিরে যেতে হবে আমাদের গৌরববময় আখ্যানে। আর সে লক্ষ্যে বই পড়া অত্যন্ত তাৎপর্যময়। সে দিক বিবেচনায় মুক্তিযোদ্ধের ইতিহাস অনুশীলনে এই বইপড়া উৎসবের ঐতিহাসিক গুরত্ব রয়েছে। শিক্ষার্থীদের তিনি বলেন, ভালো ছাত্র হওয়ার পাশাপাশি দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠারও চেষ্টা থাকতে হবে। সে জন্য মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চার কোন বিকল্প নেই।
তিনি সোমবার ১৮ মার্চ নগরের কবি নজরুল অডিটোরিয়ামে ইনোভেটর আয়োজিত বইপড়া উৎসবের সমাপনী দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
অনুষ্ঠানে বৃহত্তর সিলেট বিভাগের ৬৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৫শ ১৪জন শিক্ষার্থী সনদপত্র গ্রহণ করে। বর্ণাঢ্য এ সমাপনী আয়োজনে শ্রেষ্ঠ পাঠক, সেরা পাঠক হিসাবে পুরস্কার পেয়েছে ১১ জন। পুরস্কার বিতরণীর পূর্বে আলোচনা সভায় সম্মানিত অতিথি ছিলেন এভারেস্ট বিজয়ী প্রথম বাংলাদেশি মুসা ইব্রাহীম।
মুসা ইব্র্রাহীম তাঁর বক্তব্যে বলেন, আজকের বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন-আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নে নিজের মেধা, প্রজ্ঞা নিয়ে তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে। আর মেধার বিকাশের জন্য বইপড়ার কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পাঠের মাধ্যমে বাঙালীর বীরত্বগাঁথাকে নিজেদের অন্তরে আত্মস্থ করার আহŸান জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, বইয়ের প্রয়োজন কখনো ফুরায় না। মানুষের সুদিন-দুর্দিন, সকল সময়েরই বিশ্বস্থ বন্ধু বই। আর মুক্তিযুদ্ধের বই হচ্ছে দর্পনের মত। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কেন্দ্রীক বইয়ে চোখ রাখলে নিজেকে জানা যায়, নিজেকে চেনাও যায়।
মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাঁথা-ত্যাগ-সংগ্রাম আলোচনা, স্মৃতিচারন ও আজকের তারুণ্যকে দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে অংশগ্রহণের আহŸান জানানোর মধ্য দিয়ে এ অনুষ্ঠান পরিণত হয় বাঙালীর ইতিহাসপ্রেমী ও ইতিহাস অনুসন্ধিৎসুদের মিলনমেলায়।
বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী অনিমেষ বিজয় চৌধুরীর পরিচালনায় গীতবিতান বাংলাদেশ ও অন্বেষা শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীদের পরিবেশনায় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে বরাবরের মতো এ অনুষ্ঠান শুরু হয়।
আলোচনা সভায় সম্মানিত অতিথি ছিলেন ভারতীয় হাইকমিশনের সহকারী হাইকমিশনার এল. কৃষ্ণমূর্তি, সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য চিকিৎসক মোর্শেদ আহমদ চৌধুরী, সিলেট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট লুৎফুর রহমান।
ইনোভেটরের মুখ্য সঞ্চালক সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইনোভেটরের নির্বাহী সঞ্চালক সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক প্রণবকান্তি দেব। ইনোভেটর এর সদস্য জোবেদা উর্মী, সুপ্রিয়া তালুকদার এবং আশরাফুল ইসলাম অনি যৌথভাবে এ অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন। আলোচনা সভা শেষে ইনোভেটর এর সমন্বয়ক প্রভাষক সুমন রায় পুরস্কার বিতরণ পর্ব সঞ্চালন করেন।
বইপড়া উৎসব ২০১৮-১৯ আসরে স্কুল পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ পাঠকের পুরস্কার অর্জন করেন সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সৈয়দা আছিয়া খাতুন, সেরা পাঠক পুরস্কার অর্জন করেন বর্ডারগার্ড পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী নোজহাত তাবাস্সুম, স্কলার্সহোম মেজরটিলা ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী ফাহমিনা ইসলাম তামিমা, সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রিতম সুত্রধর, আনন্দ নিকেতন স্কুলের শিক্ষার্থী আবরার শাহরিয়ার আবির। অন্যদিকে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় শ্রেষ্ঠ পাঠকের পুরস্কার পেয়েছেন শাবিপ্রবির শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান অপু। সেরা পাঠক নির্বাচিত হয়েছেন বিশ্বনাথ সরকারি কলেজের মোহাম্মদ শাহিন আলম, উইমেন্স মডেল কলেজের শিক্ষার্থী সাদিয়া আক্তার ইতি, মইনউদ্দিন আদর্শ মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী তিলোত্তমা নাথ তন্বি, লিডিং ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী জাবিয়া সুলতানা মারিয়া এবং সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মোঃ কয়েছ আহমদ। বিজয়ীদের পুরস্কার হিসেবে সম্মাননা ক্রেস্ট, মেডেল সনদপত্র এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই প্রদান করা হয়।
‘জ্ঞানের আলোয় অবাক সূর্যোদয়!/ এসো পাঠ করি/ বিকৃতির তমসা থেকে/ আবিস্কার করি স্বাধীনতার ইতিহাস’ এ স্লোগানকে সামনে রেখে বইপড়া উৎসবের যাত্রা শুরু হয় ২০০৬ সালে। এ বছর এ আয়োজনটি একযুগ পূর্ণ করলো।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by Yellow Host