ঢাকা ৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১১:২৬ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৫, ২০১৯
বিজয়ের কন্ঠ ডেস্ক ::: সিলেটের গোলাপগঞ্জে পৃথক ঘটনায় একইদিনে ৩ জনের মরদেহ দেখলো উপজেলাবাসী। বুধবার হওয়া এ মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এ তিন মৃতের ঘটনা নিয়েই ছিল গোলাপগঞ্জবাসীর আলোচনা। একটি ঘটনার খবর প্রচার হতে না হতেই অন্য একটি ঘটনার খবর আসে আলোচনায়। আত্মহত্যা, হত্যা, আর সহপাঠীর পিটুনিতে কলেজ ছাত্র খুন সবই যেন উপজেলাবাসীকে ভাবিয়ে তুলেছিল। এদিকে এসব ঘটনায় নিহতদের স্বজনদের কান্নায় বাতাস ভারি হয়ে উঠেছিল। এক দিনে ৩টি মৃত্যুর ঘটনায় প্রশাসনও যেন অনেকটা ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে।
বুধবার (২৪ জুলাই) সকাল ৯টার দিকে পৌর এলাকার নুরুপাড়া গ্রামে মিনারা বেগম (৫০) নামের এক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপরই তার স্বামী সুন্দর খাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। পরে এ ঘটনায় মিনারা বেগম তার বাবার হাতে খুন হয়েছেন বলে অভিযোগ এনে তাদের ছেলে তারেক আহমদ (২১) থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রাতে নুরুপাড়া গ্রামের সুন্দর খাঁর সাথে তার স্ত্রী মিনারা বেগমের কথা কাটাকাটি হয়। এর পর তারা উভয় ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন। তাদের ছেলে তারেক আহমদ বাড়িতে ছিলেন না। পরের দিন বুধবার সকালে তারেক আহমদকে তার বাবা মুঠোফোনে জানান, তার মা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তাৎক্ষণিক ছেলে বাড়িতে আসলে বাবার আচরণে সন্দেহ হয়। পরে তিনি গোলাপগঞ্জ মডেল থানা পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মিনারা বেগমের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায় এবং তার স্বামী সুন্দর খাঁ (৬০) কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসে।
এ ঘটনায় নিহতের স্বামী সুন্দর খাঁ (৬০) কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান।
পরে এদিনই সকাল ১০টার দিকে লক্ষণাবন্দ ইউনিয়নের ফুলসাইন্দ কলাভাগ গ্রাম থেকে নাছিমা বেগম (১৯) নামের আরেক গৃহবধূর মরদেহ নিজ বসত ঘর থেকে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় পুলিশ উদ্ধার করে। নিহত গৃহবধূ ওই গ্রামের শাহিন আহমদ (২৪) এর স্ত্রী ও মোঘলাবাজার থানার ঝাপা গ্রামের মাসুদ মিয়ার মেয়ে।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) রাত ৩টার দিকে গৃহবধূ নাছিমা বেগম (১৯) পরিবারের সবার অজান্তে ঘরের তীরের সাথে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দেয়। রাতে স্বামী শাহিন ঘুম থেকে সজাগ হলে দেখতে পান স্ত্রী নাছিমা বেগম গলায় ফাঁস দিয়েছে। এসময় তিনি তাৎক্ষণিক পরিবারের সকলকে অবগত করেন। পরের সকালে গোলাপগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন।
তবে এটিকে প্রাথমিক ভাবে আত্মহত্যা ধারণা করলেও ময়না তদন্তের পর নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানিয়েছে গোলাপগঞ্জ থানা পুলিশ।
সবশেষ জুতা নিয়ে বাকবিতণ্ডার জেরে খুন হন সিলেটের দক্ষিণ সুরমার আলমপুরের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের শিক্ষার্থী তানভির হোসেন তুহিন (১৮)। এদিন বেলা ১১টায় নগরীর দক্ষিণ সুরমার আলমপুরস্থ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সহপাঠীর হামলায় আহত হয়ে প্রথমে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও পরে অবস্থা গুরুত্বর দেখে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়ার পথে সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয়। নিহত শিক্ষার্থী তানভির হোসেন তুহিন গোলাপগঞ্জ উপজেলার হেতিমগঞ্জের কোনাচর দক্ষিণভাগ পলিকাপন গ্রামের মানিক মিয়ার পুত্র।
জানা যায়, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে তুহিন কম্পিউটার বিষয়ে শিক্ষার্থী। প্রতিদিনের ন্যায় বুধবার সকালে তুহিন কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কম্পিউটার প্রশিক্ষণে যায়। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নির্ধারিত স্থানে তার জুতা রেখে কম্পিউটার ল্যাবে প্রবেশ করে। প্রশিক্ষণের এক পর্যায়ে তুহিন কম্পিউটার ল্যাব থেকে বের হয়ে এসে দেখতে পায় তার জুতার স্থানে অন্য একটি জুতা রাখা। কিছুক্ষণ পর সে দেখতে পায় তার হারানো জুতা জোড়া কামরান আহমদ নামের অন্য একজন প্রশিক্ষণার্থীর পায়ে। এ সময় তুহিন তাকে বলে তোমার পায়ের জুতা জোড়া আমার। এ নিয়ে উভয়ে মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে বিষয়টি অধ্যক্ষের কানে গেলে তিনি জুতা জোড়া তুহিনের ছিল বলে বিষয়টি আপোষ মীমাংসা করে দেন।
এরপর তুহিন কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের বাইরে আসার সময় তুহিনের সাথে বাকবিতন্ডাকারী শিক্ষার্থী আরও কয়েকজন যুবককে নিয়ে তুহিনের উপর হামলা চালায়। তাদের হামলায় তুহিন মারাত্মক আহত হন। গুরুতর আহত তুহিনকে উদ্ধার করে তার সহপাঠীরা সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে তার অবস্থা অবনতি হলে দুপুর দেড়টায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্যে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পথে তুহিন মারা যায়।
এ ঘটনায় ১০ জনকে আসামী করে বুধবার রাতেই মহানগর পুলিশের মোগলাবাজার থানায় এ মামলাটি দায়ের করেন নিহতের চাচা নাজিম উদ্দিন।
মামলার ব্যাপারটি মোগলাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতার হোসেন নিশ্চিত করে বলেন, নিহতের চাচা বাদী হয়ে বুধবার রাতেই কামরান নামে এক ব্যক্তিকে প্রধান আসামী উল্লেখ করে আরও ১০ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় তাহের নামের একজনকে আটক করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে একদিনে তিন লাশ উদ্ধারের ঘটনায় উদ্বিগ্ন উপজেলাবাসী। এ ব্যাপারে উপজেলা নাগরিক বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি এস এ মালেক বলেন, নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, পারিবারিক কলহ, অর্থ লিপ্সা, মাদকাসক্তি নানা কারণেই সমাজে অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে। তাই সামাজিক সচেতনতার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধের প্রতি আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। একই সাথে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে অপরাধীদের যথোপযুক্ত শাস্তি। সচেতন মানুষের পাশে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থাকলে অপরাধ দমন কঠিন হবে না। দেশের মানুষের মনে নিরাপত্তাবোধ নিশ্চিত করতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও সক্রিয় হতে হবে। এসব ঘটনার সাথে জড়িতদের বিচার সুনিশ্চিত করলে আর এর পুনরাবৃত্তি হবেনা।
এ ব্যাপারে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ১টি আত্মহত্যা ও ১টি রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। অপর ঘটনাটি মোঘলাবাজার থানাধীন আলমপুর কারিগর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ঘটেছে। গোলাপগঞ্জ উপজেলার দুটি ঘটনায় পুলিশ তদন্ত চালাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by Yellow Host